জনগণের জন্য সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে —-ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

আপডেট: অক্টোবর ১০, ২০২১
0

আজ ১০ অক্টোবর ২০২১, রবিবার সকাল ১১ টায় ৩ সংগঠনের (রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, ভাসানী অনুসারি পরিষদ এবং গণসংহতি আন্দোলন) উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে “নাগরিকদের ভোটাধিকার ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কোপ পথে” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বীরমুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বীর মুক্তিযোদ্ধা নইম জাহাঙ্গীর, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সদস্য অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হাসান রুবেল ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান। আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বাবলু। সভা পরিচালনা করেন গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকম-লীর সদস্য জুলহাসনাইন বাবু।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী নোবেল পুরস্কার না পাওয়া দুঃখজনক। তিনি হেলসিঙ্কি গেলেন, যদি অসলো পর্যন্ত যেতেন তাহলে হয়তো নোবেল পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতো। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য নোবেল পুরস্কারের সর্টলিস্টে থাকলেও দেশে আইনের শাসন না থাকার জন্য প্রশ্ন উঠতে পারে। ২০ লক্ষ মামলা বিচারের অপেক্ষায় পরে আছে। খালেদা জিয়ার জামিন হয়না আমাদের বিচার প্রক্রিয়ায়। যে টাকা চুরি হয়নাই তার জন্য খালেদা জিয়া আটক আছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বরং প্রশ্ন উঠত পারতো এই যে জাতিসংঘের অধিবেশনে ঘুরে যাচ্ছেন, এই টাকার অপচয় কোথা থেকে হচ্ছে? তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার জন্য তাঁর অবদান আছে। জাতিসংঘের সাথে চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তি তো আরো ১৫দিন আগেই হতে পারতো। হয়নি ভারতের চক্রান্তে। বাংলাদেশের কিছু আমলা আছে, জনগণের টাকায় চলে কিন্তু কাজ করে ভারতের হুকুমে।

বিদেশী গোয়েন্দা বাহিনীর তৎপরতা ক্রমে বাংলাদেশে সক্রিয় হয়ে উঠছে বলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি আরো বলেন, জনগণ দেশের মালিক, কিন্তু জনগণ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমরা খেতে পাইনা, জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। যিনি রিক্সা চালান তিনি রিক্সাটারও মালিক হতে পারেন না। আমরা ১ কোটি পরিবারকে ২৫ টাকা সের এ চাল দিতে পারি না, ১৫ সেরে আটা দিতে পারি না, ৫০ টাকায় তেল দিতে পারি না, চিনি দিতে পারি না। আমাদের পক্ষে কথা বলার কেউ নাই। আমি এমপি হলেও আমার কিচ্ছু করার ক্ষমতা নাই। কনক সারোয়ারের বোন রাকাকে কেন ধরা হয়েছে? তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ভাই আপনার মন মতো কথা বলে নাই এজন্য তার বোনকে আপনি ধরতে পারেন? তিনি বলেন বাংলাদেশ একটি মাফিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাস্তায় নামতে হবে। সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। সংবিধান কোরআন শরীফ নয় যে এর পরিবর্তন করা যাবে না।

তিনি বিচারপতিদের উদ্দেশ্যে বলেন, তারা মেরুদ-হীনতায় ভুগছেন। আমাদের নির্বাচন কমিশনকে পুলিশ সেলুট দেয় বটে কিন্তু কনস্টেবলও তাকে মানে না।

আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে রাস্তায় নামা ছাড়া কোন উপায় নাই। যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম তা বাস্তায়নের জন্য রাস্তায় নামা ছাড়া কোন উপায় নাই।

জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে তথ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বলেন, জিহ্বা টেনে ছিড়ে ফেলা হবে, প্রধানমন্ত্রী বলেন ভোট আর কাকে দেবে, আওয়ামীলীগ ছাড়া আছে কে? ৫০ বছর আগে এ রাষ্ট্রের যাত্রা শুরু হেয়ছিলো রিপাব্লিক হিসেবে। রিপাব্লিকের বাংলা করা হয়েছে প্রজাতন্ত্র। এখানে জনগণের ক্ষমতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রধনমন্ত্রী নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশকে এক ভয়াবহ পরিনতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। দেশের অভন্তরীণ সংহতি শক্তিশালি না হলে আমরা বৈশি^ক ভূরাজনীতির বলিতে পরিণত হবো।

তিনি আরো বলেন, আইন করে নির্বাচন কমিশন সংস্কার করা যাবে না। কেননা এই সরকারের তৈরি ডিজিটার নিরাপত্তা আইন আমরা দেখেছি। জনগণের স্বার্থের পক্ষের কোন আইন তৈরির ক্ষমতা এই সরকারের নাই। এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন আইন চাই না। রক্তপাত এড়িয়ে, অরাজনৈতিক প্রক্রিয়া এড়িয়ে যদি আমরা কোন সমাধানে পৌছাতে চাই তার জন্য প্রয়োজন গণতান্ত্রিক উত্তরণে রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছানো। আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদেরও এ সমঝোতায় আসতে হবে। না হলে সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদেরকে বাধ্য করতে হবে, নতুন রিপাবলিক তৈরির পথে অগ্রসর হতে হবে।

তিনি আরো বলেন, প্রথম বিষয় হলো, বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং অন্তবর্তী সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। ভোটাধিকার একটি স্থায়ী অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই এখন এক দফার লড়াই। এর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী গড়ে তুলতে হবে। দ্বিতীয়ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে। তৃতীয়ত সংসদে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

রফিকুল ইসলাম বাবলু তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে কোন সরকার পর পর ২বার ক্ষমতায় আসতে পারেনি। মানুষ ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দিয়ে মানুষের ভোটের অধিকরকেই কেড়ে নেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় ১০ জন এমিকাস কিউরির মধ্যে ৮জনই এর বিপক্ষে রায় দেন। ৭ জন বিচারকের মধ্যে ৩ জন ভিন্নমত পোষণ করেন। কিন্তু বিচারপতি খাইরুল হক তার সঙ্গীয় ৩ জনকে নিয়ে সিঙ্গেল মেজরিটিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করেন।
হাসনাত কাইয়ুম বলেন, বর্তমান সংকট শুধু ভোটাধিকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। বরং পুরো রাষ্ট্র ও সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমেই স্থায়ী সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।