কুড়িগ্রামে পেট্রোল ও অকটেন শূন‍্য: চড়া দামে বিক্রি করছে ক্ষুদ্র ব‍্যবসায়ীরা

আপডেট: মে ৭, ২০২২
0

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরীতে হঠাৎ করেই মোটরসাইকেলেরের একমাত্র জ্বালানি পেট্রোল ও অকটেনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে মোটর সাইকেল চালকরা। ঈদের পর দিন থেকেই এই দুই উপজেলার ফিলিং স্টেশন গুলোতে পেট্রোল ও অকটেন শূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে এ সুযোগে কিছু অসাধু ব‍্যবসায়ী অতিরিক্ত দামে পেট্রোল ও অকটেন বিক্রি করছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক ক্রেতা।
জানাগেছে, ভূরুঙ্গামারীতে ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেন সর্বরাহকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাহা ফিলিং ষ্টেশনে ঈদের আগের দিন বিকেলে পেট্রোল আর ঈদের দ্বিতীয় দিন অকটেন শেষ হয়ে যায়। ফলে মোটর সাইকেলের একমাত্র জ্বালানির সর্বরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ সুযোগে উপজেলার বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে ও হাট বাজারের দোকান গুলোতে ১৫০ থেকে ২০০ লিটার পেট্রোল ও অকটেন বিক্রি করার অভিযোগ ওঠেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে স্টাটাস দিতেও দেখাগেছে অনেককে।
অপরদিকে নাগেশ্বরী ফিলিং স্টেশন তাদের নিজস্ব কারণে বন্ধ থাকলেও উত্তরা, সততা, জুলেখা ও বালাটারী ফিলিং স্টেশন উপজেলায় ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন সরবরাহ করে থাকে। সেখানেও জোগান না থাকায় সেগুলোতে এখন সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
মাহবুব নামের একজন মোটর সাইকেল চালক বলেন, ঈদের আগের দিন ভূরুঙ্গামারীতে পেট্রোল না পেয়ে পার্শ্ববর্তী নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গন্জের জুলেখা ফিলিং ষ্টেশনে যাই। সেখানে পেট্রোল না পেয়ে অকটেন নিয়ে আসি। কিন্তু আজ (শনিবার) কোথাও পেট্রোল বা অকটেন পাইনি।
মোস্তাফিজুর নামের আরেকজন জানান, গত শুক্রবার এক লিটার অকটেন ১৬০ টাকায় কিনেছি কিন্তু আজ শনিবার কোথাও কোন পেট্রোল বা অকটেন পাওয়া যাচ্ছে না।
নাগেশ্বরীর ব্যাংকার চন্দন গুহ বলেন, শুক্রবার তিনি তার মোটরসাইকেলে পেট্রোল-অকটেন ভরতে উপজেলার বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে ঘুরে না পেয়ে ফেরৎ আসেন। কর্মস্থল অনেক দূরের পথ। তাই মোটরসাইকেলে পেট্রোল-অকটেন ভরতে না পারলে তাকে ফিরতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হবে।
শনিবার(০৭ মে) দুপুরে সরজমিনে মেসার্স সাহা ফিলিং ষ্টেশনে গিয়ে দেখা যায় পেট্রোল ও অকটেন না থাকায় তা বন্ধ রাখা হয়েছে। অপর দিকে উপজেলার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে কোথাও অকটেন বা পেট্রোল বিক্রি করতে দেখা যায়নি। ফলে মোটর সাইকেল চালকদেরকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
নাগেশ্বরীর উত্তরা ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক আশরাফুল ইসলাম বলেন, গত দুই মাস ধরে রংপুর, পার্বতীপুর ও বাঘাবাড়ী ডিপো থেকে আমরা আমাদের চাহিদামতো জোগান পাচ্ছি না। ঈদের পরে সেখানেও মজুত ঘাটতি। ফলে জোগান না পাওয়ায় আমাদের ফিলিং স্টেশন মজুতশুন্য। তাই সরবরাহ নেই।
এ বিষয়ে ভূরুঙ্গামারীর মেসার্স সাহা ফিলিং ষ্টেশনের ম্যানেজার শ্রী আনন্দ চক্রবর্তী বলেন ঈদের সময় আমাদের যে পরিমাণ পেট্রোল এর প্রয়োজন ছিল তা আমরা পাইনি। মূলত এটা ডিপু থেকে সংকট ছিল। আমাদের কুড়িগ্রাম পেট্রোল পাম্পে মাত্র অর্ধেক লোরি ফুয়েল পাই সেটি দিয়ে আমাদের তিনটা ষ্টেশন চলে। আমাদের এখানে যা ছিলো সেটা ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। গতকাল থেকে আমাদের ভুরুঙ্গামারী এবং নাগেশ্বরী স্টেশনে পেট্রোল এবং অকটেন সরবরাহ বন্ধ আছে আশাকরি দু-একদিনের মধ্যেই সেটা আবার পুনরায় চালু হবে। অতিরিক্ত দামে তেল বিক্রি করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমাদের এখানে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি করার কোন সুযোগ নাই।
পদ্মা অয়েল কোম্পানির রংপুর বিভাগীয় কর্মকর্তা খন্দকার মারুফ রহমান বলেন, গত ২৮ এপ্রিলের পর রংপুর ডিপোতে নতুন করে তেলের সরবরাহ পাওয়া যায়নি। রোববার থেকে পাওয়া যাবে। তবে কুড়িগ্রামে আমাদের ডিলারদের তেলের সংকট হওয়ার কথা নয়। ঈদ উপলক্ষে চাহিদা বাড়ায় সংকট তৈরি হয়ে থাকলে রোববার থেকে তা স্বাভাবিক হবে।’
মেঘনা অয়েল কোম্পানির রংপুর বিভাগীয় কর্মকর্তা গোলাম ইয়াছিন বলেন, গত কয়েকদিন আমাদের ডিপোগুলোতে সরবরাহ কম ছিল। আর ঈদে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। রোববার থেকে ধারাবাহিকভাবে সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমি মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছি। জেলার ফিলিং স্টেশন মালিকসহ রংপুর বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারা বলেছেন সংকট নেই। সরবরাহ নিয়ে যেটুকু সমস্যা হয়েছে তাও খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’ তবে কোনও ফিলিং স্টেশন সংকট তৈরি কিংবা জ্বালানির তেলের দাম বেশি নিলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
####