প্রথমবারের মতো ২৩ শিল্প প্রতিষ্ঠান ,উদ্যোক্তাকে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার ২০২০’ দেয়া হবে –সংবাদ সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী

আপডেট: অক্টোবর ২৭, ২০২১
0

প্রথমবারের মতো দুই ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে ২৩টি প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার ২০২০’ দেয়া হচ্ছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার ২০২০’ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান।

শিল্পমন্ত্রী বলেন , ”২৮ অক্টোবর ২০২১ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নির্বাচিত শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার ২০২০’ প্রদান করা হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্মরণে এবং শিল্প উদ্যোক্তা/প্রতিষ্ঠানকে শিল্পখাতের অবদানের স্বীকৃতি প্রদান, প্রণোদনা সৃষ্টি ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এবছর প্রথমবারের মত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার ২০২০ প্রদান করা হচ্ছে।”

মন্ত্রী নুরুল মজিদ বলেন , ”শিল্পসমৃদ্ধ উন্নত দেশ বিনির্মাণের জন্য বেসরকারি খাতে শিল্প স্থাপন, রপ্তানি ও আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে ভূমিকা রাখাসহ দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বেসরকারি খাতের অবদানকে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ পুরস্কার প্রদানের অন্যতম লক্ষ্য হল বঙ্গবন্ধুর শিল্প পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশে শিল্পায়নের যে সূচনা হয়েছিল সে অবদানকে স্মরণীয় ও বরণীয় করা এবং বাংলাদেশের শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে শিল্পায়নের ক্রমবিকাশকে টেকসই করা।

পাশাপাশি বেসরকারি খাতে পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিনিয়োগ উৎসাহিত করাসহ পণ্য বহুমুখীকরণ, আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিতকরণের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী প্রযুক্তি নির্ভর ও মান সম্মত পণ্য উৎপাদন করে দেশীয় চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি বৃদ্ধি করার জন্য উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে এ পুরস্কার প্রবর্তন দেশে শিল্পায়নের অভিযাত্রায় আরও সৃজনশীল উদ্যোক্তা তৈরী ও বিকাশে সহায়ক হবে।

বঙ্গবন্ধুর শিল্প পরিকল্পনা ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে শিল্পায়নের যে স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়েছিল সেই স্বপ্নের সোনালি পথ ধরে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এঁর দৃঢ় নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনায় দেশে বহুমুখী শিল্পায়নের ধারা জোরদার এবং বেসরকারি খাতে দক্ষতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার অনন্য ভূমিকা রাখবে মর্মে শিল্প মন্ত্রণালয় মনে করে। এ পুরস্কার প্রদানের লক্ষ্য হচ্ছে, শিল্প উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর অবদানকে স্মরণ করা। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দেয়া এবং সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের শিল্পায়নের বিকাশকে দ্রুততর করতে বেসরকারিখাতকে উৎসাহিত করা।

বেসরকারিখাতে শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিনিয়োগ উৎসাহিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে এ পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে। এটি আলোকিত শিল্প উদ্যোক্তাদেরকে পণ্য বহুমুখীকরণ, আমদানিবিকল্প পণ্য উৎপাদন ও শিল্পখাতে সৃজনশীলতার বিকাশে উৎসাহিত করবে। এছাড়া, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য উৎপাদন, বাজার ব্যবস্থাপনা, রপ্তানি বৃদ্ধি, সর্বোপরি Total Quality Management সম্পর্কে উদ্যোক্তাদের উৎসাহ প্রদান, পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপন, ‌শিল্প-কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের নকশা (Design), কৌশল (Technique) ও উপস্থাপনার (Display) ক্ষেত্রে অনন্য ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য প্রদর্শনে অনুপ্রেরণা যোগান, শিল্পে উৎপাদিত পণ্য নান্দনিক (Aesthetic), শৈল্পিক (Artistic), শোভাবর্ধক (Decorative), ব্যবহারিক (Functinoal)

ঐতিহ্যবাহী (Traditional) এবং উপযোগিতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শিল্প উদ্যোক্তা নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিল্পখাতে তাঁর সামগ্রিক অবদানকে বিবেচনা করা হবে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বার্ষিক টার্ণওভার, আমদানি হ্রাস, আমদানিবিকল্প পণ্য উৎপাদন, স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, সামাজিক দায়িত্ব পালন, নিষ্কন্টক ভূমি ও ভূমির পরিকল্পিত ও দক্ষ ব্যবহার, পরিবেশ সংরক্ষণ প্রভৃতি ক্ষেত্রের অবদান বিবেচনা করা হবে। পরলোকগত শিল্প উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে মরণোত্তর পুরস্কারও দেয়া হবে।

পুরস্কারের জন্য শিল্প উদ্যোক্তা/শিল্প প্রতিষ্ঠান মনোনয়নে কয়েকটি নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ আবশ্যক। এর মধ্যে শিল্প উদ্যোক্তা/শিল্প প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে স্থাপিত হতে হবে। শিল্প ক্ষেত্রে আবেদনকারী শিল্পপতি/উদ্যোক্তার সামগ্রিক অবদান সন্তোষজনক হতে হবে ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা পূরণ বা আমদানিবিকল্প বা রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কার্যকর অবদান রাখতে হবে।

এছাড়া, নিয়মিত কর পরিশোধ করতে হবে। কোনো ফৌজদারি অপরাধের জন্য কোনো ট্রাইব্যুনাল বা আদালত কর্তৃক ৬ মাস বা তদধিক সময়ের জন্য কোনো উদ্যোক্তা/শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিককে দন্ডিত করলে এবং দন্ডভোগের পর ন্যূনতম ২ বছর সময় অতিক্রান্ত না হলে কিংবা তার বিরুদ্ধে কোনো ট্রাইব্যুনাল বা আদালতে উক্তরূপ কোনো মামলা চলমান থাকলে, সেই শিল্প উদ্যোক্তা/ শিল্প প্রতিষ্ঠান মনোনয়নের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না।

এছাড়া, ঋণ খেলাপি, সরকারি বিল খেলাপি, কর খেলাপি, অর্থ পাচারকারী, সরকারি জায়গায় অবৈধ দখলদার ও পরিবেশ দূষণকারী শিল্প উদ্যোক্তা/শিল্প প্রতিষ্ঠানও এই সম্মানজনক পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবে না। উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে কোনো প্রতিষ্ঠান একবার পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হলে, একই ক্যাটাগরিতে পরবর্তী ০৩(তিন) বছরের জন্য তাঁর আবেদন বিবেচনা করা হবে না।

শিল্প ক্ষেত্রে অবদান সাপেক্ষে (১) বৃহৎ শিল্প (২) মাঝারি শিল্প (৩) ক্ষুদ্র শিল্প (৪) মাইক্রো শিল্প (৫) হাইটেক শিল্প (৬) হস্ত ও কারু শিল্প এবং (৭) কুটির শিল্পের সাথে জড়িত নির্বাচিত শিল্প উদ্যোক্তা বা শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার প্রদান করা হবে। বিদ্যমান জাতীয় শিল্পনীতিতে বর্ণিত শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী মোট সাত ক্যাটাগরির শিল্পের প্রতিটিতে তিন জন করে মোট ২১ জন শিল্প উদ্যোক্তা/প্রতিষ্ঠানকে প্রতিবছর (০১ জুলাই-৩০ জুন সময়ের জন্য) এ পুরস্কার প্রদান করা হবে। এ বছর দুইটি ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে দু’টি করে প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হওয়ায় মোট ২৩টি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে ০৪টি, মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে ০৪টি, ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে ০৩টি, মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে ০৩টি, হাইটেক শিল্প ক্যাটাগরিতে ০৩টি, হস্ত ও কারু শিল্প ক্যাটাগরিতে ০৩টি এবং কুটির শিল্প ক্যাটাগরিতে ০৩টি।

১ম পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে ৩ লাখ টাকা ও ২৫ গ্রাম স্বর্ণখচিত ক্রেস্ট, ২য় পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে ২ লাখ টাকা ও ২০ গ্রাম স্বর্ণখচিত ক্রেস্ট এবং ৩য় পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা ও ১৫ গ্রাম স্বর্ণখচিত ক্রেস্ট দেয়া হবে। স্বর্ণের ক্রেস্টগুলো ১৮ ক্যারেট মানের স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত। ক্রেস্টগুলো ইতোমধ্যে তৈরি করে বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশন কর্তৃক স্বর্ণের মান যাচাই করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা হয়েছে। এছাড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সকলকেই সম্মাননাপত্র প্রদান করা হবে।

শিল্পমন্ত্রী বলেন , যে কোনো ইভেন্টের ইতিবাচক প্রচারে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি আশা করি, আপনারা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার ২০২০’ প্রদান অনুষ্ঠানের প্রচারেও সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে যাবেন। ইতিপূর্বে আপনারা তৃণমূল পর্যায়ের অনেক অজানা উদ্যোক্তার সাফল্যগাঁথা গণমাধ্যমে তুলে ধরেছেন। এর ফলে এসব উদ্যোক্তা যেমন অনুপ্রাণিত হয়েছেন, তেমনি তাঁদের সাফল্যে উজ্জীবিত হয়ে দেশে আরও অনেক নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। এটি জ্ঞানভিত্তিক শিল্পায়নের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করছে।