দক্ষিণ এশিয়ার চলমান রাজনৈতিক সংকটে উদ্বিগ্ন ব্রিটিশ লর্ড

আপডেট: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩
0

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশে বল পূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের ঠিকানাসহ নামের তালিকা ব্যক্তিগতভাবে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরে উত্থাপন করা হবে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন “ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটি অ্যালায়েন্স” ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সে “দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রিটিশ কৌশলগত স্বার্থ এবং অসহিষ্ণু নীতির উত্থান, গণতন্ত্রের অবনতি এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার উদ্বেগ” শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে এমন আশ্বাস দেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের লর্ড কোরবান হোসেন।
সোমবার ব্রিটিশ পার্লিয়ামেন্টের হাউস অফ কমন্সে অনুষ্ঠিত ওই সেমিনারটির আয়োজক ও সভাপতিত্ব করেন সারা ব্রেটক্লিফ এমপি এবং সহ-সভাপতি ছিলেন এন্ড্রো স্টিফেনসন এমপি।
বার্নলির প্রাক্তন কাউন্সিলর সংগঠনটির উপদেষ্টা মোজাক্কের আলীর পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিবিসিএ-এর সেক্রেটারি ফয়জুন নূর এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির সভাপতি ব্যারিস্টার আফজাল জামী সাইয়েদ আলী।
সেমিনারের প্রেক্ষাপট উপস্থাপনায় ব্যারিস্টার আফজাল জামি সায়েদ আলী, সাপ্তাহিক সুরমা পত্রিকার সম্পাদক শামসুল আলম লিটন এবং কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির ডেটা সায়েন্সের অধ্যাপক ডঃ ইমতিয়াজ খান, মেজর অবঃ আবু বকর ছিদ্দিক দক্ষিণ এশীয় উপ-মহাদেশের জন্য উদ্বেগজনক দেশ সম্পর্কিত বিষয়গুলি উপস্থাপন করেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্বাস ফয়েজ এবং অ্যাডভোকেট রেহানা আলী তাদের বক্তব্যে যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করেন, কীভাবে দক্ষিণ এশিয়ার গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি ব্রিটেনে সামাজিক সংহতি এবং নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে। লর্ড কুরবান হুসেন এবং আপসানা বেগম এমপি অভিমত ব্যক্ত করেন যে ব্রিটেনের আর্থিক বিনিয়োগ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় সুশাসন, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র পূর্বশর্ত হওয়া উচিত।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিনিয়োগ, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং গণতন্ত্র নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা বিষয়ে বৃটেনের কৌশলগত ভূমিকা আরও বাড়ানো উচিত।
কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্রিটেনের ভূমিকা নিয়ে সেমিনারে উপস্থিত অনেকের কাছ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ব্রিটিশ সরকারের পরিকল্পনা কী ? প্রশ্নোত্তর পর্বে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ইকুয়াল রাইটস ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারী জেনারেল নওশীন মোস্তারী মিয়া সাহেবের করা এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রিটেনের ট্রেজারার বিভাগের লর্ড কমিশনার স্টিফেনসন এমপি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ব্রিটিশ সরকারের নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল বাংলদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।
লর্ড কুরবান হোসেন বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর সাথে তার সম্পৃক্ততার স্মৃতি চারণ করে বলেন, ইলিয়াস আলীর মতো দেশপ্রেমিক নেতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে দ্বিতীয় আর কাউকে দেখা যায়নি । তিনি বলেন ইলিয়াস আলীর মতো যারা বলপূর্বক গুমের শিকার হয়েছে সে সব ব্যক্তিদের ঠিকানাসহ নামের তালিকা পেলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সে তালিকা পররাষ্ট্র দফতরের কাছে নিয়ে যাবেন।
বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের বিষয়ে বৃটেনের পার্লামেন্টে একটি আইন পাস হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে এন্ড্রিউ স্টিফেনসন এমপি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে থেকে যারা বৃটেনে অর্থ পাচার করছে তাদের বিষয়ে ইকোনমিক ক্রাইম (ট্রান্সফারেন্সি এন্ড এনফোর্সমেন্ট) ২০২২ অ্যাক্ট নিয়ে পার্লামেন্ট বিতর্ক চলছে এবং এ নিয়ে একটি আইন পাস করা হবে।
বিশেষ করে অ্যান্ড্রু স্টিফেনসন এমপি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের উচিত তাদের স্থানীয় সংসদ সদস্যদের কাছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করতে।
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী ডক্টর আব্দুল মঈন খান সেমিনারে একটি প্রাক-রেকর্ড করা বক্তৃতা পাঠিয়েছিলেন। যেখানে তিনি সরাসরি যুক্তরাজ্যের নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধারে যুক্তরাজ্যের আরও দৃঢ় এবং গঠনমূলক ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, বিবিসিই প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশি জনগণের দুর্ভোগ প্রকাশ করতে শুরু করেছিল এবং পরিস্থিতি এখন কম ভয়াবহ নয়।
ব্রিটিশ সংসদ সদস্যরা এবং লর্ড একটি বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক এবং যাচাইযোগ্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক উত্তরণ দেখতে যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে একটি স্পষ্ট এবং দ্ব্যর্থহীন অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
উক্ত সেমিনারে এ অভিমতও ব্যক্ত করা হয়েছে যে আপাতদৃষ্টিতে অন্তহীন রোহিঙ্গা সঙ্কট আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য একটি সম্ভাব্য গুরুতর উদ্বেগ হিসেবে থাকবে যা অবশ্যই তার উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।

সেমিনারে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অবক্ষয়, বর্তমান পরিস্থিতি, কাশ্মীরের অধিকার সংক্রান্ত সংকট এবং জনসাধারণের প্রতি সরকারী কর্মকর্তাদের অসহিষ্ণু আচরণ এবং সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে ভারতের নীতি নির্ধারণের কথাও উল্লেখ করে হিন্দুত্ববাদের নামে ধর্মীয় উগ্রতার জন্যে ভারত সরকারের নানান সমালোচনা করা হয় হয়েছে।
প্রশ্নোত্তর পর্বে আরো অংশ নেন ফাইট ফর রাইটস ইন্টারন্যাশনাল সভাপতি মোঃ রায়হান উদ্দিন, ফাইট ফর রাইটস ইন্টারন্যাশনাল এর সহকারী সম্পাদক কামরুল হাসান রাকিব, মোঃ আমিনুল ইসলাম সফর, মোঃ ইকবাল হুসেন, নিরাপদ বাংলাদেশ চাই’র সভাপতি মুসলিম খান, আসাদুল হক,আলী হোসাইন, সাংবাদিক মোঃ অহিদুজ্জামান, ইন্টারন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফোরামের সিনিয়র জয়েন্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ এবাদুর রহমান রাজন।
বাংলাদেশী কমিউনিটির রাজনৈতিক ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আশিকুর রহমান আশিক, আজিজুস সামাদ,আজিজুস সামাদ, মোঃ শরীফ উদ্দিন, আব্দুল আওয়াল মামুন,মোর্শেদ আহমদ খান,আব্দুল আওয়াল মামুন,মোহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ, মাহমুদ হোসাইন,মোঃ জাকির হোসেন,মোঃ কবির উদ্দিন প্রমুখ।