কক্সবাজারে আদালত এলাকায়,রাজবাড়িতে প্রাইভেট কারে গ্যাংরেপের ঘটনায় মহিলা পরিষদের নিন্দা ও শাস্তির দাবী

আপডেট: মার্চ ১৬, ২০২২
0

কক্সবাজারে আদালত এলাকার মসজিদ মার্কেটের সামনে থেকে জোরপূর্বক তরুণীকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার চলন্ত প্রাউভেটগাড়িতে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারসহ যথাযথ শাস্তির দাবিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বিবৃতি দিয়েছে।

অদ্য ১৬ মার্চ ২০২২ তারিখ বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারি যে, কক্সবাজারের আদালত এলাকার মসজিদ মার্কেটে এক আইনজীবীর কার্যালয়ের সামনে থেকে তরুণীকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, ফিরোজ ও শরীফ বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার তরুণীকে উত্ত্যক্ত করত ও বিভিন্ন কুপ্রস্তাব দিত। তরুণী ওই প্রস্তাবে রাজি না হলে তাঁকে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেয় দুর্বৃত্তরা। গত ১৪ মার্চ ২০২২ তারিখ তরুণী কক্সবাজার আদালত এলাকায় এক আইনজীবীর কার্যালয় থেকে বের হলে আসামিরা তাঁকে ঘিরে ফেলে কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ফিরোজ আহমদ, রাসেল উদ্দিন, নুরুল ইসলাম ও মো. শরীফ তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

এ সময় তরুণী বাধা দিলে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন এসে তাঁর হাত-পা ও মুখ চেপে ধরে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে কক্সবাজার ল্যাবরেটরি স্কুলসংলগ্ন (বাহারছড়া) এলাকায় ফিরোজের আত্মীয় ফজল কাদেরের বাসায় নিয়ে তরুণীকে আটকে রেখে ফিরোজ, শরীফ, নুরুল ইসলাম, পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয়ধারী রাসেল উদ্দিন মিলে তাঁকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে তরুণী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে রাসেল ও শরীফ তাঁকে টেনেহিঁচড়ে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসলে এ দৃশ্য দেখে রাস্তায় থাকা এক ব্যক্তি তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি সেবা নম্বরে ৯৯৯ কল দিলে পুলিশ এসে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর কালুর মোড় এলাকায় গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, ১২ মার্চ, ২০২২ তারিখ গৃহবধূ তার বাবার বাড়ি থেকে মানিকগঞ্জ ঘিওর থানার সিনজুরী গ্রামে ফুপুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। ঘিওর পাঁচ রাস্তার কাছে ফাঁকা জায়গায় পৌঁছালে একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকার থেকে নেমে সাবেক স্বামী আল-মামুন ও তার বন্ধুরা গৃহবধূকে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে নিয়ে কোমল পানীয়র সঙ্গে নেশা জাতীয় কিছু পান করালে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর চলন্ত প্রাইভেটকারে আল-মামুন, আব্দুর রব মুন্না ও হাসু মিলে তাকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে। গাড়িটি পাটুরিয়া ঘাট থেকে ফেরিতে নদী পাড়ি দিয়ে দৌলতদিয়া হয়ে গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের একটি পরিত্যক্ত ফাঁকা ভিটায় পৌঁছালে সেখানে গৃহবধূকে হাত-পা বেঁধে ফেলে রেখে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে গৃহবধূর চিৎকার আশপাশের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেয়।

আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, নারী ও কন্যার প্রতি বর্বর ও নৃশংসতার রুপ হচ্ছে ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাগুলো উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা পরিবার-সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে নারীর ইতিবাচক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এই অবস্থা থেকে উত্তরনের লক্ষ্যে দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণে আশু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে এবং এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ দায়িত্ব পালনের দাবি জানাচ্ছে।

তরুণী ও গৃহবধূর প্রতি বর্বরতার ঘটনায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছে এবং উক্ত ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছে। সেইসাথে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা এবং সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সারাদেশে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।