এমন সংসদ বানিয়েছে যেখানে প্রশ্ন করার কেউ নেই ,জবাব দেয়ারও কেউ নেই——মীর্জা ফখরুল

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৩
0

কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকার নাটক করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে, তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। আজকেও তিনি যাবেন হাসপাতালে। তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য।”

‘‘ তাকে নিয়ে বিভিন্নভাবে নাটক শুরু করেছেন। তাদের মন্ত্রীরা একবার বলে যে, খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না। আরেকজন বলে যে, তার রাজনীতি করতে বাধা নেই। এই কিসের মাজেজা ভাই। হঠাত করে আপনাদের এতো দরদ উতলে উঠলো কেনো যে, আপনারা বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার ব্যাপারে একেবারে পাগল হয়ে গেলে?”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ উদ্দেশ্য একেবারেই খারাপ, তাদের উদ্দেশ্য খারাপ।তারা দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়, তারা দেশের মানুষের যে দৃষ্টি তাকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যেতে চায়।”

‘‘ আমাদের সামনে দৃষ্টি মাত্র একটাই যে, আমাদের অধিকার ফেরত চাই, আমাদের ভোটের অধিকার ফেরত চাই, এই সরকারকে আমরা আর দেখতে চাই না। এই সরকারকে এই মুহুর্তেই পদত্যাগ করতে হবে এবং পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। ওই সমস্ত কথা বলে জনগনকে ভিন্ন পথে মন ভোলানো যাবে না।”

তিনি বলেন, ‘‘ খালেদা জিয়া যখন রাজনীতি করার সময় আসবে উনি রাজনীতি করবেন। সে কারাগারেই থাকুক, জেলে থাকুক আরে সেখানেই থাকুক তিনি অবশ্যই রাজনীতি করবেন। কারণ তিনি এদেশের জনগনের সবচাইতে জনপ্রিয় নেত্রী এবং গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় মাতা।”

‘‘ সুতরাং আপনাদের(সরকার) এই নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন নেই। তার সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন, দল নেবেন। আপনারা আগ বাড়িয়ে এসব…। আর এতো যদি চান তাহলে খালেদা জিয়াকে নিশঃশর্ত মুক্তি দিন। তাকে দিয়েছেন ছয় মাসের সাজা স্থগিত, ছয় মাসের সাজা স্থগিত। আর বলছেন যে তিনি সব কিছু করতে পারবেন। এই সমস্ত কথা বলে মানুষকে বোকা বানিয়ে কোনো লাভ হবে না।”

‘জনগনের অসুখের দিকে তাঁকান’

ফখরুল বলেন, ‘‘ আপনারা(সরকার) আসল জায়গায় আসুন। জনগনের যে অসুখ সেটার দিকে তাঁকান। জনগনের অসুখ একটাই যে, তারা ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে না। জনগনের পার্লামেন্ট নাই। তারা কথা বলতে পারে না।”

‘‘ সেজন্য আমাদের সবচেয়ে বড় যে দাবি এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে যার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে এবং সকলের অংশ গ্রহন নতুন নির্বাচন হবে, নতুন সরকার গঠন হবে।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানে নাই বলে সরকার যে বক্তব্য রাখছে তার জবাব দিতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ তোমরা যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলে তখন কি সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিলো? ছিলো না। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন দেখেছেন যে, জনগন এটা চায়, যখন দেখেছেন এটা করলে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে তখন তিনি পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশন বসিয়ে নতুন সংসদে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করে সংবিধান সংযোগ করেছিলেন।”

‘‘ তারপরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছিলো বিএনপি সেদিন বিরোধী দলে গিয়েছিলো ১১৬টা আসন নিয়ে। কোথায় সেদিন বিএনপি তো এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার না মেনে অন্য কোনো কাজ করে নাই, নির্বাচন তো তার মতো করতে চায় নাই।”

ভোট চুরির রেকর্ড আওয়ামী লীগের দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘ কথায় কথায় আওয়ামী লীগ বলে বিএনপি নাকী ভোট করেছে। আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, বিএনপি কোনোদিন ভোট চুরি করে নাই। ভোট চুরি করেছেন আপনারা।”

‘‘ আজকে শুধু নয়, ১৯৭৩ সালে ভোট চুরি করেছেন। পরবর্তিকালেও ভোট চুরি করেছেন। গত দুইটা সংসদ নির্বাচনেও ভোট চুরি করে, কারচুরি করে, ভয় দেখিয়ে, মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাচন করেছেন। আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত একটা দেশের রাজনৈতিক দলের ৪০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেন।”

রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন বাহিনীকে ব্যবহার করে সরকার একের পর এক কাজ করার কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

‘আওয়ামী লীগই আইসিইউতে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ নির্বাচন করতে চাই। বাহ কি নির্বাচন। আবার বলে যে, বিএনপি নাকী আইসিইউতে যাবে।”

‘‘ বিএনপি আইসিইউতে যাবে না। আপনারা ইতিমধ্যে আইসিইউতে চলে গেছে। দেউলিয়া হয়ে গেছেন রাজনৈতিকভাবে। তা না হলে নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন দিতে এতো ভয় কেনো? ভয় একটাই যে, আপনারা জানেন যে, নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন হলে আপনাদের জামানত থাকবে না, ২০ আসনও পাবেন না।”

তাঁতী দলকে সংগঠিত হয়ে আন্দোলনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্ততি নেওয়ার আহ্বান রেখে তিনি বলেন, ‘‘ অনেক সময় চলে গেছে। আমরা অনেক মার খেয়েছি। আজকে মার খেতে খেতে আমরা উঠে দাঁড়িয়েছি। দেশের মানুষ উঠে দাঁড়িয়েছে।”

‘‘ এখন আপনাদের রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসেবে আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই মানুষগুলো সাথে নিয়ে আপনাদেরকে রাজপথে নেমে আসা, রাজপথে নেমে তাদেরকে পরাজিত করা।”

ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা অহিংস, সুশঙ্খলভাবে আন্দোলন করছি। ওরা বার বার অগ্নি সন্ত্রাসের কথা বলে এটা বলে লাভ নাই। অগ্নি সন্ত্রাস ক্ষমতাসীনরাই করে জনগন তা জানে। উদোঁর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে আর চাপানো যাবে না। জনগন সব জেনে গেছে।”

‘‘ আসুন আন্দোলনকে আরো তীব্র করে তুলি, বেগবান করে তুলি এবং জনগনের শক্তি দিয়ে উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি করে এদেরকে আমরা পরাজিত করি। আপনারা মনোবল দৃঢ় রাখুন, আন্দোলনে আরো সক্রিয় হউন।

‘বর্তমান সংসদ প্রসঙ্গে’

দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ সংসদ একটা বানিয়েছে যে, সংসদের নির্বাচনই হয় নাই। প্রশ্ন করারও কেউ নেই, জবাব দেওয়ার কেউ নেই। জিএম সিরাজ সাহেবরা(মঞ্চে বসা) পদত্যাগ করে চলে এসেছে যে, এই পার্লামেন্ট আমাদের দরকার নাই।”

‘‘ একইভাবে তারা ২০১৪ সালে র্বাচন করেছিলো। তখন বিনা ভোটে ১৫৪জনকে নির্বাচিত করা হয়েছিল যারা সংসদের মেম্বার হয়ে গেলেন। আর আমাদের বেশ কিছু লোকজন বিশেষ করে জাতীয় পার্টি ডুগডুগি বাজিয়ে ওদের সঙ্গে যোগ দিলো। আরো আছে। শুধু জাতীয় পার্টি না। আমাদের অনেক বাম নেতা একসময়ে প্রখ্যাত নেতা যারা এখনো অনেক বড় বড় কথা বলেন তারা সেদিন নৌ্কার সঙ্গে মহাজোট করে তারা সেই নির্বাচনে গিয়েছিলেন। তাই না। ভাগ নিয়েছেন।”

তিনি বলেন, ‘‘এখন আবার একটু অসুবিধা হচ্ছে। মন্ত্রীত্ব দেয় নাই যে কারণে ভাগ-বাটোয়ারা ঠিক মতো হচ্ছে না। এখন বলে ১৪ দল আর কাজ করে না, আমাদের সাথে কথা রাখা হয় নাই।”

‘‘ এরা আওয়ামী লীগের চেয়ে খারাপ। আজকে এদেশে কিছু সংখ্যক লোক তৈরি হয়েছে তাদের কাজ হচ্ছে তাবেদারী করা, তোষামোদি করা এবং জনগনের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করা।”

একসময়ে বাম রাজনীতি করা মির্জা ফখরুল সরকারের সমর্থিত বাম নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘ আমি খুব পরিস্কারভাবে জানতে চাই যে, আজকে গণতন্ত্র আছে কিনা- এই কথা তারা বলেন না কেনো? তারা কেনো এই কথা বলেন না আজকে জনগন ভোট দিতে পারে না, ভোট দিতে গেলে ভোট তারা দিতে পারেন না। কেনো বলেন না আজকে এই সরকার দুর্নীতিগ্রস্থ সরকার, তারা দুর্নীতি করে মানুষের সমস্ত অধিকারগুলো কেড়ে নিচ্ছে-একথাগুলো তারা মুখ দিয়ে কেনো বলেন না।”

‘‘ একসময় তারা বড় বড় বিপ্লবী কথা বলতেন। বিপ্লবী কথা বলেন। এখনো সুযোগ পেলেই আমাদেরকে তারা বিভিন্নভাবে দোষারোপ করতে থাকেন। কিন্তু তারা তাদের যে দায়িত্ব, সেই দায়িত্ব পালন করেন না।”

জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব হাজী মজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, প্রশিক্ষন বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সাবেক সাংসদ জিএম সিরাজ, উলামা দলের আহ্বায়ক শাহ নেছারুল হক, নজরুল ইসলাম তালুকদার মতস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনিসহ তাঁতী দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।