চিকিৎসকদের জন্য মহানবী (সা.)-এর সুসংবাদ

আপডেট: জুলাই ১৪, ২০২৩
0

।। মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা ।।

চিকিৎসা একটি মহান পেশা। অনেকে এটাকে পেশা না বলে সেবা বলতে পছন্দ করে। এই পেশায় নিয়োজিতদের যেমন অনেক বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, তেমনি নিয়ত শুদ্ধ থাকলে তাদের পুরস্কারও অনেক বড় হয়। যেহেতু আল্লাহর নবী (সা.) বলেছেন, ‘সব কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে।’ (বুখারি, হাদিস : ০১)

এই হাদিসের আলোকে কেউ যদি চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির আশা করে, কোরআন-হাদিসে বর্ণিত রোগীর সেবার ফজিলত পাওয়ার আশা রাখে, তাহলে ইনশাআল্লাহ তারা তাদের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে অগণিত ফজিলত অর্জন করতে পারে।

নিম্নে রোগীর সেবার কয়েকটি ফজিলত তুলে ধরা হলো, যেগুলো চিকিৎসকরা খুব সহজে অর্জন করতে পারে। শুধু চিকিৎসকরাই নয়, যারা চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত কিংবা যারা রোগীদের চিকিৎসা খরচ দিয়ে সহযোগিতা করেন, আত্মীয়দের মধ্যে যারা রোগীর সেবা করেন, সবাই এই ফজিলতগুলো অর্জন করতে পারে।

জান্নাতে ফল আহরণের শামিল : রোগীর সেবা করা জান্নাতে ফল আহরণের শামিল। যারা চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত, তারা বিশুদ্ধ নিয়তে রোগীর সেবা করে এই ফজিলত অর্জন করতে পারেন। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলমান তার কোনো (অসুস্থ) মুসলিম ভাইকে দেখতে গেলে সে (যতক্ষণ সেখানে থাকে ততক্ষণ) যেন জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৭)

ডাক্তার/নার্সরা প্রতিদিনই অসংখ্য রোগী দেখতে তাদের কাছে যেতে হয়, যদি তারা এই হাদিসের ওপর আমল করার নিয়তে রোগীকে দেখেন এবং সময় নিয়ে দেখেন তাহলে তারাও এই ফজিলত পাবে ইনশাআল্লাহ।

মাঝেমধ্যে দেশে কোনো রোগের প্রকোপ দেখা দিলে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতদের ছুটি বাতিল হয়ে যায়, তাদের উচিত তখন বিরক্ত না হয়ে এই হাদিসের ফজিলত স্মরণ করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আন্তরিকতাসহ রোগীদের সেবা করা।

ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যায় : রোগী দেখতে গেলে ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যায়। সুওয়াইর (রহ.) থেকে তাঁর পিতা সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার হাত ধরে আলী (রা.) বললেন, আমার সঙ্গে চলো, অসুস্থ হুসাইনকে দেখে আসি। আমরা তার কাছে গিয়ে মুসা (রা.)-কে হাজির পেলাম। আলী (রা.) বলেন, হে আবু মুসা, আপনি কি রোগী দেখতে এসেছেন, না এমনি বেড়াতে এসেছেন? তিনি বলেন, না, রোগী দেখতে এসেছি।

আলী (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, কোনো মুসলমান যদি অন্য কোনো মুসলিম রোগীকে সকালবেলা দেখতে যায় তাহলে ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে। সে যদি সন্ধ্যায় তাকে দেখতে যায় তবে ৭০ হাজার ফেরেশতা ভোর পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ফলের বাগান তৈরি হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৯)

হাসপাতালের ডাক্তাররা অন্তত সকাল-সন্ধ্যা দুইবার রোগী দেখতে রাউন্ডে জান, যদি তারা এই হাদিসের ওপর আমলের নিয়তে কাজটি করেন, তাহলে তারাও ২৪ ঘণ্টা ফেরেশতাদের দোয়া পেতে পারেন।

জান্নাতে বাসস্থান তৈরি হয় : আমরা জানি, মসজিদ নির্মাণের বিনিময়ে জান্নাতে বাসস্থান তৈরি হয়। যারা মসজিদ নির্মাণের সামর্থ্য নেই, তারা রোগীর সেবা করেও জান্নাতে বাসস্থানের ভাগিদার হতে পারেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি রোগীকে দেখতে গেলে আকাশ থেকে একজন আহ্বানকারী তাকে ডেকে বলেন, তুমি উত্তম কাজ করেছ, তোমার পথচলা কল্যাণময় হোক এবং তুমি জান্নাতে একটি বাসস্থান নির্ধারণ করে নিলে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪৪৩)

এই হাদিসের ওপর আমল করা চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতদের জন্য বেশ সহজ।


উম্মাহ ডটকম