জামায়াতে ইসলামী ফ্যাসিজমের পক্ষ নিয়ে নির্বাচনে গেলে ছিন্ন পাতার ইতিহাস হয়ে যাবে—-জহির উদ্দিন স্বপন

আপডেট: জুন ১৩, ২০২৩
0

বিএনপির মিডিয়া সেলে আহবায়ক মি .জহির উদ্দিন স্বপন

বিএনপি’র ‘মিডিয়া সেল’ এর পথচলা এক বছর পুর্ন করেছে বলা যায়। এটা দারুন খবর যে, এই এক বছরে-ই ‘মিডিয়া সেল’ তাঁর নিজস্বতা ও গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে পৌঁছে গেছে দেশের আপামর গনমানুষের দুয়ারে। দেশে যখন যা ঘটে তাঁর নির্ভরযোগ্য খবর জানার জন্য মানুষ এখন মিডিয়া সেলের পেজে একবার অন্ততঃ চোখ বুলিয়ে নেয়। মানুষের আস্থা আর বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠেছে বিএনপি’র ‘মিডিয়া সেল’।

মিডিয়া সেলের বছরপুর্তি এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে https://deshjanata.com আজ মুখোমুখি হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির মিডিয়া সেলের চিফ বরেণ্য রাজনৈতিক মি.জহির উদ্দিন স্বপনের সাথে। দেশজনতার পক্ষ থেকে কথা বলেছেন পোর্টালটির নির্বাহী সম্পাদক ডাঃ জাকারিয়া চৌধুরী।
জাকারিয়াঃ কেমন আছেন ?

স্বপনঃ আলহামদুলিল্লাহ্, ভাল আছি।

জাকারিয়াঃ কেমন আছে বিএনপি ?

স্বপনঃ বিএনপি ভাল আছে। বিএনপি দেশের সব শ্রেনী পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করছে, এবং একটা রুগ্ন দেশকে সঠিক জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবার মুল কাজটির নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।

জাকারিয়াঃ বিএনপি কি পেরে উঠছে ?

স্বপনঃ এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া যা খুব উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে-ই বিএনপি এ কাজটি করে চলেছে।

জাকারিয়াঃ উৎসাহ উদ্দীপনা…… আসলেই কি সেভাবে হচ্ছে ? ইউ এস স্যাংশন এসছে চলমান সরকারী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে একটা প্রতীকি বক্তব্য নিয়ে। যেমন ‘তোমরা যদি তোমাদের অতীত কর্মকান্ড চালিয়ে যাও তবে তোমাদেরকে কিছু প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে আমেরিকায় যেতে হবে, অথবা যাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আসবে তারা যেতে পারবে না……………… এসব নানান কথাবার্তা। এতে সরকার বিএনপির উপর চড়াও হয়েছে মনে হয়। পটুয়াখালিতে একজন ছাত্রদল কর্মী, ঢাকায় নিপুন রায় সহ অসংখ্য মানুষ হত্যা প্রচেষ্টার শিকার হয়েছে মনে হল…

কফি উইথ জহির উদ্দিন স্বপন

… স্বপনঃ হ্যাঁ, বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে এমন বেশ কিছু ঘটনা দেশে ঘটেছে যা স্যোশাল মিডিয়ার কল্যানে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে একটা বিষয় প্রানিধানযোগ্য যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিষয়টাকে যেভাবে গুরুত্বসহ নিয়েছে তা যে বাস্তব এবং নিরেট সত্য তা সরকার ও সরকারের পেশি শক্তির কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রমানিত হয়েছে। এবং এটাও প্রমান হয়েছে, গত দেড় যুগ ক্ষমতায় থেকে সরকারও তাদের দোসরেরা কিভাবে বিরোধীদল নির্মুলের উদ্দেশ্যে সারাদেশে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসুচীগুলোতে হামলা মামলার মাধ্যমে তান্ডবলীলা চালিয়ে গেছে। এখন এই পরিবর্তিত ভিসানীতি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশনের ফলে কানাডা অস্ট্রেলিয়া ইউরোপিয় ইউনিয়ন সহ আন্তর্জাতিক শক্তি নির্যাতীতদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

জাকারিয়াঃ একটু অন্যে প্রসংগে একটা কথা বলি। ভিপি নুরের দল ‘গনতন্ত্র মঞ্চের’ বাইরে চলে গেছে কোন রকম আলাপ আলোচনা ছাড়াই……… তাদের বক্তব্য শুনে আমার এ ধারনা হল যে, তারা আশংকা করে গনতন্ত্র মঞ্চ বা তাদের সাথে আদর্শিক মিল রয়েছে এমন কিছু দল তাদের সাথে আন্দোলন সংগ্রাম করলেও দিন শেষে লীগের সাথে হয়তো কোনো সমঝোতায় চলে যেতে পারে………… এর দায় যেন কখনো তাদের উপর না বর্তায় তাই তারা সরে গেছে আগেভাগে-ই। কি মনে হয় আপনার ?

স্বপনঃ শেষ পর্যন্ত আন্দোলনে কে থাকবে কিংবা কে থাকবে না তা অগ্রিম বলে দেয়া যায় না। যদি কেউ সত্যি সত্যি হাসিনার সাথে মিলে নির্বাচনে যেতে চায় এবং ফ্যাসিজমকে প্রলম্বন করতে চায়, তবে তাদের কর্মের দায়ভার তাদেরকে-ই নিতে হবে। সময় হচ্ছে তাঁর শ্রেষ্ঠ উত্তর। তবে শেখ হাসিনা ও তাঁর ফ্যাসিবাদী সরকার বিরোধী দল, জোট কিংবা সমমনা এমন কোনো দলকে নিয়ে যেতে পারেনি যা আলোচনায় আসতে পারে। আমাদেরকে আসল সত্যটাও দেখিয়ে দিতে হবে। যাদের সমন্বয়ে আজকের এই ফ্যাসিবাদ, তাদের জোটে আজ পর্যন্ত কোন নতুন সঙ্গী যুক্ত হয়নি। বরং বিশ্বের সমস্ত গনতান্ত্রিক শক্তি আজ বিএনপির সাথে ফ্যাসিজম বিরোধী যুদ্ধে যুগপথ লড়াইয়ে আছে। দেশের প্রায় সকল গনতান্ত্রিক শক্তি এক ও অভিন্ন অবস্থায় আছে বলে আমি মনে করি। আন্দোলনও একটা চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
ফলে এই অবস্থা থেকে এখন যে বা যারাই এখন বিচ্যুত হবে তারাই জনগনের কাছে ধিকৃৎ শত্রু বলে বিবেচিত হবে।

জাকারিয়াঃ আপনি বললেন যে- শেখ হাসিনা ও তাঁর ফ্যাসিবাদী সরকার বিরোধী দল, জোট কিংবা সমমনা এমন কোনো দলকে নিয়ে যেতে পারেনি যা আলোচনায় আসতে পারে। আপনার মনে থাকার কথা, ২০১৩ সালের আন্দোলনের সময় আলোচনার সম্ভাবনাকে সামনে ধরে আওয়ামী সিনিয়র নেতা জনাব, আমির হোসেন আমুকে নামানো হয়েছিল। এতে কালক্ষেপণ হয়েছে, বিশ্বাস ভঙ্গের ঘটনা ঘটেছে এর পর এক দশক পার হয়েছে, দেশের অবস্থা তলানীতে চলে গেছে……… সে সময় আমু, হাসিনা, কামাল সাহেবদের উপর আস্থা রাখার একটা পরোক্ষ চাপ আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম……… লীগের সাধারন সম্পাদক বঙ্গবাজার এবং নিউমার্কেট ট্র্যাজেডির পেছনে বিএনপি’র তথাকথিত অগ্নি সন্ত্রাসের কথাও বলছে।

স্বপনঃ আন্দোলন সংগ্রামের ব্যাপারে বিএনপি’র তীক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিশেষ করে ২০১৪ তে, বিএনপির ডাকে সাড়া দিয়ে যখন দেশের আপামর মানুষ পথে নেমে এসেছিল শান্তিপুর্ন উপায়ে দেশব্যাপি সফল আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, পরবর্তীতে ঢাকায় কর্মসুচী দিয়েছে। কর্মসুচী এক পর্যায়ে যখন উত্তপ্ত হয়েছে, তখন সেই কর্মসুচীকে সরকারের ইশারায় বিভিন্ন মহল থেকে হাইজ্যাক করে নেয়া হয়েছে। এবং ক্ষমতাসীন সরকার-ই সেই আন্দোলনকে অগ্নি সন্ত্রাসের দিকে ধাবিত করেছে নিজেদের লোকজন এবং বিভিন্ন এজেন্সীতে কর্মরত নিজ দলীয় সন্ত্রাসীদের দ্বারা। যা পরবর্তীতে বিভিন্ন সন্ত্রাসীর নানান সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের স্বীকারোক্তিতে বেড়িয়ে এসেছে অগ্নি সন্ত্রাসের সাতকাহন। এভাবে-ই সরকার তাঁর ফ্যাসিবাদকে জারি রাখার জন্য, জোর করে ক্ষমতা আকড়ে রাখার জন্য ‘অগ্নি সন্ত্রাস’ বিষয়ক একটা বয়ান প্রসব করেছিল সে সময়ের সরকার। সেই প্রেক্ষিতে একটা স্বাধীন ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রস্তাব বিএনপি করেছিল। কিন্তু সত্য বের হয়ে যাবার ভয়ে সরকার সেপথে না হেঁটে নিজস্ব বয়ানই অবিরাম টেলিকাস্ট করে যাচ্ছে।

জাকারিয়াঃ আজ ০৭। ০৬। ২০২৩ জামাত নিয়ে একটা নিউজ প্রকাশিত হয়েছে। সত্য মিথ্যা যাচাই করা যায়নি। তবে যা জানা গেল, তা হলো জামাত লীগের সাথে আলোচনায় যেতে চায় । আপনি কি মনে করেন না, জামাত কালক্ষেপনের রাস্তা অনুসরন করছে ? জামায়াত সরকারের উপকারভোগীদের মত আচরন করছে ! কি মনে করেন ?

স্বপনঃ জামায়াতের নিউজটা দেখেছি। স্বাধীন চিন্তা করা ও স্বাধীন চিন্তার মধ্যে থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে বিএনপি সকল গনতান্ত্রিক শক্তিকে স্বাগত জানায়। সে অর্থে ফ্রি, ফেয়ার এন্ড ক্রেডেনশিয়াল ইলেকশনের পক্ষে যদি জামাতের অবস্থান হয় তবে ভাল। ফ্যাসিজমের পক্ষে গেলে তারাও একদিন ছিন্ন পাতার ইতিহাস হবেন। ইতিহাসের মহা ধারক হবেন না কি ইতিহাসের বিচ্ছিন্ন কোনো বোঝায় পরিনত হবেন; গনতন্ত্র বুঝেন এমন প্রত্যকটি নাগরিক ইতিহাসের নিক্তিতে সম্মানিত বা অসম্মানিত হবেন। বাস্তবতা তো এটাই, তাই না !!

জাকারিয়াঃ ইউ এস স্যাংকশন এবং সর্বশেষ ইউএস ভিসানীতি পাবলিশড হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামীলীগের লোকদের দেখছি একেকদিন একেকরকম বক্তব্য বাজারে ছড়াচ্ছে। কারো কথার সাথে কারো কথার যেন মিল নেই। একটা বাজে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা জাতির সন্তান হিসেবে অসম্মানিত বোধ করছি।

স্বপনঃ আওয়ামীলীগ শুরুতে বুঝতেই পারেনি, কি হচ্ছে বা কি হয়েছে। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছে। এদেশের আপামর মানুষ এখন সব ধরনের খবর রাখে। ফলে তাদের এবারের বাজারি পরিকল্পনা ব্যার্থ হয়েছে। আর ইউএস ভিসানীতি যখন মানুষের মন মগজে মিশে গেছে, তখন দেখা যাচ্ছে সেটি সরকারের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা অতীতে এই আওয়ামী সরকারকেই দেখেছি, ইউ এস ডিপ্লোমেট কিংবা মিনিস্টারদের নিয়ে খুব আপত্তিকর ও আজেবাজে কথা বলতে কখনো দ্বিধা করেনি। এখন সেই সরকারকেই দেখছি, ইউ এস সরকারকে খুশি করবার জন্য নানান কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। যেখানে সরকার আমদানী বন্ধ করার হুমকি দিত, সেখান থেকেই ১৮০ ডিগ্রী উল্টে তারা আমেরিকাকে খুশি করতে চাইছে। এসব অস্থিরতা ও অসংলগ্ন আচরনই বুঝিয়ে দেয়, সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই।

জাকারিয়াঃ অনেক কথা-ই আলোচনায় আনা গেল না সময় স্বল্পতার কারনে। কথা দ্রুত শেষ করি, সরকারে থাকা বিএনপি এবং সরকারের বাইরে থাকা বিএনপি খুবই ভিন্ন সাইকোলজিক্যাল আচরন করে। ১৯৯১-১৯৯৬, ২০০১-২০০৬ লাস্ট দুইটা বিএনপি সেশনের দিকে তাকান। তারা মেয়াদ পুর্ন করতে পারেনি, এমন কি চেইন অব কমান্ডেও আমরা কিছু অস্বাভাবিকতা দেখেছি… এর কি কারন আছে বলে মনে করেন ? বিএনপি তাদের সবচে ডিভোটেড কর্মীদের প্রতি উদাসিন।

স্বপনঃ বর্তমানে আমাদের বার্ষিক আয় ৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। এর সুত্রপাত হয়েছে শহীদ জিয়ার হাত ধরে। আজকের গার্মেন্টস, বৈদেশিক রেমিটেন্স প্রবাহের সুতিকাগার বিএনপি এবং শহীদ জিয়া। শহীদ জিয়া অর্থনীতিকে যেভাবে বহুমুখীকরনে মনোযোগ দিয়েছিলেন তেমনি খালেদা জিয়া এর বাস্তব ভিত্তিকে মজবুত করার কাজটি করে গেছেন। বর্তমান যে সরকার ক্ষমতায় আছে, তারা দেশকে পেয়েছে মোটামুটি স্থিতিশীল ভিত্তির উপর দাঁড়ানো একটা অর্থনীতি। দেশের অর্থনীতি ভাল থাকলে যে কোনো সরকারই আগের সরকারের চেয়ে শক্তিশালী আচরন করতে পারে। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত যে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় ছিল, তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল আজকের বাংলাদেশকে নিয়ে মুভ করবার। বিএনপি যখন তাঁর সকল এটেনশন দেয় দেশের প্রতি তখন-ই দেশী বিদেশী শক্তি সমুহ এ দেশের দালালদের নিয়ে একটা অস্থিতিশীল অবস্থায় দেশকে টেনে নিয়ে যেতে চায়। আর এটারই আফটারম্যাথ হচ্ছে বর্তমান ফ্যাসিজম।

জাকারিয়াঃ আপনাকে অসখ্য ধন্যবাদ।

স্বপনঃ আপনাকেও ধন্যবাদ।