দে‌শে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে: জাফরুল্লাহ

আপডেট: মার্চ ১২, ২০২২
0
file photo

চুয়াত্তরের মতো দে‌শে আবারও দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, সেই বছর সবচেয়ে বেশি খাদ্য উৎপাদন হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভিক্ষ হওয়ায় সেখানে তিন লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। সেই দুর্ভিক্ষের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। দেশে অনাহারে মারা যাচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু অর্ধাহার ও অপুষ্টিতে আছে।

শনিবার (১২ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

জাফরুল্লাহ বলেন, মানুষের মস্তিষ্ক সবসময় সব কিছু মনে রাখতে পারে না, অনেক কিছুই ভুলে যায়। তাই এদেশের ইতিহাসকে বারে বারে বলতে হবে। ১৯৭৪ সালে দুঃশাসনের কারণে বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। অমর্ত্য সেন তার বইয়ে লিখেছেন, সেই বছর সবচেয়ে বেশি খাদ্য উৎপাদন হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভিক্ষ হওয়ায় সেখানে তিন লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। সেই দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি আবারও শোনা যাচ্ছে। অনাহারে মারা যাচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু অর্ধ আহার ও অপুষ্টিতে আছে।

তি‌নি ব‌লেন, মুক্তিযুদ্ধকে আমরা এক ব্যক্তির ইতিহাসে পরিণত করেছি। কিন্তু কোন জাতি এক ব্যক্তি দ্বারা সৃষ্টি হয়নি। দেশ স্বাধীনের পেছনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যারা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন সকলের অবদান রয়েছে। প্রবাসী এডভাইজার তাজউদ্দিন আহমেদ, মাওলানা ভাসানী, মুজাফফর আহমেদসহ সবারই অবদান রয়েছে।

জাফরুল্লাহ বলেন, যখন আমি আগরতলায় ফিরে আসতাম তখন তাজউদ্দীন ভাই সব সময় বলতেন, জাফরুল্লাহ আমি জানি আলজেরিয়ার ইতিহাস, এ দেশ যখন স্বাধীন হবে তখন হয়তো আমি থাকবো না। এটাই হলো জাতির দুর্ভাগ্য। যারা জাতিকে দেয়ার চেষ্টা করে তারা সব সময় স্মরণযোগ্য হয় না। সেই একই অবস্থা হয়েছে আমিনুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মওদুদের এবং আমাদের প্রবাসী সরকার তাজউদ্দিন আহমেদের ক্ষেত্রে। আমাদের তাদের মনে রাখা উচিত।

ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদকে স্মরণ করে জাফরুল্লাহ বলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ইংল্যান্ডে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে যারা ইংল্যান্ডে যেতেন তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা নিয়ে সেখানে তিনি আন্দোলন করছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যারিস্টার মওদুদ এবং আমিনুল ইসলাম প্রবাসী সরকারকে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন।

মওদুদ আহমদকে স্মরণ করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, আমরা দুজন দুই দল করতাম। কিন্তু সম্পর্ক ছিলো আন্তরিক ও পারিবারিক। মওদুদ আহমেদ ৫২ সালে ঢাকা কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ছাত্র রাজনীতি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এখন কেউ কেউ অস্বীকার করতে চাইছে। ৭৪ সালের জরুরী অবস্থার সময়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এরশাদের আমলে কারাগারে ছিলেন, বিএনপির আমলেও গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিনি কারাবাস নিয়ে বই লিখেছেন।

তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিষয়ে তিনি একজন দক্ষ মানুষ ছিলেন। আমরা তাকে সম্মান দিতে পারিনি। বর্তমান তাকে অসম্মান করেছেন। এই সরকার কারও অবদান মূল্যায়ন করে না। কেউরে মর্যাদা দিতে রাজি নয়। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ও ভাষা আন্দোলনের সমস্ত ইতিহাস একটি পরিবারের কাছে বিলিন করা হচ্ছে। কারও একক অবদানে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নাই।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, প্রায়ই দেখি বড় বড় দলের নেতারা তাদের নেতাদের নেতৃত্বে উপর সন্তুষ্ট না। তারা যখন এমনি বলে, তখন তারা বলে ১৩ বছর ধরে একটু সরকার ক্ষমতায় এছে। তারা (অন্যান্য দল) কি করেছে? কিন্তু সেই নেতা যখন মঞ্চে উঠে তখন তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক কোনো কথা বলে না। একটা দেশ এরকম করে গড়ে উঠতে পারে না।

তিনি বলেন, একবার ভাবেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে উদ্যোগ নিয়েছিল সেটা যদি সেই দেশের সেনাবাহিনী প্রধান বুদ্ধিজীবীরা সমর্থন দিত তাহলে আমেরিকান ডেমোক্রেসির কি অবস্থা হতো? কিন্তু সে দেশের সেনা প্রধান সেটা করেনি। আর আমার দেশের সেনা প্রধান, আমি শুধু বর্তমান সেনা প্রধানের উদ্দেশ্যেই বলছি না। সেরকমটা পারবে না। পুলিশ প্রধান বলেন রাজনৈতিক দলের নেতা বলেন আর বুদ্ধিজীবী বলে প্রত্যেকেই নিজের বিশ্বাস গিলে ফেলে তার পরে কথা বলছি যাতে আমার নেতা সন্তুষ্ট হন।

স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, এডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রমুখ।