তজুমদ্দিনে আওয়ামী নেতা কর্তৃক শিক্ষক ও সাংবাদিককের উপর হামলা

আপডেট: জুলাই ৩০, ২০২২
0

ভোলা জেলা প্রতিনিধিঃ

ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ফাজিল মাদ্রা সা’র সহকারী শিক্ষক ও সাংবাদিক মনির হোসাইনের উপর জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা মাঈনউদ্দিনের নেতৃত্বে আতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এতে আহত মনির হোসাইন জানান, সরকারী জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে শনিবার সকাল ১০ টায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলাকালে আমার নিজ মাদ্রাসা’র শিক্ষক মিলনায়তনে প্রবেশ করে আমার উপর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন পোদ্দারের ভাই মাইনদ্দিন এর নেতৃত্বে রাজিব চৌধুরী, লোকমান মুন্সি, শরিফ, ইকবাল আতর্কিত হামলা চালায়। ঘটনার বিষয়টি চাঁদপুর ফাজিল মাদ্রাসা’র অধ্যক্ষ তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমিকে জানালে তিনি থানায় অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দেন।

বর্তমানে ওই মাদ্রাসায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে অধ্যক্ষ জানিয়েছেন। চাঁদপুর ফাজিল মাদ্রাসা’র অধ্যক্ষ কামাল মাহমুদ হামলার ঘটনার সত‍্যতা স্বীকার করেন। শারীরিক লাঞ্চিত সহকারী শিক্ষক ও সাংবাদিক মনির হোসাইন আরও জানান, চাঁদপুর ফাজিল মাদ্রাসা’র সংলগ্ন আমার ব্যবসায়ীক লাইব্রেরি, কম্পিউটার ব্যবসা ৭ বছর যাবৎ চালু রয়েছে। গত ২১ মার্চ ২০২২ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লাল পতাকা দিয়ে জায়গা নির্ধারণও করেছিলেন কিন্তু বিধিবাম নির্দেশনা মানা তো হয়নি বরং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের ভাইকে ঘর দখল দেওয়ার জন‍্য বিভিন্ন দফতরে চলছে বিভিন্ন প্রক্রিয়া। এমনকি এক ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করার জন‍্য মারধর সহ দোকানে তালাও মেরেছে।

আমি দখলদার হিসাবে ১৯০৬ সনের সরকারী ভূমি নীতিমালা অনুযায়ী আমার নামের বিপরীতে ডিসিআর কাটার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব ভোলার কাছে আবেদন করার পর তিনি ১ নং বালাম ভুক্ত ভিটা দখলদারদের ১ বছরের জন‍্য খাজনা আদায় করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমিকে লিজ দেওয়ার নির্দেশের পর দখলদার ও অবৈধ ঘর দাবীদার পক্ষে চলছে স্নায়ু যুদ্ধ। তদন্তে সত্যতা পেয়ে দখলদারদের দোকানঘর সরিয়ে নেওয়ার জন্য নোটিশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী ভূমি কমিশনার (ভূমি) মরিয়ম বেগম । কিন্তু নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। ওই জমি মাপজোখ করে গত ২ মার্চ এসি ল্যান্ড বরাবর প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন সহকারী ভূমি কমিশনার কার্যালয়ের সার্ভেয়ার ফিরোজ আলম। তিনি লিখেছেন, শশীগঞ্জ মৌজার ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত (জেএল নম্বর-৪৭) ৪৪৮৪ ও ৪৪৬৫ দাগ নম্বরে ৫টি পক্ষ প্রায় ৮ দশমিক শূন্য ৫৭ শতাংশ জমি দখলে নিয়েছে। এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর ২১ মার্চ দখলদারদের জমির দখল ছেড়ে চলে যেতে নোটিশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মরিয়ম বেগম। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দখলের পেছনে কয়েকজন ব্যক্তি ও একটি মসজিদের নাম এসেছে। এর মধ্যে স্থানীয় নাছির উদ্দিন-খোকন মিঞা ও তাঁদের বোনদের দখলে আছে ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এ ছাড়া উত্তর মাথা জামে মসজিদ কমিটি ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ, রফিকুল ইসলাম শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ ও চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা ১ দশমিক ২৩ শতাংশ জমি দখল করেছেন। শশীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সেলিম তালুকদার বলেন, তিনি স্বাধীনতার আগ থেকে BR ভূমি কমিশনারের কার্যালয়ের প্রতিবেদনে সরকারি জমি দখলের পেছনে কয়েকজন ও একটি মসজিদের নাম এসেছে। শশীগঞ্জ বাজারের চাঁদপুর ফাজিল মাদ্রাসার সামনের পুকুরটি সরকারি খাস পুকুর নামে পরিচিত। যখন লাগাতার নদীর ভাঙন চলছিল, সে সময় এসব জমির কোনো দাম ছিল না, তখন যে যেমন পেরেছে দখল করেছে। সরকারী ভুমি রক্ষাকারী কেউ গুরুত্ব দেয়নি।

এখন ব্লক ফেলে মেঘনার ভাঙন থেকে রক্ষার কারণে জমির দাম হু হু করে বেড়েছে। বাজারের ভিটা হিসেবে ১ শতাংশ জমির দাম কম করে হলেও ১৫-২০ লাখ টাকা। সরেজমিনে দেখা যায়, শশীগঞ্জ বাজারের উত্তরাংশে চাঁদপুর ফাজিল মাদ্রাসা সড়কের দক্ষিণে ওই জমিতে মনির হোসাইন, মো. আজাদ, আবুল কালাম ও মো. মনির দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। জমি দখল করে এ চারটি দোকান গড়ে তুলেছেন নাছির উদ্দিন খোকন মিঞা ও তাঁর বোনেরা এছাড়া সরকারী দখলকৃত জমিতে ৬টি দোকান করে বাৎসরিক ২ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ভাড়া দিচ্ছে মসজিদ কমিটি।

নদী ভাঙ্গুলী চাঁদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা ও বসত ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন । তিনি বলেন, নদীতে তাঁর বাড়িঘর ভেঙে গেলে তিনি এখানে এসে উঠেছেন। জমিটুকু নিজের করে পেতে বন্দোবস্তের আবেদন করেছেন। তজুমদ্দিনের ইউএনও মরিয়ম বেগম বলেন, সরকারি জমি থেকে অবৈধ দখলদারদের সরে যেতে লিখিতভাবে বলা হয়েছে। সময়ও দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মামুন আল ফারুক বলেন, বাজারের মধ্যে উচ্ছেদ করতে গেলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। যাঁরা দখলে আছেন ও ব্যবসা করছেন, তাঁরা যদি রাজি হন, তাঁদের একসনা বন্দোবস্তের ডিসিআরের মাধ্যমে বৈধ মালিকানা দেওয়া যেতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমি মরিয়ম বেগম’র সাথে তার লিখিত আদেশ অমান্য করে স্থাপনা নির্মানের বিষয়ে তার মোবাইল ফোনে আলাপ করলে তিনি জানান, পুনরায় সরকারি ভূমি সার্ভেয়ার নির্ধারণ করে প্রতিবেদন না দেয়া পযর্ন্ত কোন লিজ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সামনের ভিটাগুলো রেকর্ডীয় সম্পত্তি। তাই নাছির খোকন মিয়ার বোনরা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের ভাইর কাছে ঘর ভাড়া দেয়ায় মনির হোসাইন কে ঘর খালি করার জন‍্য বলা হয়েছে।