কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় হতাহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে মানদন্ড প্রণয়নের আহ্বান

আপডেট: নভেম্বর ২৫, ২০২১
0

তাজরীন গার্মেন্টস দূর্ঘটনার ৯ বছর স্মরণে ব্লাস্ট, এসআরএস এবং বিলস্ এর মতবিনিময় সভা

শ্রম আইন সংশোধন করে আইএলও কনভেনশন ১০২ এবং ১২১ অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় হতাহত শ্রমিকদের আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। আজ ২৪ নভেম্বর ২০২১ জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে তাজরীন গার্মেন্টস অগ্নিকান্ডের নয় বছর স্মরণে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট-ব্লাস্ট, সেইফটি এন্ড রাইটস সোসাইটি-এসআরএস এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস্ এর উদ্যোগে “তাজরীন অগ্নিকান্ডের ৯ বছর: শ্রমিকের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি নিশ্চিতে করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা আহ্বান জানান।

মতবিনিময় সভায় বিলস্ যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, ক্ষতিপূরণের সমাধান টাকার অঙ্কে হতে পারে না। এর জন্য আইএলও কনভেশন ১০২ এবং ১২১ কে মানদন্ড ধরে শ্রমিকের আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করতে হবে। শ্রম আইনে শ্রমিকদের নি¤œতম যেটুকু অধিকার রয়েছে তারা তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মালিকদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের আহ্বায়ক ড. হামিদা হোসেন বলেন, একটি কারখানা স্থাপন থেকে শুরু করে উৎপাদনে যাওয়া পর্যন্ত অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমোদন নিতে হয়। তাই দুর্ঘটনার দায়ভার এসব প্রতিষ্ঠানকেও নিতে হবে। তিনি বলেন শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে একটি মানদন্ড থাকা প্রয়োজন। যাতে হতাহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের জন্য ধারে ধারে ঘুরতে না হয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরীন আখতার, এমপি, বলেন, আইন অমান্য করে কারখানা মালিকরা অনেক কিছুই এড়িয়ে চলছে। কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা রোধ এবং ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মোহাম্মদ নান্নু মোল্লা বলেন, প্রতিনিয়ত কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটছে আর শ্রমিকরা হতাহত হচ্ছে। এর জন্য শুধুমাত্র শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে দায়ী করা হচ্ছে। কিন্তু একটা কারখানা অনুমোদন পেতে ১৭ টি প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমোদন নিতে হয়। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা দায়িত্ব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবগুলোর সমন্বয়ে একটি সেল গঠন করে কাজ করতে পারলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।

শ্রম আদালতে একটি মামলা শেষ হতে অনেক সময় অতিবাহিত হয় উল্লেখ করে লেবার কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মোঃ সেলিম আহসান খান বলেন, শ্রম আইন সংশোধন করে যাতে স্বল্প সময়ে শ্রম আদালতের মামলা নিষ্পত্তি করা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তিতে শ্রমিকদের হয়রানি কমবে না। তিনি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কার্যক্রম আরো জোরদার করার আহ্বান জানান।

সভায় অন্যান্য বক্তারা শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে জোর দিয়ে এবং সেইফটি বিধিমালা অনুযায়ী কারখানার ভবন নির্মাণ করা, শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় অন্তর্ভূক্তির দাবি জানান।

ব্লাস্টের উপপরিচালক (আইন) মোঃ বরকত আলীর সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার, বিলস্ পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন, সেইফটি এন্ড রাইটস সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা প্রমুখ।