‘জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা জ্বালানি নিরাপত্তায় হুমকি বাড়িয়েছে’

আপডেট: জুন ১৮, ২০২৩
0

ক্যাপসের আয়োজনে নির্মল বায়ু এবং জ্বালানী নিরাপত্তায় নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা

জৈব জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুতে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হচ্ছে যা বায়ুর গুণগত মান নষ্ট করছে। আজ শনিবার, ১৭ই জুন ২০২৩ সকালে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ এর সেমিনার রুমে বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এবং আরবান প্রোগ্রাম, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এর যৌথ আয়োজনে “নির্মল বায়ু এবং জ্বালানী নিরাপত্তায় নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার” বিষয়ক একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আয়োজনে সহ-আয়োজক হিসেবে ছিল পরিবেশ উদ্যোগ, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ) ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদারের সভাপতিত্বে উক্ত গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর পরিচালক (এডমিন) মো. জাকির হোসেন।

গোলটেবিল বৈঠকে মূল বক্তব্য প্রদান করেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এর জ্বালানি গবেষণা কেন্দ্র (সিইআর) এর পরিচালক শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির অপার সম্ভাবনা রয়েছে কিন্তু কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসগুলোর মধ্যে প্রধানতম উৎস হলো সোলার এবং বায়ুকল এগুলোকে সঠিক গবেষণার মাধ্যমে কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০% নবায়নযোগ্য জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা পৌঁছাতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস করতে হবে এবং এটা অর্জন করার জন্য কাজ করতে হবে।

বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বায়ু দূষণের ভয়াবহতা উল্লেখ করে বলেন, নির্মল বায়ু মানুষের অধিকার কিন্তু ঢাকা শহরের অধিবাসীরা এ অধিকার থেকে বঞ্চিত। জৈব জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুতে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হচ্ছে যা বায়ুর গুণগত মান নষ্ট করছে। তাই জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করা গেলে সবার জন্য নির্মল বায়ু এবং জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, জ্বালানি একটি কৌশলগত পণ্য। টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানী অভাবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতার ফলে বর্তমানে জ্বালানি নিরাপত্তা হুমকির মুখে। জ্বালানি নিরাপত্তায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকল্প নেই। অপরদিকে আমাদের মনে রাখতে হবে জ্বালানি নিরাপত্তা দিতে গিয়ে যেন পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ গুলোর মধ্যে ৭০ শতাংশ দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানি। এ বিষয়ে সকল পর্যায়ে সচেতন হতে হবে।

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের উপ-পরিচালক মঞ্জু মারীয়া পালমা বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার এক অপরিহার্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার এগিয়ে আসা উচিত। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারের উৎস অনুসন্ধানে বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানসমূহ উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম বলে আমি বিশ্বাস করি। আলোচনায় উপস্থিত সকলের মতো আমিও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের আগামী প্রজন্ম নির্মল বায়ুতে শান্তিতে নিশ্বাস নিতে পারবে এবং আমাদের দেশ জ্বালানি নিরাপত্তার স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে বিবেচিত হবে।

ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এর নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা ও টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তার পাশাপাশি নির্মল বায়ু নিশ্চিত করতে নবায়নযোগ্য শক্তি প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। নির্মল বায়ু একটি মানবাধিকারের বিষয়। আমাদের শিশু ও তরুণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দ্রুত সরে আসতে হবে।

আর্থ সোসাইটি এর নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মাদ মামুন মিয়া বলেন, নির্মল বায়ু নবায়নযোগ্য জ্বালানি এখনকার সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যা কিনা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রধান পদক্ষেপ। এ বিষয়ে নীতি নির্ধারণী পর্যায়কে দায়িত্বশীল করার পাশাপাশি সবাইকে সচেতন করতে হবে।

বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ) এর সদস্য সচিব ও সেভ আওয়ার সি এর মহাসচিব মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক বলেন, প্রাণ প্রকৃতি রক্ষায় নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার অতি জরুরী। উপকূলীয় এলাকায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আমাদের পরিবেশের জন্য অত্যন্ত হুমকি। সামুদ্রিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও জ্বালানি নিরাপত্তায় বিশেষ নজর দিতে হবে।

ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউট এর মোহন কুমার দাস বলেন, বাংলাদেশ এখন দূষণ প্রবণ দেশ। আমাদের একটা দায়িত্বহীনতার সংস্কৃতি আছে, যেগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ব্যক্তি পর্যায়ে কিছু কাজ করা সম্ভব হলেও, রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে এর সঠিক ব্যবস্থাপনা দরকার।

বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. গুলশান আরা লতিফা গোলটেবিল বৈঠকটির আয়োজক সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে এই আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র লেকচারার মাহমুদা ইসলাম বলেন, বায়ুদূষণসহ অন্যান্য পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হল জীবাশ্ম জ্বালানি। আর এই জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প শুধু বিদ্যুৎ খাতে নয়, পরিবহন খাতেও নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার ঘটাতে হবে।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদা পারভীন বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যাবহারের না কমালে বায়ুমানের উন্নয়ন সম্ভব নয়। পরিবেশ একটি দূষণ অন্য সমস্যাগুলোকে বাড়িয়ে দেয়। বায়ুকল ও সোলার প্যানেলের মত প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার নির্মল বায়ু নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

উক্ত গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকামন্ডলী এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ, বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর গবেষকগণ এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের প্রতিনিধিগণ, বিএনসিএ, পরিবেশ উদ্যোগ, পিউর আর্থ, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ, ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউট, এবং সহ অন্যান্য পরিবেশবাদী সংস্থার সদস্যবৃন্দ।