খুলনার ডুমুরিয়ায় সমাবেশে গয়েশ্বর রায়: ‘ হাসিনার পতন ছাড়া বাংলাদেশের মুক্তি নাই’

আপডেট: জানুয়ারি ১২, ২০২২
0

খুলনা ব্যুরো:
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, শ্লোগান নয়, এখন এ্যাকশনের সময়। হাসিনার পতন ছাড়া বাংলাদেশের মুক্তি হবে না। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলনের বিকল্প নেই।

তিনি গতকাল বিকেলে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়ায় বিএনপির গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতায় এ কথা বলেন। বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর এ কর্মসূচি পালিত হয়।

সমাবেশে গয়েশ^র রায় বলেন, রামপালের পাশেই সুন্দরবন। যুগ যুগ ধরে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। আর এই সুন্দরবন ধ্বংস করার জন্য কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করবে বলে পণ করেছে। এই প্রযুক্তি ভারতের। কিন্তু ভারত সরকারের প্রযুক্তি ভারতবর্ষে স্থাপনের অনুমতি দেয় না। সেইটা আমাদের দেশে করছে। আজকে দেশটাকে ধ্বংস করার জন্য, পরিবেশের বিপর্যয় নানাবিধ কর্মকান্ড করছে। আর তড়িঘড়ি করে বিদ্যুৎ দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা আত্মসাত করেছে। ১০ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। ১০ লক্ষ কোটি টাকা যদি বিদেশে থাকে তাহলে দেশের অর্থনীতির কি অবস্থা হবে?
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শুরু হয়েছিল মাত্র ৭৫০ কোটি টাকার বাজেট দিয়ে। ৫০ বছর পর ১০ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। এই টাকাগুলি কার? এই টাকা আমাদের ফেরত আনতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান বলেন, ছাগল দিয়ে শেখ হাসিনা দেশ চালাচ্ছেন। সবদিক দিয়ে শেখ হাসিনার পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে। ২০২২ সালের মধ্যে এই সরকারের পতন হবে। তার অধীনে আগামীতে কোন নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, ২ কোটি টাকার জন্য যদি খালেদা জিয়ার জেল হয়, তাহলে ৩২ কোটি টাকার জন্য কতো বছর জেল হবে? নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিএনপিকে শক্তিশালী করুন। রাজপথে নামুন। রক্ত না দিলে মুক্তি মেলে না।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, দেশে ৫ ধাপে ইউপি নির্বাচন শেষ হয়েছে। প্রথম ধাপে নৌকা প্রতীকের ৭৬ শতাংশ পরাজয় হয়েছে। ধাপে ধাপে পরাজয় হয়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের। যে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি, সেই নির্বাচনে তাদের এই অবস্থা। জামানত বাতিল হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাই আজ নৌকার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, নৌকা আজ শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতীক নয়। নৌকা এখন লুটপাট, ধর্ষণ, দুর্নীতির প্রতীক। এ কারণে মানুষ আজ এর বিরুদ্ধে। তার উদাহরণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন।
অমিত বলেন, পথে পথে বাধা দিয়েছেন, গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছেন, পুলিশ বেত্রাঘাত করেছে তবুও মানুষ সমাবেশে এসেছে। গাড়ি, লঞ্চ, ট্রেন বন্ধ করে লাভ নেই। জনগণ জেগে উঠেছে, এই জনগণকে ঠেকানো সম্ভব নয়। অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। মনে রাখবেন, খালেদা জিয়ার টিকে থাকার সাথে আওয়ামী লীগের টিকে থাকার সম্পর্ক রয়েছে।

গণ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খুলনা জেলা বিএনপির আহবায়ক আমীর এজাজ খান। সমাবেশের এক পর্যায়ে কয়েক হাজার নেতাকর্মীর এক বিশাল মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক সহ সভাপতি, খুলনা-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী আলহাজ রকিবুল ইসলাম বকুল। এ সময় শ্লোগানে শ্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে সমাবেশস্থল।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আবু হোসেন বাবু ও ডুমুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোল্লা মোশারফ হোসেন মফিজ সমাবেশ সঞ্চালনা করেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা নির্বাহী কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাড. শফিকুল আলম মনা, বিএনপি নেতা সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাহারুজ্জামান মোর্তজা, আবুল হোসেন আজাদ, মোস্তাফিজুর রহমান, ইউসুফ আলী খান, মামুন হাসান, খান রবিউল ইসলাম রবি, মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক তরিকুল ইসলাম জহির, খান জুলফিকার আলী জুলু, খায়রুল ইসলাম খান জনি, ডা. আব্দুল মজিদ, কাওসার আলী জমাদ্দার, রোবায়েত হোসেন বাবু, সাইফুর রহমান মিন্টু, মুর্শিদ কামাল, অসীত কুমার সাহা, কাউন্সিলর হাফিজুর রহমান মনি, আলী আকবর চুন্নু, এমএ জিলানী, ফকরুল ইসলাম রবি, ওমর ফারুক চৌধুরী কাউসার, শফি মোহাম্মদ খান, চৌধুরী কাওসার আলী, চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, সৈয়দ রেহানা ঈসা, মাহাবুব হাসান পিয়ারু, শামীম কবির, গালিব ইমতিয়াজ নাহিদ, মোল্লা কবির হোসেন, একরামুল হক হেলাল, ইবাদুল হক রুবায়েদ, আতাউর রহমান রুনু, খান ঈসমাইল হোসেন, অ্যাড. সেতারা বেগম, আব্দুল মান্নান মিস্ত্রী, ইসতিয়াক আহমেদ ইস্তি, গোলাম মোস্তফা তুহিন, তাজিম বিশ্বাস, মতিয়ার রহমান বাচ্চু, গাজী আঃ হালিম, শেখ সরোয়ার হোসেন, হাফিজুর রহমান, শেখ শাহিনুর রহমান, হাবিবুর রহমান হবি, অরুণ কুমার, মশিউর রহমান লিটন, শেখ ফরহাদ হোসেন, আমিনুর রহমান প্রমুখ।

এর আগে কেন্দ্রের নির্দেশনা পেয়ে এক সপ্তাহ আগে ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের স্বাধীনতা চত্বরে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করে বিএনপি। প্রাথমিকভাবে কর্মসূচি পালনের আশ^াস মিললেও শেষ পর্যায়ে এসে ছাত্রলীগ-যুবলীগ একই স্থানে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কর্মসূচি পালনের জন্য আবেদন করে। এ সময় স্বাধীনতা চত্বরে কর্মসূচি পালনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। বিকল্প ভেন্যু বেছে নিয়ে বিএনপিকে কর্মসূচি পালন করতে বলা হলেও তা নিয়ে প্রতিনিয়ত চলতে থাকে নানা টালবাহানা। এর মধ্যে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা পুলিশ গোটা উপেজলা জুড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি অভিযান চালায়। তাদের দলবদ্ধ মটরসাইকেল মহড়া আতংক ছড়ায়। ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। এছাড়া সমাবেশকে কেন্দ্রে করে ডুমুুরিয়ায় পৌছানোর পথে পথে পুলিশী চেকপোস্ট স্থাপন করে যানবাহন তল্লাশি ও বাস থামিয়ে দিয়ে নেতাকর্মীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় শত শত বিএনপি কর্মী দীর্ঘ পথ পায়ে হেটে পাড়ি দিয়ে সমাবেশে যোগ দেন।
সকাল থেকে মঞ্চ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দুপুর ১২টার কিছু আগে শুরু হয় সমাবেশের কাজ। খুলনা জেলা ও মহানগর ছাড়াও পাশ^বর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপির বিশাল বিশাল মিছিল সমাবেশে যোগ দেয়।