”তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়ে ১৭৩ দিন হরতাল পালন করেছিল আ’ লীগ : পুড়িয়ে হত্যা করেছিলো ১১জনকে”

আপডেট: জানুয়ারি ২, ২০২২
0

এই সরকার আর একবারের জন্যও ক্ষমতায় আসুক বা থাকুক সেটা এদেশের জনগণ চায় না উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দলটির জন্ম থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সন্ত্রাস ছাড়া কোনো দিন টিকে থাকতে পারেনি।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়ে ১৭৩ দিন হরতাল পালন করেছিল আওয়ামী লীগ। তখন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সামনে তারা গান পাউডার দিয়ে বাস পুড়িয়ে দেয়। এই ঘটনায় ১১ জনকে হত্যা করেছিল তারা। এটা নতুন কোনো ব্যাপার না। সেই পাকিস্তান আমলে অ্যাসেম্বলির মধ্যে ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলীকে পিটিয়ে হত্যা করার মধ্য দিয়ে শুরু। তারপর সবকিছুর মধ্যে তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সব থেকে বড় হাতিয়ার।

সিরাজগঞ্জের জেলা সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে অভিযোগ করে রোববার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে বক্তব্যকালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জে বিএনপির জনসভা ভন্ডুল করার সংবাদ আপনারা নিশ্চয়ই জেনেছেন।

মাদার অব ডেমোক্রাসী বিএনপি‘র চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার অধিকারের দাবী এবং তাঁর মুক্তির দাবীতে দেশব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সিরাজগঞ্জে এই জনসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল।

শান্তিপূর্ণ ঐ জনসভাকে ভন্ডুল করার উদ্দেশ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ২/৩ দিন আগে থেকেই নিশিরাতের ভোটবিহীন এমপি রশিদী মিল্লাত মুন্নার বাড়ির ছাদে ও বাড়ীর নীচে, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের মাঠে ও অডিটোরিয়ামের ছাদে, রেলগেটে, গোশালায়, আলিয়া মাদ্রাসার ছাদে ও তৎসংলগ্ন মাঠে, বিপুল পরিমান লাঠিসোঁটা, পাথর, ককটেল, পেট্রোল বোমা ও দেশীয় অস্ত্র মজুদ করে।

জনসভাস্থলের ২০০ মিটার দূরে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ সংলগ্ন (পাঁচ) রাস্তা মসজিদের সামনে দুপুর ১ টার দিকে জনসভায় আগমনরত জনতার উপর সর্বপ্রথম জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সজল, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান ও সাবেক সভাপতি সাদির নেতৃত্বে প্রায় ১৫০ জন সন্ত্রাসী ২০/৩০ ককটেল, পেট্রোল বোমা, ২৫ টি ফালা, চাপাতি, রামদা, বাদবাকি অন্যরা পাথর ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।

প্রকাশ্য দিবালোকে একডালা মধ্যপাড়ার বায়েজিদ, দত্তবাড়ির সুজয়, কোল গয়লার সুমন ও কোলগয়লার জনি ৪ টি পিস্তল সহকারে প্রকাশ্য দিবালোকে হামলা চালায়। পিস্তলধারীদের হামলার দৃশ্য প্রায় সব টিভি মিডিয়ায় ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ছবি প্রকাশিত হয়েছে।

এসময় প্রথমেই কাজীপুর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক জুয়েল রানা চাপাতির কোপে আহত হয়।

উপস্থিত সিরাজগঞ্জের নির্যাতিত, নিপীড়িত জনতা ও আমাদের নেতা-কর্মীরা এসময় আত্মরক্ষার্থে খালি হাতেই প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

দুপুর ১ টা থেকে বিকাল 5:৩০ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দফায় দফায় হামলা করলেও প্রায় ৬ ঘন্টাব্যাপী চলা এই সংঘর্ষে জনতার প্রবল প্রতিরোধের মুখে সন্ত্রাসীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।

দফায় দফায় এত হামলার পরেও একদিকে প্রতিরোধ সংগ্রাম চলেছে, অন্যদিকে পাশেই লক্ষ্যাধিক জনতার সমাবেশ শান্তিপূর্ণ ও সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

নবদীপ পুলঃ

কলেজ রোডে জনতার প্রতিরোধে ছাত্রলীগ, যুবলীগ টিকতে না পেরে ও ধাওয়া খেয়ে যুবলীগের প্রাক্তন সভাপতি হাকিম ও বর্তমান সভাপতি জুয়েলের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা দত্তবাড়ি আলিয়া মাদ্রাসার সামনের ব্রীজ দিয়ে নবদ্বীপ পুল হয়ে বিএনপি অফিস পুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এসময় সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ থাকায় জনতার একাংশ আশেপাশের রাস্তায় অবস্থান নেয়, তারা প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এ সংঘর্ষ বিকাল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত চলমান থাকে। এসময় আমাদের ৫০ নেতা-কর্মী আহত হয়। অতঃপর পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে।

গোশালা+ রেলগেটঃ

পরাজয়ের জ্বালা সইতে না পেরে, গোশালা থেকে শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি দানি ও সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন (মলম) ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি খোকার নেতৃত্বে ৭০ জন অস্ত্রসহ মহড়া দিতে দিতে রেলগেটে অবস্থান নেয়।

সেখানে তাদের সাথে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ, আওয়ামী লীগ নেতা শাহাদতসহ আরও ৪০ জন যোগ দেয়। এরা একসাথে সমাবেশ ফেরত জনতার উপর হামলা করে মোবাইল, সোনার চেইন, টাকাপয়সা, ঘড়ি ছিনতাই করে। অসংখ্য জনতা এসময় আহত হয়।

এসময় শাহজাদপুর থেকে আগত ৬ টি বাস, চৌহালীর ২ টি বাস, এনায়েতপুরের ২ টি বাস ভাংচুর করে। শাহজাদপুরের প্রায় ৪৫ নেতা-কর্মী আহত হয়।

পরাজয়ের আক্রোশে এসময় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সাধারণ মানুষের রিকশা, ইজিবাইক, দোকানপাট ভাংচুর করে। খবর পেয়ে আমাদের নেতা-কর্মীরা জনতাকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে তীব্র সংঘর্ষ চলে ২ ঘন্টা ব্যাপী। পরে র‌্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বেলকুচি থেকে জনসভায় আসার পথে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ৪ টি বাস ভাংচুর করে এবং ২০ জন আহত।

গত 31 ডিসেম্বর বিকালে পুলিশ বাদী হয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি ও অংগ/ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নামে 4টি মিথ্যা মামলা দায়ের করে এবং বিকালেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ডিবি পুলিশ তল্লাসীসহ পরিবার পরিজনের সাথে খারাপ আচরণ করে। অন্য দিকে জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান রনজুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। আমরা অবিলম্বে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি ও অঙ্গ/সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নামে দায়েরকৃত হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, হয়রানী বন্ধসহ গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের নিঃশত মুক্তির আহ্বান জানাই।