খালেদা জিয়া ‘মৃত্যু ঝুঁকিতে’

আপডেট: নভেম্বর ২৯, ২০২১
0

খালেদা জিয়া ‘লিভার সিরোসিস’ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি ‘মৃত্যু ঝুঁকিতে’ আছেন।
রাতে এক সংবাদ ব্রিফিং খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে বোর্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিতসক অধ্যাপক ফখরুদ্দিন মো. সিদ্দিকী(এএফএম সিদ্দিকী) একথা জানান।
তিনি বলেন, ‘‘ ম্যাডামের সিরোসিস অব লিভার(লিভার সিরোসিস)। উনার মেসিভ রক্তক্ষন হয়েছে।”
‘‘ এখন ম্যাডামের লাস্ট টুয়েন্টিফোর আওয়াসের মধ্যে ব্লিডিংটা হয়নি। এখন স্টেবল আছি। কিন্তু আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি এই যে স্টেবল আছে এটা কিন্তু বিশ্বের বেস্ট সেন্টারগুলোতে এই ধরনে রোগীর ওপর প্রচুর ডাটা আছে। এই ধরনের রোগীগুলোর ম্যানেজমেন্ট যদি ফেইলিউর হয় তাদের পরবর্তি স্টেপ কী হচ্ছে এবং তাদের কিভাবে লাইফ সেভিং করা যায়।”
এফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘ ম্যাডামের এখন যদি ‘টিপস-TIPS’ মেথড অ্যাপ্লাই করা না হয় তাহলে আগামীতে আবার রি-ব্লিডিং হওয়ার সম্ভবনা আছে। এটা নেক্সট উইকে ৫০%, নেক্সট ৬ সাপ্তাহে ৬০% এবং তারপরেও যদি যায় আল্লাহ না করুক এটা অভিয়াস ব্যাপার ঘটতে যাচ্ছে।”
‘‘ এটা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমরা যা করছি- আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টায়। এখন আমরা কিন্তু হেলপলেস ফিল করছি। এখন এরকম একটা অবস্থার মধ্যে দিয়ে উনি যাচ্ছেন।”
খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত সেন্টারে নিয়ে চিকিতসার কথা আপনারা বলছে। সেটা যদি না করা হয় তাহলে কি হতে পারে বলে আপনারা আশঙ্কা করছেন এরকম প্রশ্নের জবাবে এভার কেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের চিকিতসক বলেন, ‘‘ আশঙ্কা করছি আবার উনার যদি রি-ব্লিডিং হয় তাহলে রি-ব্লিডিংটাকে নিয়ন্ত্রন করা এবং সেটাকে বন্ধ করার মতো মিনস বা সাপোর্টিভ যে টেকনোলজী মেনোভার এটা আমাদের এখানে নেই।”
‘‘ সেক্ষেত্রে উনার ব্লিডিং(রক্তক্ষরন) হয়ে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাবে।”
‘টিপস’ পদ্ধতি কোন দেশে চিকিতসা কেন্দ্রের হয় জানতে চাইলে মেডিকেল বোর্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিতসক অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, ‘‘ টিপস হাইলি টেকনিক্যাল কাজ। আমাদের দেশে টিপস করা রোগী আমি দেখিনি। যারা আমরা রোগী ডিল করি তাদের দ্বিতীয়বার তৃতীয়বার রক্তক্ষরন হলে তাকে সা্রভাইভ করা খুবই ডিফিকাল্ট। সেজন্য এই সেন্টারগুলো আছে আমেরিকা ও ইউরোপ বেস। ইউএসএ, ইউকে ও জার্মানী। সেখানে এসব রোগের চিকিতসার জন্য এডভান্স সেন্টার আছে তারা এর চিকিতসা করে।সেখানে দেশব্যাপী এই রোগের সেন্টার নেই, দুই-একটা আছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক এএফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘ আমরা মেডিকেল ম্যাডামের যারা ক্লোজড রিলেটিভ তাদেরকে জানিয়েছি, যারা উনার সাথে আছে তাদেরকে জানিয়েছি।আমরা উনাদের বলেছি, যত দ্রুত পারেন এরেঞ্জ করেন সেটা আমরা বলেছি।”
তিনি বলেন, ‘‘ ম্যাডামের থার্ড টাইম ব্লিডিং হয়েছে। উনার মতো এইজে হার্ট ফেইলিউর আছে, যার নাকী হিমোগ্লোবিন কমে যায়, যার ডায়াবেটিক আছে। এতো জটিলতার মধ্যে কিডনির ডিজিজ আছে, উনার এ্নাল ফেলিউর হয়ে যায়। এটা কিভাবে আমরা সাসটেইন করব যদি আমরা প্রেসারটা টিপস দিয়ে কমাতে না পারি। সেজন্য আমরা উন্নত চিকিতসার জন্য সুপারিশ করেছি। আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, উনার পরিবারকে জানিয়েছি এবং যত তাড়াতাড়ি আপনারা এরেঞ্জ করেন। কারণ এখনো টাইম আছে। উনি স্টেবল আছেন।”

‘‘ দেয়ার মাইট শিফট করাটা ডিফিকাল্ট হয়ে যেতে পারে, ইমপোসেবল হয়ে যেতে পারে।”
সেই সময়সীমাটা কত জানতে চাইলে এই বিশেষজ্ঞ চিকিতসক বলেন, ‘‘ এটা কেউ বলতে পারবেন না পৃথিবীতে।”
বাইরে থেকে চিকিতসক ও চিকিতসা পদ্ধতি ঢাকায় এনে করা সম্ভব কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ আপনি যদি বুঝে থাকেন যে, টিপস টেকনোলজীটা, আপনি ইমাজিন করেন এটা ইউকের কিংস কলেজে। অর্থাত যুক্তরাজ্যের হাসপাতালের ওদের কোনো রোগী এরকম হয় ওরাই তাকে হেলিকপ্টারে বা ইয়ে করে ওই হাসপাতালে পাঠায়। হাইলি সিলেকটিভ। এভাবে একজন রোগীর জন্য একটা হাসপাতালকে ঢাকায় নিয়ে আসা সম্ভব নয়।”
গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় গত ১৩ নভেম্বর থেকে খালেদা জিয়া অসুস্থ অবস্থায় এভারকেয়ার হাসপাতাল ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট(সিসিইউ) চিকিতসাধীন আছেন। হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধায়ন একটি মেডিকেল বোর্ড তার চিকিতসায় নিয়োজিত রয়েছেন। এই বোর্ডে এভারকেয়ার হাসপাতাল ও হাসপাতালের বাইরে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিতসকরা রয়েছেন।
৭৬ বছর বয়েসী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বুহ বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসা ‘ফিরোজার’ লনে এই সংবাদ ব্রিফিং হয়।
সংবাদ ব্রিফিঙে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক একিউএম মহসিন, অধ্যাপক শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক মো. নুরউদ্দিন, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ডা. মো. আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৩ নভেম্বর বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তির পর রাতে ব্যাপক রক্তক্ষরনের খালেদা জিয়ার সংকটজনক অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন উল্লেখ করে এফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘ আমরা প্রথমে ১৪ তারিখ ৬টা ব্যান্ড করে একটার পর একটা ব্যান্ডিং করে উনার ইমিডিয়েন্ট ব্লিডিংটা(রক্তক্ষরন) বন্ধ করতে সমর্থ হই। পরে ১৭ তারিখ আবার তার ব্লিডিং শুরু হয়। আমরা লাইফ সেভিং মেডিসিন দিয়ে তাকে কিছুটা স্টেবল করতে সমর্থ হই। ২১ তারিখে মনে হলো যে, উনার ব্লিডিংটা স্টপ হয়েছে।পরে ২৪ তারিখ তাকে জেনারেল ওটিতে নিয়ে এন্ডোস্কোপি করা হয়। এবার দেখা গেলো যে, মেসিভ ব্লিডিংটা আরেকটু নিচের থেকে হচ্ছে বলে মনে হলো। এটার সোর্স পর্যন্ত আমরা যেতে পারিনি। আমরা আবার তাকে লাইভ সেভিং মেডিসিন দিয়েছি, আবার ব্লাড ট্রাসমিশন করেছি।”
‘‘ এখন বর্তমানে ম্যাডাম এমন এক অবস্থায় আছেন যে অবস্থাটা বলা হয় যে, আইদার ইউ ডু সাম স্পেসিফিক সেটা হলো বিশ্বজোড়াই যখন নাকী ভেরিসেসে ব্যান্ডিয়ের পরে রিহ্যাভলিট করে তার একটাই রাস্তা আছে ট্রিটমেন্টের। ইফ ইউ সেন্ড লাইভ অব দ্যা পেসেন্ট টু নিড টু ডু টিপস(TIPS) ট্রান্সজুগুলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোর্টটু সিস্টেমিক সাম অর্থা যে প্রেসারে ব্লাডটা ভ্যাসেলকে হাইপ্রেসারে ছিঁড়ে ফেলেছে সেটাকে একটা বাইপাস চ্যানেল করে দেয়া এবং এটা লাইফ সেভিংস।”
বর্তমানে খালেদা জিয়ার শরীরে হিমোগ্লোভিন লেভেন কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ এখন উনার হিমোগ্লোভিন লেভেলটা প্রথমে ৫ দশমিক ৫ এ নেমে গিয়েছিলো। সেটা আমরা সেটাকে চার বেগ রক্ত দিয়ে ৯/১০ এর কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিলাম। আবার সেটা কমে গিয়েছিলো ৭ দশমিক ৮ এ। এটা মনে রাখতে হবে যে, উনার যে রক্তক্ষরন হচ্ছে এই রক্তক্ষরনের একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে অনেক রক্ত দিয়ে আপনি রক্ত দিয়ে হিমোগ্লোভিন বাড়াতে পারবেন না।”
‘‘ তাহলে সেটা আবার রিবিল্ড করবে। সেজন্য আইডিয়ালি হিমোগ্লোভিনকে একটা লেভেলের মধ্যে ধরে রাখতে হয়।”

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি দুই বছর। পরিবারের আবেদনে গত বছরের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।

কারাগার থেকে অসুস্থতা নিয়ে মুক্তির পর এই পর্যন্ত খালেদা জিয়া তিনবার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন।