ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ চলছে- সৈয়দপুরে রেলমন্ত্রী

আপডেট: নভেম্বর ১২, ২০২১
0

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ
ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্ক এর সাথে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ চলছে। এরই অংশ হিসেবে রেলপথ সম্প্রসারণ, স্টেসনগুলোর অবকাঠামো সংষ্কার, মিটারগেজ রুটকে সম্পূর্ণরুপে ব্রডগেজে রুপান্তর, সিঙ্গেল লাইন কে ডাবল লাইন করা, পার্ববতীপুরের লোকোমোটিভ কারখানা আধুনিকায়ন, সৈয়দপুরে আরেকটি ক্যারেজ (কোচ) কারখানা স্থাপন, যমুনায় দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মাণ, ভারত হয়ে আজারবাইজান থেকে শুরু করে ইউরোপ, মিয়ানমার হয়ে চীন দিয়ে রাশিয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়েকে যুক্ত করা হবে।

বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় রেলপথ মন্ত্রী এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন এমন মন্তব্য করেছেন। তিনি ১১ নভেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ৯ টায় সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন প্লাটফরমে আয়োজিত “যাত্রী সুবিধা বৃদ্ধির জন্য স্টেশন আধুনিকায়ন কাজের” উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন।

তিনি আরও বলেন, একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন উন্নত ও সম্প্রসারিত যাতায়াত ব্যবস্থা। রেলওয়ে এক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযোগী। তাই অবহেলিত রেলকে নতুন করে ঢেলে সাজানো, রেলওয়ের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনাসহ রেলকেন্দ্রীক সার্বিক উন্নয়ন ঘটাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ব্যাপক কার্যক্রম চলমান।

ইতোমধ্যে ৫৫ টি রেল স্টেশন আধুনিকায়ন করা হয়েছে। খুলনা থেকে মংলা নদীবন্দর, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেলপথ সম্প্রসারণ, চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেলরুট চালু করা হয়েছে। কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। যমুনায় দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

রেলমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের রেলপথ ও বড় বড় সেতুগুলো ধ্বংস করা হয়েছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর এগুলো পূণঃ সংস্কার করেন। কিন্ত ৭৫ পরবর্তী সামরিক শাসকরা ভ্রান্ত নীতির মাধ্যমে রেলকে ধ্বংসের দাঁড়প্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। যে কারনে রেলওয়ের ৭৮ হাজার জনবলের স্থলে এখন মাত্র ২৫ হাজার জনবল নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এই সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাটিই এখন মৃতপ্রায় অবস্থায়।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পিতার মতই রেলওয়েকে পূনরায় স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। তার নেতৃত্বে আজ রেলওয়ের নিজস্ব রাজস্ব থেকেই নানা উন্নয়ন করা হচ্ছে। উপমহাদেশের সবগুলো দেশই যেভাবে রেলওয়ের উন্নয়নের মাধ্যমে এগিয়ে গেছে। বর্তমান সরকারও সেভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে সচেষ্ট। তারই ধারাবাহিকতায় সৈয়দপুরে আরও একটি কোচ কারখানা গড়ে তোলার সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। যেখানে কোচ তৈরী করা হবে। পার্বতীপুর কেলোকা কে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। যাতে এখানেই ইঞ্জিল এসেম্বলিং করা যায়।

মন্ত্রী বলেন, সৈয়দপুর শহর রেলওয়ে কারখানাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। নানা দিক দিয়ে সৈয়দপুর অত্যন্ত উন্নত ও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখানে অধিকাংশ জমিই রেলওয়ের হওয়ায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন তথা শিল্প বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আশা করি দ্রুতই এ ব্যাপারে সমঝোতার মাধ্যমে একটি সুরাহা করা সম্ভব হবে। সৈয়দপুরে যারা বহুতল ভবন নির্মাণ করে ব্যবসা করছেন, তারা নিশ্চিন্তে থাকুন। তবে রেলওয়েকে বকেয়াসহ পাওনা মিটিয়ে যথাযথ নিয়মের মধ্যে আসুন।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময় রেলওয়েতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে রেলওয়ের পোষ্যদের জন্য ৪০ শতাংশ কোটা বহাল রয়েছে। আগামীতে আরও লোকবল নিয়োগ দেয়া হবে। এতে রেলওয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সর্বস্তরের লোকজনের সন্তানদের কর্মসংস্থান হবে। মন্ত্রী রেলওয়েকে আরও জনবান্ধব ও সুবিধাজনক যোগাযোগব্যবস্থায় পরিণত করতে সকলের সহযোগীতা প্রত্যাশা করেন।

এর আগে মন্ত্রী ষ্টেশনের পশ্চিম পার্শে প্রবেশ গেট সংলগ্ন আধুনিকায়ন কাজের উদ্বোধনী ভিত্তি ফলক উম্মোচন করেন। এসময় তার সাথে ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা, রেলওয়ের মহাপরিচালক ডি এন মজুমদার সহ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। মন্ত্রী রাত ৯ টায় রাজশাহী থেকে চিলাহাটিগামী এক্সপ্রেস ট্রেনে সংযুক্ত একটি বিশেষ কোচে সৈয়দপুরে এসে পৌঁছেন। পথে শান্তাহার, জয়পুরহাট, বিরামপুর, পার্বতীপুর স্টেশনেও অনুরূপ কার্যক্রমের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

সৈয়দপুরে তাঁদের স্বাগত জানান সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও রেলওয়ে শ্রমিকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোখছেদুল মোমিন। এসময় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে অতিথিবৃন্দ নীলফামারী ও ডোমার স্টেশনের অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং রাতেই সৈয়দপুর হয়ে রংপুরের উদ্দেশ্যে চলে যান। ব্যস্থতার কারণে অন্য আর কেউ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেননি।

মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও রেলওয়ে শ্রমিকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোখছেদুল মোমিন বলেন, মন্ত্রী রেলওয়েকে নিয়ে আওয়ামীলীগ সরকার তথা জননেত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী ও যুুুুগান্তকারী পদক্ষেপ ও এর সুফলসমুহ সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও অত্যন্তসহজবোধ্যভাবে তুলে ধরেছেন। সেইসাথে রেলওয়ে পরিবার তথা সৈয়দপুরবাসীর জন্য বেশ কিছু সুসংবাদ বার্তা দিয়েছেন। এজন্য তিনি মন্ত্রীর প্রতি কৃৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন।

একই অনুভূতি ব্যক্ত করে সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা রেলপোষ্য সোসাইটির সভাপতি লিমন সরকার সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম মানিক বলেন, কয়েকদিন আগে ঢাকায় সোসাইটির কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে মানববন্ধনের পর মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করে বিভিন্ন দাবী জানানো হয়। এর আলোকে আজ মন্ত্রী ৪০ শতাংশ পোষ্য কোটা বহালের আশ্বাস দেয়ায় কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি