ইমরান খানের ৩ বছরের কারাদণ্ড, পুলিশ হেফাজতে

আপডেট: আগস্ট ৫, ২০২৩
0

তোষাখানা দুর্নীতি মামলায় ৩ বছরের কারাদণ্ডের পর লাহোরের নিজ বাসভবন জামান পার্ক থেকে গ্রেফতার হয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাঞ্জাব পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেফতার করেছে বলে পিটিআই (তেহরিক-ই-ইনসাফ) জানিয়েছে।

শনিবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, একটি দুর্নীতির মামলায় ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে, যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার সময় তিনি যেসব উপহার পেয়েছিলেন, সেগুলো বিক্রি করে পাওয়া অর্থ সম্পর্কে ঘোষণা না দেয়ার কারণে ইসলামাবাদের একটি আদালত এই রায় দিয়েছে।

তাকে অতিসত্বর গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোরও আদেশ দেয়া হয়েছে। ইমরান খানের আইনজীবী ইনতাজার হুসেইন জানিয়েছেন, লাহোরের বাসভবন থেকে ইমরান খানকে এর মধ্যেই নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

গ্রেফতারের পর তাকে লাহোর থেকে ইসলামাবাদ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।

আদালতের রায়ে ইমরান খানকে এক লাখ রুপি বা প্রায় ৪৫১ লার জরিমানাও করা হয়েছে।

তোশাখানা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল যে, রাষ্ট্রীয় পদে থাকার সময় পাওয়া উপহার বিক্রি করে তিনি যে লাভ করেছেন, সেই বিষয়ে তিনি বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি।

বর্তমান ক্ষমতাসীনদলের আইনপ্রণেতারা গতবছর এই অভিযোগ তুলেছিলেন। যদিও তিনি বরাবরই এসব অভিযোগ করে আসছেন।

সেনাবাহিনীর নির্বাচন ‘ভীতি’
এক দিন আগে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিবিসি হার্ডটক অনুষ্ঠানে বলেছেন, চলতি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচন নিয়ে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ‘প্রচণ্ড ভীত’ হয়ে পড়েছে।

ইমরান খান বলেন, পাকিস্তান ‘অঘোষিত সামরিক আইনে’ চলছে এবং অভিযোগ করেন যে- ‘ফ্যাসিবাদীরা’ একে ‘অন্ধকার যুগের’ দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

২০১৮ সালে খান নির্বাচিত হবার পর চার বছরেরও কম সময় ক্ষমতায় ছিলেন। সংসদীয় অনাস্থা ভোটে গত বছর তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই কেবল স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে।

হার্ডটক উপস্থাপক স্টিফেন স্যাকার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পর্ক শীতল হওয়ার পর থেকেই কি রাজনীতিতে ‘সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ’ নিয়ে তার সমালোচনা শুরু হয়েছে?

অভিযোগ অস্বীকার করে ইমরান খান বলেন, তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পাকিস্তানের একমাত্র দল যেটি সামরিক একনায়কদের দ্বারা তৈরি হয়নি। আর এ কারণেই দলটি ভেঙে দিতে তারা তৎপর হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

অনেক সমালোচকই মনে করেন, ইমরান খান ক্ষমতাসীন হবার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সমর্থন পেয়েছিলেন। তবে উভয় পক্ষই এই অভিযোগ অস্বীকার করে।

পাকিস্তানের রাজনীতিতে দেশটির সেনাবাহিনী সবসময় সামনে থেকে কিংবা পর্দার আড়াল থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে করেছে।

গত কয়েক মাসে ইমরান খানের দল পিটিআই ছেড়েছে অনেকে এবং অনেকে আটক হয়েছে। তবে তার দাবি তার দল অক্ষত রয়েছে।

‘রাষ্ট্রযন্ত্র প্রকাশ্যে আমাদের বিরুদ্ধে গেলেও, আমাদের ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করলেও, সরকার থেকে বেরিয়ে আসার পর উপ-নির্বাচনে কিভাবে আমরা ৩৭টির মধ্যে ৩০টিতে জয়লাভ করলাম?’

সেনাবাহিনীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনাকারীদের আশা ছিল তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের পর তার দল দুর্বল হয়ে যাবে। ‘সাধারণত কিছু সময়ের জন্য ক্ষমতার বাইরে থাকলে এটিই ঘটে। কিন্তু যা ঘটেছিল তারপর উল্টো দলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে,’ বলেন ইমরান খান।

গত মে মাসে আদালতের ভেতর থেকে তাকে গ্রেফতারের ঘটনা দেশব্যাপী বিক্ষোভের জন্ম দেয়। এতে কোথাও কোথাও সহিংসতাও ছড়িয়ে পড়ে।

সহিংসতার মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর জন্য তিনি বৈরী পরিবেশ তৈরি করেছিলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ও রাজনীতিবিদ বলেন, তিনি এবং তার দল কখনো সহিংসতাকে সমর্থন করেননি এবং সবসময় শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করেছেন।

তিনি বলেন, সামরিক ভবনগুলোতে হামলার ঘটনার সাথে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। একইসাথে এই মামলাগুলো আলাদাভাবে তদন্ত করা দরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, পুলিশের পরিবর্তে তাকে গ্রেফতারে সেনা পাঠানোর মতো ঘটনাই বিশৃঙ্খলা উস্কে দিয়েছিল।

‘যখন সমর্থকরা দেখবে যে সেনাবাহিনী, একজন কমান্ডার আমাকে সেখান থেকে তুলে নিচ্ছে, তখন তারা কী করবে? সেখানে কি প্রতিবাদ হবে না?’

লাহোর থেকে বিবিসি’র সাথে কথা বলার সময় খান বলেন, ‘সত্যি হলো যে দেশ একটি বড় বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে। আমার মনে হচ্ছে আমরা অন্ধকার যুগের দিকে যাচ্ছি।’

‘পাকিস্তানের একমাত্র সমাধান হলো অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এটিই এই বিশৃঙ্খলা থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায়।’

এ সময় তিনি প্রস্তাবিত নতুন আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন এই আইন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ব্যাপক পরিমাণে অগণতান্ত্রিক ক্ষমতা দেবে।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই তিনি নতুন সরকারের একজন সোচ্চার সমালোচক হয়ে উঠেছেন।

‘দুর্ভাগ্যবশত ফ্যাসিস্টরা দেশটা দখল করে নিয়েছে, একইসাথে তারা নির্বাচনের ভয়ে ভীত। আমি ভুগছি কারণ তারা জানে যে নির্বাচনে আমরা জয়ী হব। আর এই কারণেই তারা গণতন্ত্রকে টুকরো টুকরো করে ফেলছে,’ বলেন তিনি।
সূত্র : ডন ও বিবিসি