দুই লাখ ইভিএম কেনা নিয়ে নির্বাচন কমিশন জাতির সঙ্গে মস্করা করছে –মীর্জা ফখরুল

আপডেট: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২
0

আরো দুই লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন(ইভিএম) কেনার নির্বাচন কমিশনের প্রকল্প ‘জাতির সঙ্গে মস্করা’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ আপনা্রা দেখেন যে, কী রকম মস্তকরা হচ্ছে জাতির সঙ্গে। যেখানে মানুষ নির্বাচন চাচ্ছে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হোক, যেখানে ইলেকশন কমিশনকে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল বলেছে যে, আমরা ইভিএম চাই না। প্রায় সবগুলো, একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া।”

‘‘ সেখানে তারা( ইসি) আজকে এক‘শ পঞ্চাশটি আসনের জন্য আরো ইভিএম মেশিন কেনার জন্য ৮ হাজার কোটি ৭১১ কোটি টাকা চেয়েছে। মগের মল্লুক। কারণ এদেশে তো কোনো জবাবদিহি করতে হয় না।”

সোমবার নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে আরো ২ লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন(ইভিএম) কেনার জন্য ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। সরকারের অনুমোদনের জন্য এই প্রকল্প এখন পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ কয়েকদিন আগে ক্যাবিনেট সেক্রেটারি প্ল্যানিং কমিশনের মিটিংয়ে খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, যে এখানে বেশির ভাগ যে প্রজেক্ট তৈরি করা হয় সেই প্রজেক্ট তৈরি করা হয় চুরির জন্য এবং দেখা যায় যে বিশাল ফারাক বাস্তবতার সঙ্গে।এখানে কোনো পর্যালোচনা পর্যন্তও করা হয়, এখানে মধ্য রাতে ঋণ চুক্তি করা হয়। এই হচ্ছে সার্বিক অবস্থা।”

‘‘ আসলে তো কোনে সরকার নাই। দেয়ার ইজ নো গর্ভানেন্স। এরকম একটা ভয়াবহ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে এই আওয়ামী লীগ দেশটাকে। যেটা আমরা জীবনে কোনো দিন … নজরুল ভাই বসে আছেন, আমরা বসে আছি এই দেশটার স্বাধীনতার সংগ্রামের সাথে আমাদের একটা সম্পর্ক আছে। আমরা কোনোদিন কল্পনাও করি নাই, চিন্তুাও করি নাই যে, এই দেশ আমাদেরকে একদিন দেখতে হবে।”

‘পুলিশ তথ্য সংগ্রহের নামে হয়রানি করছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পুলিশ বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করার নামে হয়রানি করছে এবং দেশে বিরাজমান পরিস্থিতিকে আরো আতঙ্কগ্রস্থ করে তুলেছে। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ রাজনৈতিক কর্মীদের একজনের কাছ থেকে অন্যজনের তথ্য সংগ্রহেও লিপ্ত রয়েছে। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনসমূহের কমিটির তালিকাও তারা সংগ্রহ করছে।”

‘‘ পুলিশের এই ধরনের কর্মকান্ড সংবিধান, ফৌজদারি কার্যবিধি, পুলিশ আইন বা পুলিশ বিধি কিংবা অন্য কোনো আইন দ্বারা কোনোভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। এটা একদিকে যেমন নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুন্ন করছে অন্যদিকে তেমনি নাগরিকের আইনি অধিকার ভোগ করা ও তার ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ বলে প্রতীয়মান হয় যা সংবিধানের ৩১, ৩২ ও ৪৩ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”

ফৌজদারি কার্যবিধির যেসব ধারায় পুলিশ কর্তৃক নাগরিকের সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়গুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘ চলমান অবস্থায় এটা দৃশত: প্রতীয়মান হয় যে, পুলিশ বিএনপিসহ ভিন্নমতালম্বীদের দমনের উদ্দেশ্যে তাদের গণহারে শুধু নাম ঠিকানা নয়, তাদের পেশা, সন্তান-সম্পত্তির বিবরণসহ চৌদ্দ গোষ্ঠির যাবতীয় বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে ‍যা দেশের বিরাজমান আতঙ্কের পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলেছে।”

‘‘ বিএনপি এই অবস্থার অবসান চায়। আমরা পুলিশ কর্তৃপক্ষকে আহবান জানাচ্ছি, এভাবে সাধারণ নাগরিক, রাজনৈতিক কর্মীদের হয়রানি বন্ধ করে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য তারা তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবেন।”

ফখরুল বলেন, ‘‘ এটা তাদের একটা চলমান প্রক্রিয়া ভীতি প্রদর্শনের। যখনই বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা আন্দোলন শুরু হয় তখন পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই বিষয়গুলো জানতে চায়। আমার বাসায় আগেও এসছিলো, আবার এসেছে। আমি তাদের বলেছি যে, কোনো চিঠি আছে এই যে তথ্য জানতে চান। তখন তারা বলে না স্যার…।”

‘‘ এটা তাদের করার কোনো সাংবিধানিক ক্ষমতা নাই। সেখানে তারা শুধুশুধি মানুষকে হয়রানি করার জন্য, আন্দোলনকে দমন করার জন্য একটা কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে। আমরা এটা নিন্দা জানাচ্ছি এবং এথেকে বিরত থাকার আহবান জানাচ্ছি।”

জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আন্দোলনে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় পুলিশ এহেন কর্মকান্ড শুরু করেছে বলে মনে করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ গতকালও তিনি বলেছেন, আমরা কী আঙ্গুল মুখে দিয়ে চুসবো। সুতরাং তিনি যে বলছেন হামলা না করবে। এটা প্রতারনা করা। এই কথা হচ্ছে মানুষকে প্রতারনা করা, মানুষকে ভুল বুঝানোর চেষ্টা করা যে, না আমরা খুব ভালো, আমরা সবাই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সহযোগিতা করছি।”

‘‘ গণমাধ্যমে সামনে তারা একরকম কথা বলে আর কাজ করে আরেক রকম। গণমাধ্যমের সামনে ভালো ভালো কথা বলে। পুলিশের কাছে আমরা মামলা করলে সেটা খারিজ হয়ে যায়। পল্লবীতে হামলার ঘটনায় আমরা যে মামলার আবেদন করেছি সেটা খারিজ করে দেয়া হয়েছে। আর আমাদের ছেলেদের বিরুদ্ধে তারা(আওয়ামী লীগ) যে মামলা করেছে ওটার আবার তদন্ত শুরু হয়েছে। ৩৯টা মামলার বিচার শুরু হয়েছে। ”

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘ এখন আন্দোলন যত বিস্তৃত হচ্ছে, ওদের(পুলিশ) খোঁজ-খবর নেওয়াও এখন বিস্তৃত হচ্ছে। এখন ওয়ার্ড পর্যন্ত, জেলা-উপজেলা পর্যন্ত সব নেতা-কর্মীদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছে তারা। মুশকিলটা হচ্ছে যে, একবার নিলে তো একটা কথা। ভয় দেখানোর জন্য বার বার ওরা তথ্য নিচ্ছে।”

‘‘ ওরা আমরা এলাকা থেকে ফোন করে আমাকে । স্যার আমি ওমুক প্রতিষ্ঠানের-একটু কিছু তথ্য দরকার। কী তথ্য? আপনার বাবার নাম কি, কতদূর লেখা পড়া করছেন, কোথায় লেখাপড়া করছেন, কবে কোথায় চাকুরি করছেন, কবে রাজনীতিতে আসলেন, আপনার ভাই-বোন কয়জন তারা কে কি করে ইত্যাদি আরো কত কি? আল্লাহ বাঁচাইছে- যে বিয়ে করছি কৈ- এটা জিজ্ঞাসা করে নাই। অবস্থাটা এই পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে তারা।”

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুসহ তার সহধর্মিনীর ওপর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, এভাবে সিনিয়র নেতাদের ওপর হামলা ও বুলু ও তার স্ত্রীর ওপর যেভাবে মারপিঠ করা হয়েছে তা কল্পনাতীত। অথচ এখন পর্যন্ত সেখানে কা্উকেই গ্রেফতার করা হয়নি, একটা মামলাও করা হয়নি। এটা রাষ্ট্রের জন্য অসন্মানজনক হয়ে যাচ্ছে।”