দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের সোনালী স্বপ্ন

আপডেট: এপ্রিল ২০, ২০২২
0

বশেমুরকৃবি উদ্ভাবিত সয়াবিনের দু’টি নতুন জাত

গাজীপুর সংবাদদাতাঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি) উদ্ভাবিত সয়াবিনের লবনাক্ততা সহিষ্ণু দু’টি নতুন জাত দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের এখন সোনালী স্বপ্ন। গাজীপুরস্থিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক উদ্ভাবিত সয়াবিনের জাত দু’টি (বিইউ সয়াবিন-১ ও বিইউ সয়াবিন-২) বিনা ও বারী জাতের চেয়ে অধিক ফলনশীল, জীবন কাল কম, খাদ্যমান (প্রোটিন ও তেল) বেশী ও লবনাক্ততা সহিষ্ণু। বশেমুরকৃবি’র উদ্ভাবিত সয়াবিনের এ জাত দু’টি ইতোমধ্যেই দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নোয়াখালী ও লক্ষীপুর জেলার শতশত কৃষকের মাঠে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বুধবার বশেমুরকৃবি’র উপ-রেজিস্ট্রার (জনসংযোগ শাখা) মোঃ মজনু মিয়া এ তথ্য জানিয়েছেন।

বশেমুরকৃবি’র উপ-রেজিস্ট্রার জানান, রাজকীয় নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহযোগিতায় সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এর সহায়তায় এই দুইটি জাতকে (বিইউ সয়াবিন-১ ও বিইউ সয়াবিন-২) বিনা ও বারী কর্তৃক উদ্ভাবিত অপর তিনটি জাতের সঙ্গে চাষ করা হয়। সলিডারিডাড উল্লেখিত জেলার ৩৫ হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করে আসছে। চলতি বছর নোয়াখালী ও লক্ষীপুর জেলাসমূহে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে ব্যাপকভাবে উন্নত সয়াবিন চাষাবাদ করা হচ্ছে।

তিনি জানান, বশেমুরকৃবি’র উদ্ভাবিত জাত দু’টির উৎপাদনক্ষমতা সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ গিয়াসউদ্দীন মিয়া, উদ্ভাবক কৃষিতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল করিম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (গবেষণা) প্রফেসর ড. এ. কে. এম. আমিনুল ইসলাম সলিডারিডাড কর্তৃক আয়োজিত নোয়াখালী ও লক্ষীপুর জেলার কৃষকের মাঠ রবিবার ও সোমবার পরিদর্শন করেন। এসময় তারা মাঠ দিবসের মতবিনিময় সভায়ও অংশগ্রহণ করেন। সভায় কৃষকের অভিজ্ঞতা, সম্ভাবনা ও সমস্যা বিষয়ে আলোচনা করা হয়। পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় নোয়াখালী ও লক্ষীপুর জেলার জেলা প্রশাসক, সলিডারিডাড এর কান্ট্রি ম্যানেজার ও জেলার সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তা এবং বিজ্ঞানীগণ উপস্থিত ছিলেন। সভায় বশেমুরকৃবি কর্তৃক উদ্ভাবিত জাতসমুহের প্রশংসা করা হয়।

ক্যাপশনঃ
গাজীপুর ঃ বশেমুরকৃবি উদ্ভাবিত সয়াবিনের নতুন জাতের কৃষক মাঠ পরিদর্শন ও মতবিনিময় সভায় উপাচার্য সহ অন্যরা।

সভায় কৃষকগণ বশেমুরকৃবি কর্তৃক উদ্ভাবিত সয়াবিন জাতসমুহের প্রশংসা করেন এবং আরও অধিকতর ফলনশীল ও লবনাক্ততা সহিষ্ণু জাত আবিস্কার ও তাদের চাষকৃত জাতের উপযুক্ত মূল্য পাওয়ার জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ করেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বশেমুরকৃবির উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ গিয়াসউদ্দীন মিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক উদ্ভাবিত জাতসমুহ অত্র এলাকায় কৃষকের মাঝে সম্প্রসারিত করার জন্য সলিডারিডাডকে প্রশংসাসূচক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। শুধু সয়াবিন নয় বশেমুরকৃবি কর্তৃক উদ্ভাবিত অন্যান্য ফসল (সবজি, ফল, ধান) ওই এলাকার কৃষকের মাঠে চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য তিনি সলিডারিডাড, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে অনুরোধ করেন।

উপাচার্য আরও বলেন, বশেমুরকৃবি তার যুগোপযোগী গবেষণার জন্য ২০২০ ও ২০২১ সালে পর পর দু’বছর স্পেনের সিমাগো ও স্কোপাস কর্তৃক গবেষণা, উদ্ভাবন ও সামাজিক অবস্থান এই তিন সূচকে বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এর মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে। তাছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয়টি কৃষিতে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে জাতীয় কৃষি পদক (স্বর্ণ) পেয়েছে। আগামী দিনে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগীতায় সয়াবিনের উন্নত জাতসমুহ উপকূলীয় অঞ্চলে এক লাখ চাষির মাঝে সম্প্রসারণ করবে যা প্রতি বছর ২ লাখ মে/টন সয়াবিন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, গত ২২ মার্চ একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় চাহিদাপূরণে তৈলবীজ ফসলে সক্ষমতা অর্জনে উক্ত প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।