দেশবাসী দাসত্ব ও মৃত্যুপুরীর মধ্যে বসবাস করছে : রিজভী

আপডেট: ডিসেম্বর ২৪, ২০২১
0

কক্সবাজারে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে বেড়াতে আসা গৃহবধূকে দলবেঁধে শ্লীলতাহানির ঘটনা বর্তমান দুঃশাসনের একটি চালচিত্র বলে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এ ঘটনা শুধু মর্মান্তিকই নয়, দেশবাসীকে বেদনাহত ও আতঙ্কিত করে তুলেছে। দেশবাসী যেন অন্ধকার, দাসত্ব ও মৃত্যুপুরীর আবহের মধ্যে বসবাস করছে।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন , ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে এ অগ্নিকান্ডে দগ্ধ হয়েছেন বহু যাত্রী। নিহতের সংখ্যা ৩৬ এর বেশী হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগুনে দগ্ধ অসংখ্য আহতরা হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। এই মর্মান্তিক ঘটনা হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী। আমাদের শোক জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
পোড়া ওই লঞ্চ থেকে এ পর্যন্ত ৩৬ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। ৯০ জনকে দগ্ধ ও আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সারা জাতি এই বেদনার্ত ঘটনায় বিমূঢ় ও শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। বিনা ভোটে জবাবদিহিহীন সরকারের কারণেই সারাদেশে সর্বত্র অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা রাজত্ব করছে। জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয় না বলেই সড়ক ও নৌপথসহ সকল জনপথেই নৈরাজ্য বিরাজ করছে। চারশো যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করা লঞ্চটি অগ্নিকান্ডের সময় হাজার খানেক যাত্রী অবস্থান করছিল, এটি কিভাবে সম্ভব ? নৌ-পরিবহনে দুর্বৃত্তদের দাপট বলেই কোন নিয়ম-শৃঙ্খলাকেই তোয়াক্কা করা হয় না। আর সে কারণেই জীবন দিতে হচ্ছে নিরীহ যাত্রীদের। এই অগ্নিকান্ডে হৃদয়স্পর্শী ঘটনা দুঃশাসনেরই প্রতিফলন। সর্বত্র সরকারী দলের দৌরাত্বের কারণেই সাধারণ মানুষের জীবনহানীসহ প্রচন্ড জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ হত্যার বীরত্বে আওয়ামী সরকার দারুন উল্লসিত। গতরাতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করছি। অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহতদের সুস্থতা কামনা করছি।

জ¦ালানী তেলের দাম বৃদ্ধির পর সরকার আবারো বিদ্যূৎ, গ্যাস ও সারের দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা শুরু করেছে। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে। গত ১২ বছরে বিদ্যূতের দাম বর্তমান অবৈধ সরকার ১০ বার বৃদ্ধি করেছে। এখন পুনরায় বৃদ্ধি হলে ১১ বার বিদ্যূতের দাম বৃদ্ধি করা হবে। গত ১২ বছরে ১১৮ ভাগ বিদ্যূতের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যূৎ, গ্যাস ও সারের এই দাম বৃদ্ধির উদ্দেশ্য অশুভ। এর বিরুপ প্রতিক্রিয়া হবে শিল্প, কৃষি ও সাধারণ মানুষের গৃহস্থালী কাজে। মূল্যস্ফীতির মাত্রা তীব্র রুপ ধারণ করবে। ক্ষমতাসীনদের আত্মীয়স্বজনদের গড়া কুইক রেন্টাল বিদ্যূৎ কেন্দ্রের জন্য জনগণের টাকা লোপাট করে ভর্তূতির জন্য বারবার দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে বৃদ্ধি করা হয়েছে গ্যাস ও পানির দাম। এর মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা থেকে অনেক দুরে সরে গেছে। এখন মধ্যম ও নি¤œ আয়ের মানুষদের সংসারের ব্যয় নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারের প্রস্তাবিত বিদ্যূৎ, সার ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির উদ্দেশ্য হচ্ছে-জনগণকে নিঃশেষ করে দেয়া। আপনারা জানেন যে, কয়েকদিন আগে জ¦ালানী তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে, অথচ বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ক্রমাগতভাবে কমে এসেছে। এখন দেশে বিদ্যূৎ, গ্যাস ও সারের দাম বৃদ্ধির যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা হলে মানুষের জীবন-যন্ত্রণা তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। দেশের অর্থনীতিতে পড়বে নেতিবাচক প্রভাব। এমনিতেই করোনার অভিঘাতে কর্মসংস্থান বন্ধ হওয়ার উপক্রম, বেকারত্ব ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। জনগণের টাকা হরিলুট করতেই বিদ্যূৎ, গ্যাস ও সারের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে সরকার। সঞ্চয় ও ভোগ কাঠামোতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে বিদ্যূৎ, গ্যাস ও সারের দাম বৃদ্ধির প্রস্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এধরণের গণবিরোধী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহবান জানাচ্ছি।

বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী’র নামে চট্টগ্রামে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে চার্জশীট দেয়া হয়েছে। তিন বছর আগে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে উস্কানির মিথ্যা অভিযোগে এই চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এটি সম্পূর্ণভাবে চক্রান্তমূলক। সরকারের পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে গেছে বলেই এখন বিএনপি’র ওপর অত্যুগ্র মাত্রায় নিপীড়ন-নির্যাতনের খড়গ নামিয়ে আনার অংশ হিসেবেই আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নামে মিথ্যা চার্জশীট দেয়া হলো। অবৈধ আওয়ামী সরকার চারিদিক থেকে ব্যর্থ হয়ে দেশের মানুষের কাছ থেকে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে এখন নানা চক্রান্তজাল বুনতে শুরু করেছে। বিএনপি নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা ও চার্জশিট দিয়ে নিজেদের অপকর্ম ঢাকার প্রানান্তকর প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আমি বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী’র নামে চট্টগ্রামে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে চার্জশীট দেয়ার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং চার্জশিটসহ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি করছি।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এস এ কে একরামুজ্জামান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে নিজ বাসভবনে দলীয় কর্মীসভা শেষে অবস্থান করার সময় পুলিশ অতর্কিতে হামলা চালিয়ে তাঁর সাথে দুর্ব্যবহার করে এবং তাঁকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করে। আমি পুলিশের এই আইন বহির্ভূত ও অমানবিক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

কক্সবাজারে স্বামী সন্তানকে জিম্মি করে বেড়াতে আসা গৃহবধুকে দলবেধে শ্লীলতাহানির ঘটনা শুধু মর্মান্তিকই নয়, দেশবাসীকে বেদনাহত ও আতঙ্কিত করে তুলেছে। এ নারকীয় যেন বর্তমান দুঃশাসনেরই একটি চালচিত্র। দেশবাসী যেন অন্ধকার প্রতিক্রিয়া, দাসত্ব ও মৃত্যুপুরীর আবহের মধ্যে বসবাস করছে। স্থানীয় এমপি সাইমুন সারোয়ার কমল এবং জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে ঐ সমস্ত দুস্কৃতিকারী যারা ঐ অপকর্মের সাথে জড়িত তাদের সঙ্গে ছবি পাওয়া গেছে। দুস্কৃতিকারীদের একজন নাম জয়, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দামও স্বীকার করেছে জয় ছাত্রলীগের কর্মী। সে সংগঠনের নানা কর্মসূচিতে অংশ নেয়। সরকারী দলের এই নিকৃষ্ট নমূনা নিয়ে আর কি বলা যেতে পারে। নির্যাতিত নারীর আর্তনাদ, হাহাকার ক্ষমতাসীনদের বোধোদয় ঘটাতে পারবে কি ? বিরোধী দলের প্রতি পেশী প্রদর্শন, উগ্রচন্ড হয়ে ওঠা, মামলা-হামলা, গুপ্তহত্যার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উপরও প্রতিনিয়ত নির্মমভাবে নির্বিচারে নেমে আসে পাশবিকতা। ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতায় এখন শকুন ও হায়েনাদের জয়জয়কার। ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ‘জেনারেল লাইসেন্স’ দেয়ার কারণে দেশজুড়ে পৈশাচিক, লোমহর্ষক ঘটনার এক ভয়াবহ দুর্দিন বিস্তার লাভ করেছে। আমি কক্সবাজারে গৃহবধুর ওপর নির্মম পাশবিকতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে দুস্কৃতিকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।