খালেদা জিয়ার কিছু হলে সব দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে—- মীর্জা ফখরুল

আপডেট: নভেম্বর ১৬, ২০২১
0

অসুস্থ খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে বিদেশে উন্নত চিকিতসার সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার সকালে এক দোয়া মাহফিলে বিএনপি মহাসচিব সরকারের প্রতি এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘‘আজকে যখন অসুস্থ অবস্থায় তিনি(খালেদা জিয়া) হাসপাতালে আছেন তখন আমরা পত্রিকায় দেখছি পরিবারের পক্ষ থেকে আবারো আবেদন করা হয়েছে। আমরা আহবান জানাচ্ছি সরকারের কাছে যে, অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে চিকিতসা করতে সুযোগ দেয়া হোক।”
‘‘ আজকে আমরা তাই বলতে চাই যে, আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। দয়া করে আপনারা মানবতার স্বার্থে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বাইরে চিকিতসার সুযোগ করে দেন যেটা তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।”
একই সঙ্গে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এই নেত্রী(খালেদা জিয়া) গণতন্ত্রের নেত্রী এবং তার যদি কিছু হয়ে যায় সমস্ত দায়-দায়িত্ব কিন্তু এই সরকারকে বহন করতে হবে। এই কথা খুব পরিস্কার।”
তিনি বলেন, ‘‘ এদেশের ডাক্তার সাহেবেরা ইতিমধ্যে বলেছেন যে, তার চিকিতসাটা হচ্ছে অনেক ধরনের অসুখের। এর অসুখগুলোর যদি সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু চিকিতসা করতে হয় তাহলে এই দেশে সেই ধরনের কোনো মেডিকেল সেন্টার বা হাসপাতাল নেই যা এই মাল্টি ডিসেপ্ল্যানারি ডিজিজের চিকিতসা করতে পারে।”
‘‘ এজন্য বার বার তাকে বলা হয়েছে এবং তার পরিবারের থেকে আবেদন করা হয়েছে যে, অন্তত মানবতার স্বার্থে তাকে বাইরে চিকিতসা করবার সুযোগ দেয়া হোক। আমরা এই বিষয়ে বার বার করে বলেছি, বার বার আমরা কথা বলেছি। কিন্তু তাকে চিকিতসার সেই সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে হৃদরোগ বি্শেষজ্ঞ ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধায়নে চিকিতসাধীন আছেন। গত ১৩ নভেম্বর তাকে ভর্তি করা হয়।

৭৬ বছর বয়েসী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বুহ বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ বিচারের প্রহসনে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে সাজা প্রাপ্ত হয়ে দেশনেত্রীকে আজকে অন্তরীন করে রাখা হয়েছে এবং আওয়ামী সরকারের বিরাজনীতিকরণের যে নীতি, ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার যে চক্রান্ত সেই চক্রান্তের একটা অংশ হিসেবে আজকে তিনি অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে আছেন।”

‘‘ আমরা জানি, ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিত্যক্ত গৃহে অন্তরীন করে রেখেছিলো প্রায় আড়াই বছর। সেই সময়ে তার কোনো চিকিতসা হয়নি। জনগনের চাপে পড়ে যখন তাকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে আসলো। এরপরে তাকে করোনা শুরু হওয়ার সময়ে কিছু ভীত হয়ে তাকে বাসায় যাওয়ার অনুমতি দেয়া হলো।”

খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘ যে নেত্রী সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য জীবন উতসর্গ করেছেন, তারা সারাটা জীবন এদেশের মানুষের স্বাধীনতা-সার্বভৌ্মত্ব রক্ষা করবার জন্য বিসর্জন দিয়েছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন সারাদেশের আশা-আকাংখার প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকে অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় তিনি সিসিইউতে আছেন। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ, অনেক বেশি অসুস্থ।আমি ঠিক আপনাদের বলে বুঝাতে পারবো না যে, গতকাল তিনি প্রথম সিসিইউতে তার বেড থেকে চেয়ারে বসেছেন এবং অত্যন্ত দূর্বল অবস্থায় আছেন।”

‘‘ আমরা পরম করুনাময় আল্লাহতালার কাছে এই দোয়া জানাব, তিনি যেন তাকে সুস্থ করেন শুধু বিএনপির জন্য নয়, তার পরিবারের জন্য নয়, এদেশের ১৬ কোটি স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্য তাকে আমাদের বড় প্রয়োজন। তিনি হচ্ছেন সেই নেত্রী যিনি হেমিলনের বংশীবাদকের মতো যিনি তার সারাটা জীবন ধরেই সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন।”

নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিতসাধীন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আশু সুস্থতা কামনা এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিশেষ মোনাজাত অংশ নেন কয়েক‘শ নেতা-কর্মীর।
দলের প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর পরিচালনায় দোয়া মাহফিলে বিএনপির শাহজাহান ওমর, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, শাহিদা রফিক, অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, রুহুল কবির রিজভী, জহির উদ্দিন স্বপন, নাজিম উদ্দিন আলম, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, এবিএম মোশাররফ হোসেন, মীর সরফত আলী সপু, শামীমুর রহমান শামীম, বেলাল আহমেদ, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, আমিরুজ্জামান শিমুল, হায়দার আলী লেলিন, আমিরুল ইসলাম আলীম, আকরামুল হাসান, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আবদুল কাদির ভুঁইয়া, শহিদুল ইসলাম বাবুল, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার, আবুল কালাম আজাদ, মামুন হাসান, এসএম জাহাঙ্গীর প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।