গাজীপুরে দুই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা

আপডেট: মার্চ ২১, ২০২১
0

গাজীপুর সংবাদদাতাঃ
গাজীপুর মহনগরের গাছা মেট্রো থানা এলাকা থেকে দুই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুমকরে রেখেছে অপহরণকারীরা। পুলিশ একটি শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে। অপর শিশুর লাশ উদ্ধারের জন্য টঙ্গী তুরাগ নদের শাখা বালু নদীতে অভিযান পরিচালনা করছে।

ঘটনার বিষয়ে রোববার জিএমপি গাছা থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে অপহরণ ও হত্যা ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন পুলিশ। ওই অপহরণ ও হত্যার সাথে জড়িত দুই জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়,গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের সদস্য।

গ্রেফতারকৃতরা হলো শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ থানার পুটিয়া গ্রামের মৃত আলী জব্বার সর্দারের ছেলে আলী আকবর (২৪)।সে গাজীপুর মহানগরীর হায়দরাবাদ আবুল হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া ও গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ খাইলকুর এলাকার মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৩০)।

সংবাদ সম্মেলনে জিএমপি উপ পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশ জানান, গত ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল সোয়া ১১ টায় তিন বছরের ছেলে শিশু নিহাদ অপহরণ হয়। নিহাদের মা নার্গিস স্থানীয় সততা মিনি সোয়েটার নামের একটি সাব-কন্ট্রাক কারখানায় চাকরি করেন। ঘটনার সময় নিহাদ ওই কারখানার গেটে খেলাধুলা করার সময় তাকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় অপহৃত শিশুর বাবা গার্মেন্টস শ্রমিক হানিফ আলী গাছা থানায় মামলা দায়ের করেন। এর পর শিশুটিকে উদ্ধারে অভিযানে নামে পুলিশ। ঘটনাস্থলের সিসি টিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে অপহরনকারীকে দেখা গেলেও তাকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। অপহরণের তিনদিন পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শ্যামপুর থানাধীন করিমুল্লাবাগ এলাকায় নাসির উদ্দিন নাসুর তিনতালা বিল্ডিংয়ের পানির ট্যাংকির ভিতর থেকে নিহাদের লাশ উদ্ধার করে শ্যামপুর থানা পুলিশ। পরে তারা গাজীপুর মেট্রোপলিটন গাছা থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করে লাশটি হস্তান্তর করে।
এদিকে গত ৯ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টায় গাছা থানাধীন পূর্ব কলমেশ্বর এ্যারাইভ্যাল গার্মেন্টসের পেছন হতে সুমাইয়া আক্তার সুমু ওরফে রুবা নামে দুই বছর আট মাস বয়সী অপর এক শিশুকে অপহরণ করা হয়। অপহরণকারীরা শিশু রুবার বাবার কাছে মোবাইল ফোনে পঁাচ লাখ টাকার মুক্তিপণ দাবি করে। এ ঘটনায়ও গাছা থানায় পৃথক আরেকটি মামলা হয়। এ দুটি অপহরণের ঘটনায় পুলিশ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত ১৭ মার্চ অপহরণকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য আকবরকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আকবরের খালাতো ভাই আনোয়ারকে গত ১৯ মার্চ নগরীর তারগাছ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের গাজীপুর আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে আসামিদের থানায় রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা দুটি অপহরণের দায় স্বীকার করে ঘটনার বর্ণনা দেয়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আনোয়ার ও আকবর জানায় শিশু রুবাকে হত্যা করে বস্তায় ভরে তুরাগের শাখা বালু নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। অপরদিকে শিশু নিহাদের হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে দুটি শিশুর জামা-কাপড়ের সন্ধান দেয় অপহরণকারীরা। শিশু দুটির পরিবারকে এসব জামা-কাপড় দেখিয়ে তারা মুক্তিপণ আদায় করার পরিকল্পনা করছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়।
গাছা থানার ওসি মোঃ ইসমাইল হোসেন জানান, তারা শিশু রুবার লাশ এখনো সন্ধান পাননি। লাশটি উদ্ধারের জন্য দমকল বাহিনীর সহযোগিতায় বালু নদীতে তল্লাশি চলছে। প্রেস ব্রিফিংএ এডিসি-অপরাধ (দক্ষিণ) হাসিবুল আলম, গাছা জোনের এসি আহসানুল হক, গাছা থানার অফিসার ইচার্জ মো. ইসমাইল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
###
মোঃ রেজাউল বারী বাবুল