‘এই বাংলার মাটিতে আর আসবো না’ সিলেট বিমানবন্দরে প্রবাসী নারীকে হয়রানি!

আপডেট: জুলাই ৩১, ২০২১
0

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন ব্রিটিশ নাগরিককে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক বৃটিশ নারীকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ঐ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও আরেকজনকে প্রত্যাহার করে ঢাকায় পাঠানো হয় বলে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক চৌধুরী ওমর হায়াত শনিবার সন্ধ্যায় ইত্তেফাককে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

এদিকে প্রবাসী ঐ নারীর আবেদন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র নাড়া দেয়। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিলেট বিমানবন্দরে প্রায়ই হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যায়। যা অনেকটাই জনসমক্ষে আসেনা।

ব্যবস্থাপক ওমর হায়াত বলেন, বুধবার বৃটিশ নাগরিক জামিলা চৌধুরীর সঙ্গে সৃষ্ট ঘটনার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রবাসীর বাসায় গিয়ে দেখা করে বলেছেন, আগামী ৪ আগস্ট যে ফ্লাইট আছে, সেই ফ্লাইটে যেতে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দেয় হয় প্রবাসীকে।

গত বুধবার বাংলাদেশ বিমানের (বিজি-২০১) সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইটে যুক্তরাজ্য যাওয়ার কথা ছিল জামিলা চৌধুরীর। ফ্লাইট ধরতে তিনি ওইদিন দুপুর সোয়া ১টায় বিমানবন্দরে হাজির হন। চেক ইনের সময় তিনটি লাগেজে তার মালামাল ৮৪ কেজি ওজন হয়। নির্ধারিত ওজনের চেয়ে ৪৪ কেজি বাড়তি হওয়ায় অতিরিক্ত ফি আসে।

এ নিয়ে বিমান কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় জামিলার এবং তাকে অপমান করা হয় অভিযোগ করে- নিজের ফেসবুক লাইভে বলেন ৩ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দর পৌঁছানোর পরও কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারণে তাকে রেখেই প্লেন ছেড়ে চলে যায়। ফেসবুক লাইভে জামিলা চৌধুরী জানান, তিনি যুক্তরাজ্যে একটি মানবাধিকার সংঘটনে কাজ করেন। নিজের বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে দেশে এসেছিলেন ফেরার আগে তিনি লন্ডনে কোয়ারেইন্টাইনে থাকার জন্য হোটেলও বুকিং দিয়েছেন।

তিনি এক পর্যায়ে অতিরিক্ত লাগেজটি রেখে শুধু একটি লাগেজ নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও তারা তার কথা আমলে নেননি বলে জামিলা অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে সন্তানদের রেখে আমার অসুস্থ বাবাকে দেখতে আসি। মা-বাবা চলে গেলে এই বাংলার মাটিতে আসবো না। আমি এতো লাঞ্ছিত হয়েছি।

ঘটনা এখানেই শেষ নয়। এর আগে নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশ বিমানের কাউন্টারে পৌঁছালেও দায়িত্বরত কর্মকর্তা জামিলা চৌধুরীর কাছে ‘লোকেটর ফরম’ চান। তখন নিজ মোবাইলে ‘লোকেটর’ ফরমটি দেখালে প্রিন্ট কপি চান এক কর্মকর্তা। বারকোডযুক্ত লোকেটর ফরমে প্রিন্ট কপি বাধ্যতামূলক হতে পারে না- এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয় দুইপক্ষের।

জামিলা জানান, এখন সবকিছুই ডিজিটালি চলছে। কিন্তু বিমানের ওই কর্মকর্তা তা মানেননি। কিছুক্ষণ বাকবিতণ্ডার পর লোকেটর ফরম প্রিন্ট করার জন্য যান জামিলা। কিন্তু সেখানে দীর্ঘ লাইন থাকায় তা প্রিন্ট করাতে পারেননি তিনি। এখানে দুই দফায় বেশ সময় চলে যায় তার।

এরপর তার লাগেজে অতিরিক্ত মালামালের জন্য কর্মকর্তা অনৈতিক ভাবে টাকা দাবি করেন। জামিলা চৌধুরী অপারগতা জানালে অতিরিক্ত ওজনের লাগেজ ফিরিয়ে দিয়ে শুধুমাত্র একটি লাগেজ নিয়ে বোর্ডিং পাস দেওয়ার জন্য আকুতি জানান। ততক্ষণে কাউন্টার বন্ধ করে কর্মকর্তারা চলে যান। উপস্থিত অন্যান্য কর্মকর্তাদেরও অনুরোধ জানালে কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসেননি। পরে নিজের মোবাইল ফোনে ভিডিওচিত্র ধারণ করেন তিনি।