জাতিসঙ্ঘে ইউক্রেনের পক্ষ নেয়ার ব্যাখ্যা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২২
0

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা চালানোর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘে আনা প্রথম প্রস্তাবে বাংলাদেশ ভোট না দিলেও, দ্বিতীয় প্রস্তাবে ভোট দিয়েছে।

বুধবার জাতীয় সংসদে এই সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বন্ধুপ্রতীম দেশ হওয়ায় শুধুমাত্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা প্রথম প্রস্তাবে বাংলাদেশ ভোট না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় প্রস্তাবে মানবতার বিষয় থাকায় বাংলাদেশ ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

২ মার্চ ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর প্রতিবাদে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের জরুরি অধিবেশনে একটি প্রস্তাব আনা হয়। সেখানে বলা হয়েছিল, রাশিয়া যেন অবিলম্বে ইউক্রেনে হামলা বন্ধ করে এবং সেনা ফিরিয়ে নেয়। সেই প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত ছিল বাংলাদেশ।

জাতীয় সংসদে বুধবার প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে জাতিসঙ্ঘে আনা প্রথম প্রস্তাবে ভোট দেয়া থেকে বাংলাদেশের বিরত থাকার কারণ তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা নাই, সেখানে কোনো বিষয় নাই। একটা দেশের বিরুদ্ধে ভোট, সেটা হলো রাশিয়া। তখন আমি বললাম না, এখানে তো আমরা ভোট দেবো না। কারণ যুদ্ধ তো একা একা বাধে না। উস্কানি তো কেউ না কেউ দিচ্ছে। দিয়ে টিয়ে তো বাঁধালো যুদ্ধটা। তাহলে একটা দেশকে কনডেম (নিন্দা) করা হবে কেন? সেই জন্য আমরা ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিলাম।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জাতিসঙ্ঘে আনা একাধিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছিল রাশিয়া। ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তির পর ভারত মহাসাগরে তারা নৌবাহিনীর বহরও পাঠিয়েছিল।

সেই প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, ‘কারণ রাশিয়া আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকা যখন ‘সেভেন্থ ফ্লিট’ পাঠায় পাকিস্তানের পক্ষে, রাশিয়া তখন আমাদের পাশে দাঁড়ায়। কাজেই যারা দুঃসময়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, আমরা নিশ্চয়ই তাদের পাশে থাকবো।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘কিন্তু তারা যদি কোন অন্যায় করে, সেটা আমরা মানবো না। আর আমরা যুদ্ধ চাই না। কিন্তু যুদ্ধটা বাঁধালো কারা, উস্কানিটা কারা দিলো, সেটাও তো আপনাদের দেখতে হবে। সেজন্য আমরা তখন সিদ্ধান্ত নিলাম, যেহেতু এটা শুধু একটা দেশের পক্ষে, আমরা ভোট দেবো না।’

প্রথমবার যারা এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়নি- তাদের নিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিল পশ্চিমা দেশগুলো।

তবে ২৪ মার্চ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আনা দ্বিতীয় প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত ওই প্রস্তাবে ইউক্রেনে মানবিক সঙ্কট নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। সেই প্রস্তাবের পক্ষে বাংলাদেশ ভোট দিয়েছে।

জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে এবার প্রস্তাবটির খসড়া তৈরি করেছিল ইউক্রেন। এই প্রস্তাবে ইউক্রেনে যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়া এবং বেসামরিক মানুষকে সুরক্ষা দেবার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া এই প্রস্তাবে মানবিক সঙ্কটের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করা হয়।

যদিও জাতিসঙ্ঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত এই প্রস্তাবটিকে একতরফা বলে সমালোচনা করেন। তারপরেও এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ।

সেই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, দ্বিতীয় প্রস্তাবটা যখন এলো, ইউক্রেনে এই যুদ্ধের কারণে মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে, রিফিউজি হয়ে যাচ্ছে, ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে সবাই কষ্ট পাচ্ছে, সেখানে মানব অধিকারের বিষয়টা ছিল। ইউক্রেনের দ্বিতীয় প্রস্তাবে যেহেতু মানবাধিকারের প্রশ্নটা, সেইখানে বাংলাদেশ ভোট দিয়েছে।’

২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এতে এর মধ্যেই ২৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জাতিসঙ্ঘ জানিয়েছে।

হামলার কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অসংখ্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পশ্চিমা দেশগুলো।

এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ রাশিয়ার অর্থায়ন করা কয়েকটি প্রকল্পে অর্থ আটকে গেছে।
সূত্র : বিবিসি