চিপসের প্যাকেটে নয় অতি ভারী বড় সাইনবোর্ডে হারিয়ে গেছে ঢাকার খালগুলো

আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩
0

সুরাইয়া পারভিন :

পিচ্চিবেলায় খেলার গ্রুপের বেশিরভাগ ছিল আমার সিনিয়র। সিনিয়র মানে সিনিয়র। বছর খানেক, ছয় মাস, তিন মাস, দুই মাস এবং তিনদিনের বড়। তিনদিনের যে বড়, সেও কখনই আমাকে সমবয়সী হিসেবে দেখেনি। দেড় দুই বছরের বড়রা, সন্মান পাবার মত বড়।
ভুলেও ক্যাচাল করতাম না। সাহসই ছিল না। যথাসম্ভব খাতির করে চলতাম। দাড়িয়াবান্ধা কোট ছিল কাচার নামায় ( পুকুরের পাড়ের সাথে নালামত খাল, তার সাথে রাস্তার মত একটা পাড়।) আমি ভালই খেলেতাম। আমাদের এক সাইজ বড়র গ্রুপ চলে আসলেই, শুরু হয়ে যেতো ছাঁটাইপর্ব।
যে কোন দুর্বলতা দেখিয়ে আমাকে ঘ্যাচাং করতো। আমার থেকে যে তিনদিনের বড় তাকে কোনদিন, ছোট হিসেবে বাদ দেয় নি। দুই মাসের বড়, কি তিন মাসের বড় — ওদেরও ছোট হবার অজুহাতে ছাঁটাই করতে পারে নি। গায়ে গতরে আমার সাইজই। তবে চোপায় জোর ছিল। সেকারনে খেলার মাঠে ওরা শক্তিশালি।
কানতে কানতে ঘরে আসলে হুদাই মায়ের হাতে মাইর খাইতে হইতো। “ঘরে কেন কানতে আসি, খেলতে যাই ক্যান,নিত্যই কাচার নামায় কি,লেখাপড়ার নাম নাই, সারাদিন উঠানে — ” এবং অবধারিতভাবে সেই বিকেলবেলা একটা বই ধরাই দিতো।
‘ধাক্কা খেয়ে পরে গেলে সে দোষ নিজের’।— হয়তোবা এমন ভাবনাই তৈরি হয়ে ছিল। যে কোন সমস্যা, জীবনের যে কোন জটিলতায় মনে হয় আমার কোন কোন ভ্রান্তি? আমি ভুল না করলেও, সব হিসেবমতো, নিয়মমতো চলবে না; এ কথা যেনো ভুলেই যাই।
রোজার মাসে ইফতারির লিষ্ট থেকে বেগুনি ছেঁটে দেই। না খেলে কি হয়? কুমড়ার বেগুনি করতে যাই না। পিয়াজের দাম বেশি,খাওয়া বাদ দিতে পারি না, কমিয়ে দেই। ডিম নিয়ে হাহাকার। আমি কাড়াকাড়ি করতে যাই না।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরের বৃষ্টিতে ঢাকা তলিয়ে গেলো। পথে বেরুনো মানুষ, কে কোথায় আটকে রইলো। সাপ্তাহিক ছুটিতে মানুষ ছুটতে থাকে। কর্মস্থল থেকে পরিবারের কাছে। অথবা পরিবার নিয়ে বাইরে। দুর্ভোগ বৃষ্টিতে, দুর্ভোগ রাস্তার পানিতে, সারাশহর ভাসছে, নিরাপত্তাহীন অবস্থায় চরম আতংক কাজ করছিল। ছিনতাই, রাহাজানি – কত ধারার ভয়।
আমাদের দুই মেয়র, কমিশনার রা; — সে সময় জনতার পাশে ছিলেন কি? আটকেপরা,বিপদগ্রস্ত মানুষদের আশ্বস্ত করার কি কিছু ছিলনা তাদের?
অনেকদিনের গরমের পরে মুষলধারা বৃষ্টি তারা উপভোগ করছিলেন কি। দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের কাজ হয়তোবা শুধু ত্রাণ বিতরন। দুই চার ঘন্টায় মানুষ না খেয়ে মারা যাবে না। তারা খাবার বিতরনের ভাবনা করে নি। এবং এর বাইরে এরা কাজের চিন্তাও করেনি।
আমরা ক্ষুধার্ত জাতি। আমাদের ভাবনা খাবার বিতরন পর্যন্ত।
ছোটবেলায় সেট হওয়া “আমারই দোষ” অথবা “ঘটনায় আমার কি কি দোষ”।এ অবস্থা থেকে মনে হচ্ছে, কোনভাবেই পরিত্রাণ পেতে পারছি না। ঘটনায় নিজের দোষই চিন্তাজগতে আঘাত করে। কেউ স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিলে তো কথাই নেই।
বন্যায়, বিদ্যুতের ঝলকানিতে মানুষ মরলো। বুঝে গেলাম, বুঝে নিলাম — আমারই দোষ, আমাদেরই দোষ। চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিকের কাগজ, বোতল — এসবে নালা, নর্দমা সয়লাব। আটকে গেছে পানির ধারা। সৃষ্টি হয়েছে তাৎক্ষনিক বন্যার।
আর
বস্তিতে প্রতি দশ ঘরে একটা মিটার। পাশাপাশি ঘরে তার টেনে নিয়ে যায়। ডেসকোর তার ছিঁড়ে বিদ্যুতায়িত হয় নি।
কোন দেশে আছেন আপনি?
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার,মেট্রোরেল – উন্নয়নের জয়গান গাইছেন। দেশকে সিঙ্গাপুরের অবস্থানে বলেন। আর মানুষের জীবনের নাই ন্যুনতম দাম।
এলিট শ্রেণী আর পামর জনতা, একেবারে আলাদা দুই ধারা হয়ে উঠেছে।
যে কথা বলছিলাম। চিপসের প্যাকেট কি পানির বোতল এগুলো নালায় পরার আগে যথাযথ সংরক্ষন করার দায়িত্ব, সেটা আপনাদের। এক টুকরা মাটির জন্য হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হয়। সিটি কর্পোরেশনের ট্যাক্স,অবস্থাভেদে আয়কর, ভ্যাট ফ্যাট কত রকমের বায়না মিটাই। শুধুমাত্র রাস্তাটা পরিস্কার রাখবেন না?এইটা কেমন কথা?সব কাজের জন্য টাকাপয়সা আমরা আগাম দিয়ে রাখি।
পত্রিকার কল্যানে জানতে পারছি, আমরা ঢাকাবাসী কেমন ময়লা ফেলাই। এইগুলি যথাযথ সময়ে, যথাযথ নিয়মে কেন পরিচ্ছন্ন রাখা হয় না। সেই জবাবদিহি কই পাই?
ঢাকার খাল গুলো কই? নিচু জমি ভরাট হয়ে চলে, তাহা চিপসের প্যাকেট দিয়ে না। অতি বড় নামধারী সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়েই তাহারা ভরাট করেন।