গাজীপুরে জোড়া খুনের রহস্য উন্মোচন ঃ পাওনা টাকা না দেয়ায় জাদু দেখানোর কথা বলে দুই সহকর্মীকে খুন, গ্রেফতার ২

আপডেট: জুলাই ১১, ২০২১
0
ছবির ক্যাপশনঃ গাজীপুর ঃ জোড়া খুনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত দুইজন এবং নিহত দুইজনের ফাইল ছবি

গাজীপুর সংবাদদাতাঃ গাজীপুরে পাওনা আড়াই হাজার টাকা না পেয়ে জাদু দেখানের কথা বলে হাত-পা বেঁধে দুই সহকর্মীকে খুন করেছে এক বেকারী শ্রমিক। এ জোড়া খুনের ঘটনায় জড়িত মূল আসামিসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। লাশ উদ্ধারের চারদিন পর ক্লুলেস এ জোড়া খুনের রহস্য উন্মোচন এবং নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করেছে পুলিশ। রবিবার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) মোঃ জাকির হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন।

নিহতরা হলো- রংপুরের মিঠাপুকুর থানাধীন চাঁদপাড়া গ্রামের আলমগীর হোসেনের ছেলে মাহমুদুল হাসান (২০) এবং নীলফামারীর ডিমলা থানাধীন সাতনাই কলোনী এলাকার আলম মিয়ার ছেলে মোঃ রাকিব হোসেন (১৮)। তারা গাজীপুর সিটি কপোর্রেশনের কোনাবাড়ি থানাধীন আমবাগ এলাকার শাহানা বেকারীর কর্মচারী।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার কিসমত দূর্গাপুর মধ্যপাড়া এলাকার মুনসুর আলীর ছেলে রাসেল প্রধান (২৫) ও বগুড়ার ধুনট থানার শৈলমারী গ্রামের সাইদুর সরকারের ছেলে মোঃ সৈকত সরকার (২৪)।

তিনি প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, গত ৭ জুলাই রাতে গাজীপুর সিটি কপোর্রেশনের কোনাবাড়ি থানাধীন আমবাগ নামাপাড়া বাঘিয়ারচরে আবুল কালামের পরিত্যাক্ত ইটভাটা এলাকায় কচুরীপানা দিয়ে ঢেকে রাখা পানিতে ভাসমান অজ্ঞাত পরিচয়ের দুই ব্যাক্তির অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করে কোনাবাড়ী থানার পুলিশ। এ ঘটনায় ওই থানার এসআই তাপস কুমার ওঝা বাদি হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর এ জোড়া খুনের ঘটনায় আভযানে নামে পুলিশ। অভিযানের এক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ঘটনায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে সৈকত সরকারকে (২৪) শনিবার কালিয়াকৈর থেকে আটক করে পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে নিহত মাহমুদুল হাসানের মোবাইল জব্দ করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জোড়া খুনের প্রধান হোতা রাসেলকে (২৫) গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে একইদিন রাতে গ্রেফতার করা হয়। এসময় নিহতদের দু’টি মোবাইল ফোন গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত খুঁটি ও মাহমুদুলের প্যান্ট বিলের পানির নীচ থেকে উদ্ধার করা হয়। রবিবার তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

জিএমপি’র পুলিশের উপ-কমিশনার মোঃ জাকির হাসান আরো জানান, গাজীপুর সিটি কপোর্রেশনের কোনাবাড়ি থানাধীন আমবাগ এলাকার শাহানা বেকারীতে কাজ করতো রাসেল প্রধান (২৫), মাহমুদুল হাসান (২০) ও মোঃ রাকিব হোসেন (১৮)। একসঙ্গে কাজ করার কারণে তাদের মাঝে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়। প্রায় মাস খানেক আগে রাসেলের কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকা ধার নেয় মাহমুদুল হাসান। পাওনা টাকা আদায়ের আগেই স্থানীয় এক প্রভাবশালীর বিবাহিত মেয়েকে নিয়ে এলাকা থেকে পালিয়ে যায় রাসেল। গত কিছুদিন ধরে মোবাইল ফোনে রাসেল পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিলে নানা টালবাহানা করতে থাকে মাহমুদুল হাসান। এক পর্যায়ে রাসেলের মোবাইল নম্বরটি ব্লক করে রাখে মাহমুদুল। এতে ক্ষুব্ধ হয় রাসেল। গত ১ জুলাই রাসেল প্রধান পাওনা টাকা আদায়ের জন্য রাসেল গাইবান্ধা থেকে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে আসে। দু’দিন খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পায় নি রাসেল। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ রাসেল অপর সহকর্মী রাকিব হোসেনের (১৮) মাধ্যমে মাহমুদুলের সন্ধান পায়। ক্ষুব্ধ রাসেল পরিকল্পনা করে মাহমুদুল ও রাকিবের সঙ্গে বন্ধুত্ব সম্পর্ক গভীর করে বলে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত রাসেল প্রধান জানিয়েছে।

তিনি জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৩ জুলাই সন্ধ্যায় আমবাগ নামাপাড়া বাঘিয়ারচরে বিলের পাড়ের আবুল কালামের পরিত্যাক্ত ইটভাটা এলাকায় মাহমুদুল ও রাকিবের সঙ্গে রাসেল একত্রে আড্ডা দিতে থাকে। এসময় জাদুর মাধ্যমে টাকা উপার্জনের প্রলোভনের দেখিয়ে কৌশলে রাসেল প্রথমে রাকিবের হাত-পা বেঁধে ফেলে। পরে মাহমুদুলের দু’হাত বাঁধার পর দু’পা বাঁধার সময় তার সন্দেহ হয়। এসময় বাঁধা দিলে মাহমুদুলকে টেনে হেঁচড়ে বিলের পানিতে নিয়ে চুবিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে রাসেল। টানা হেঁচড়ার সময় মাহমুদুলের প্যান্ট খুলে গেলে তা বিলের পানিতে ফেলে দেয় রাসেল। হাত-পা বাঁধা রাকিবের সামনেই এ ঘটনা ঘটে। রাকিব এ ঘটনা তার কারখানার মালিকসহ সবাইকে বলে দেওয়ার কথা জানায়। এসময় পাশে পড়ে থাকা একটি সীমানা পিলার (খুঁটি) দিয়ে মাথায়, বুকে ও পিঠে আঘাত করে রাকিবকে খুন করে রাসেল। পরে সেখানে পানিতে ডুবিয়ে লাশের উপর কচুরীপানা, ঘাস ও লতাপাতা দিয়ে ঢেকে রেখে এবং নিহতদের পকেট থেকে দু’টি মোবাইল ফোন ও ২শ’ টাকা নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় রাসেল। পরদিন সকালে সে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা মোড় এলাকার একটি ভাতের হোটেলের মালিকের ছেলে সৈকতের কাছে এক হাজার চারশ’ টাকায় একটি মোবাইল ফোন (মাহমুদুল হাসানের) বিক্রি করে গাইবান্ধায় গ্রামের বাড়ি চলে যায় রাসেল। গ্রেফতার কৃত রাসেলের কাছ থেকে নিহত রাকিবের এবং সৈকতের কাছ থেকে নিহত মাহমুদুলের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতরে এ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠাণে জিএমপি’র উপ-কমিশনার রেজওয়ান আহমেদ, সহকারি কমিশনার সুভাশীষ ধর ও রিপন চন্দ্র সরকার প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।