জেল-জুলুম উপেক্ষা করে আন্দোলন সফল করতে হবে— মীর্জা ফখরুল

আপডেট: জানুয়ারি ২০, ২০২৩
0

জেল-জুলুম উপেক্ষা করে আন্দোলন সফল করার দৃঢ় প্রত্যায় ব্যক্ত করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার বিকালে বিএনপির আলোচনা সভায় দলের মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের জেগে উঠতে হবে। আমার মকবুল ভাই(ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত মকবুল হোসেন) যিনি ৭ ডিসেম্বর প্রাণ দিয়েছেন, আমার সেই নারায়নগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ভোলার ভাইয়েররা যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের রক্ত ছুঁয়ে শপথ নিয়েছি আমরা যে, আমরা বাংলাদেশকে একটা উদার রাষ্ট্র তৈরি না করে আমরা ঘরে ফিরবো না, বিজয় অর্জন না করার পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবো না।”

‘‘জেল-জুলুম যাই আসুক আমাদের সামনে আমরা সেইগুলো উপেক্ষা করে সামনে দিকে এগিয়ে যাবো। আজকের এই আমাদের নেতা জিয়াউর রহমানের জন্মদিনে আসুন আমরা সেই শপথ গ্রহন করি, আমরা শপথ গ্রহন করি আমরা যে ১০ দফা দাবি দিয়েছে সেই দাবি আমরা আদায় করব। আমরা অবশ্যই বাধ্য করব এই সরকারকে পদত্যাগ করতে এবং অবশ্যই সংসদ বিলুপ্ত করে নতুন কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমে আমরা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সেভাবে একটা জাতীয় নির্বাচন করতে বাধ্য করব।”

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আমরা কী আমাদের নেতার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা নিবেদন করছি? আমরা কী আমাদের শপথে অটুট আছি? আমরা কি আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব আমাদেরকে যে, বাংলাদেশকে ফিরে নিতে বলেছেন টেক ব্যাক বাংলাদেশ- আমরা কি সেই লক্ষ্যে স্থির আছি? আমরা কি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই? আমরা কি আমাদের বন্ধুরা এখনো কারাগারে রয়েছেন তাদের মুক্ত করতে চাই?”

‘‘ আসুন তাহলে আর কালক্ষেপন নয়, আমরা যে আবেগ নিয়ে, যে সাহস নিয়ে সামনের দিকে্ এগিয়ে চলেছি সেই সাহস নিয়ে আগামী দিনগুলোতে আমরা অবশ্যই জয়যুক্ত হবো এবং এদেরকে(আওয়ামী লীগ সরকার) পরাজিত করে এদেশে সত্যিকার অর্থে একটা মুক্ত গণতান্ত্রিক উদার রাষ্ট্র নির্মাণ করব-এই হোক আজকের শপথ।”

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এই আলোচনা আয়োজন করে বিএনপি।

সকালে শেরে বাংলা নগরে জিয়ার কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা জানান বিএনপি মহাসচিবসহ নেতা-কর্মীরা।

জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালন বিএনপি গত ১৭ জানুয়ারি থেকে ১০ দিন ব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

‘যেমন করে তারা আবারো ক্ষমতায় যেতে চায়’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আপনারা লক্ষ্য করেছেন এই সরকার তারা নির্বাচন না করে ২০১৪ সালে এবং ২০১৮ সালে তার আগের রাত্রে নির্বাচন করে জনগনকে পুরোপুরি প্রতারনা করে ক্ষমতায় বসে আছে। এখনো বসে আছে এবং যেমন করে হোক তারা আবারো ক্ষমতায় যেতে চায়। সেখানেই মানুষ জেগে উঠেছে।”

‘‘ জিয়াউর রহমানের আদর্শকে সামনে রেখে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে লড়াকু যে জীবন তাকে সামনে রেখে, তারেক রহমানের আদর্শকে সামনে রেখে মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। আমরা দেখছি যে, কিভাবে মানুষ এই সরকারের পতন চায়।”

‘বিজয় কীবোর্ড প্রসঙ্গে’

মির্জা ফখরুল বলেন, বলেন, ‘‘ এদের(সরকার) অপকীর্তির কথা বলে শেষ করা যায় না। আজকের পত্রিকায় দেখুন- বিজয় কী বোর্ড আত্মগোপন ও তার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন। আমাদের যে মোবাইল স্মার্ট সেট যেগুলো এই স্মার্ট সেটে বিজয় কীবোর্ডকে কম্বোলসারি(বাধ্যতামূলক) করা হচ্ছে। কারণ এই বিজয় কীবোর্ডের মালিকানা হচ্ছে মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের, যিনি তথ্য প্রযুক্তি তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী(ডাক, টেলিয়োগাযোগ তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী)।”

‘‘ কত বড় ভয়ংকর কথা। দুর্নীতি কি পরিমান হতে পারে? কখনই একজন মন্ত্রী নিজের কোম্পানিকে সরকারের কোনো লাভজনক কাজের মধ্যে জড়াতে পারে না এটাই হচ্ছে নিয়ম-নীতি-আইন। সেখানে তারা প্রকাশ্যে এই কাজটা করছে সরকারি ঘোষণা দিয়ে।”

‘নব্য আওয়ামী লীগাররা বিদেশে বাড়ি কিনছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ গতকাল টেলিভিশনে দেখলাম যে, বিদেশে বিশেষ করে লন্ডনেও সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশীরা বাড়ি কিনছে। এরা কারা? এরা হচ্ছে নব্য আওয়ামী লীগাররা যারা দেশের সম্পদ লুট করেছে তারা এসব বাড়ি কিনছে।”

‘‘ এখানেই বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগের পার্থক্যটা। সেখানেই জিয়াউর রহমান সাথে আওয়ামী লীগের পার্থক্যটা। জিয়াউর রহমান সাধারণ জীবনযাপন করতেন। আমার মনে আছে তার শাহাদাতের পরে যখন তার মরদেহ পুরনো সংসদ ভবন এখন যেটা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সেখানে লাশ নিয়ে আসা হলে জনসাধারণকে দেখানোর জন্য, স্রোতের মতো মানুষজন আসতে থাকলো তখন একটু দূরে দুইজন বিদেশে দাঁড়িয়ে দেখছেন তার কফিনের দিকে তাঁকিয়ে। আমি তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তোমরা তো বিদেশী। তোমরা কেনো এসেছো শ্রদ্ধা জানাতে। তারা বললেন, আমরা বিশ্বব্যাংকে কাজ করি। আমরা অনেক দেশের প্রধানমন্ত্রী দেখেছি, রাষ্ট্রপতি দেখেছি, সরকার প্রধান দেখেছি কিন্তু এরকম একজন সত প্রেসিডেন্ট আমরা কখনো দেখি নাই। এখানেই পার্থক্য।”

তিনি বলেন, ‘‘ সারাদেশের মানুষ জানে আপনারা(আওয়ামী সরকার) সম্পদ লুন্ঠন করছেন, সারাদেশের মানুষ জানে যে, আপনারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন। যাদের পায়ে চম্পল ছিলো না তারা এখন রোজগার্ড গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এটাই বাস্তবতা।”

‘‘ সেজন্য আমাদেরকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে আদর্শ সেই আদর্শকে সামনে নিয়ে এগুতে হবে। তার যে অসাধারণ সাহস, তার যে অসাধারণ প্রজ্ঞা, তার যে দূরদৃষ্টি সেই দূরদৃষ্টিকে সামনে নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের সুভাগ্য আমাদের নেতৃত্বে আছেন বেগম খালেদা জিয়া ও তার উত্তরসূরী তারেক রহমান।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘ এই আন্দোলনে যারা ভয় পাচ্ছেন তাদের নেতারা বলছেন, এমনকি গায়ের জোরের প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেছেন যে, বিএনপি আর গণতন্ত্র- এটা নাকী.. গণতন্ত্রের জন্য নাকী বিএনপি কথা বলতে পারে না।”

‘‘ অথচ এই আওয়ামী লীগ সেই ১৯৭৫ সালে বাকশাল করে গণতন্ত্র হত্যা করেছে, বর্তমানে দিনের ভোটে রাত্রে ডাকাতি করে এবং বয়কট নির্বাচনে তারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। শুধু জাতীয় নির্বাচন হয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থাকে তারা ধবংস করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র একসাথে যায় না, আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র সাংঘর্ষিক।”

বিএনপি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিদার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘জিয়াউর রহমানের কথা শুনলে এদেশের কিছু লোকের গাত্র দায় হয়। বিএনপির শক্তি এই দেশের জনগন। বিএনপির পক্ষে জনস্রোত দেখে আওয়ামী লীগ ও তাদের সরকারের এতো গাত্রদাহ যে তারা বিএনপিকে নিয়ে মিথ্যাচার করে, মিথ্যা বানোয়াট কথা বলে। আমি বলতে চাই, কোনো লাভ নেই।”

দলের প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, শাহজাহান ওমর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ বক্তব্য রাখেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মীর নাসির, আহমেদ আজম খান, এজডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।