কাঁদলেন জয়গুন, কাঁদালেন সবাইকে

আপডেট: ডিসেম্বর ২৮, ২০২১
0

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংবর্ধনা

স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সংবর্ধনা ও সম্মাননা পেলেন বীরাঙ্গনা জয়গুন নাহার
খানম। তবে কোন রাষ্ট্রীয় সম্মান নয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য
কেন্দ্রের সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর
ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অশ্রুভেজা চোখে একাত্তরে নিজের ওপর ঘটে যাওয়া বীভৎস
নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন জয়গুন নাহার। তিনি বলেন, বাবা আর ভাইদের মারতে
মারতে অচেতন করে পাকিস্তানি হানাদাররা আমাকে তুলে নিয়ে গেছিল। ক্যাম্পে
পাঁচ ছয় মাস ধরে চার জন পাকসেনা দিন রাত নির্যাতন চালাতো। সারা শরীর
ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেছিল আমার। সুযোগ বুঝে একদিন পালিয়ে আসি সেখান থেকে।

বীরাঙ্গনা জয়গুন জানান, যুদ্ধে শেষে ফাল্গুনে জন্ম হয় তার মেয়ে
নিমসানার। এরপর শুরু হয় নতুন যুদ্ধ। পরিবার, সমাজের নানা কটু কথা শুনে
দিন পার করতে হয় মা, মেয়েকে। এভাবে ৫০ টা বছর কেটেছে জয়গুনের। পাননি
কোনো রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা৷ এখন বৃদ্ধ বয়সে ভিক্ষা করে চলা ছাড়া আর কোনো
উপায় নেই তার। যুদ্ধদিনে জয়গুনের ওপর নির্যাতনের বর্ননা শুনে উপস্থিত
অতিথিরাও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

অনুষ্ঠানে নারী প্রবর্তনার সভাপতি ফরিদা আখতার বলেন, সবসময় আমরা বলি
আড়াই লাখ মা বোন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অথচ স্বাধীনতার ৫০ বছরে মাত্র
৪১৬ জন নির্যাতিতা বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পেয়েছে। এর থেকে কলংকজনক আর কি
হতে পারে? এটা আমাদের জন্য লজ্জা যে আড়াই লাখের মধ্যে মাত্র ৪১৬ জনকে
আমরা সম্মান দিতে পেরেছি।
বীরাঙ্গনাদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি তারা সামনে আসতে চায় না।
বীরাঙ্গনা হিসেবে পরিচয় দিতে তারা সংকোচ বোধ করে। এটাও আমাদের ব্যর্থতা
যে আমরা তাদের সম্মান সামনে আসার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারিনি।

নারীপক্ষের সদস্য লিপি লিলিয়ান রোজারিও বলেন, ২০১১ সাল থেকে
বীরাঙ্গনাদের নিয়ে কাজ করছি আমরা। বীরাঙ্গনাদের আর্থিক সহায়তা, চিকিৎসা
সংক্রান্ত সহায়তা দিচ্ছি আমরা। এ পর্যন্ত ৬০ জনের মতো বীরাঙ্গনাকে আমরা
সহায়তা দিতে পেরেছি। কিছু শব্দবন্ধের মধ্যে আটকে না রেখে একাত্তরে
নির্যাতিতারা যেন মাথা তুলে বাঁচতে পারে আমরা সেটারই চেষ্টা চালিয়ে
যাচ্ছি৷

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গনস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের পরিচালক বদরুল হক।
তিনি বলেন, বীরাঙ্গনা জয়গুন নাহারকে চিকিৎসা সেবা দিতে পেরে আমরা
গর্বিত। গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গনাদের
বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করবো রাষ্ট্র এবং
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও বীরাঙ্গনাদের সহায়তায় এগিয়ে আসবে।

গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল কতৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৩ নভেম্বর ব্যাক পেইন
নিয়ে বীরাঙ্গনা জয়গুন নাহার তাদের হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর
চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই তার করোনা পজিটিভ আসে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র
বিনামূল্যে তাঁর চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। পাশাপাশি নারীপক্ষ সব ধরনের
সহযোগিতা দিচ্ছে এই বীরাঙ্গনাকে৷

অনুষ্ঠানে বীরাঙ্গনা জয়গুন নাহার খানমের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন
বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এরপর বীরাঙ্গনা জয়গুন নাহারের
সম্মানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বরচিত “সেরাদের
সেরা আলোকিত বীরঙ্গনা জয়গুন নাহার খানম” কবিতা আবৃতি করেন অধ্যাপক আলেয়া
চেীধুরী, কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ’র “কনসেন্টেশন ক্যাম্প’ কবিতা
আবৃতি করেন গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার হাসনা হেনা মৌ,
মুক্তির মন্দির সোপান তলে গান পরিবেশন করেন গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের
সহকারী অধ্যাপক গাইনী ও অব্স বিভাগ, সালাম সালাম, হাজার সালাম গান
পরিবেশন করেন প্যাথলজী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জিএম কুরাইসী, ডা: শামীম
মাওলা তার লেখা ৮০ দশকের ২টি সংগ্রামী গান পরিবেশন করেন।