ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের অধ্যক্ষ সংঘনায়ক ভদন্ত শুদ্ধানন্দ মহাথেরোর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বিএনপির

আপডেট: মার্চ ৩, ২০২২
0

ঢাকার বাসাবোর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের অধ্যক্ষ সংঘনায়ক ভদন্ত শুদ্ধানন্দ মহাথেরোর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বিএনপি।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল দুপুরে বাসাবো ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় নেতা গৌতম চক্রবর্তী, সুশীল বড়ুয়া, মহানগর বিএনপির হাবিবুর রশীদ হাবিব, ইউনুস মৃধা প্রমূখ।

২০২০ সালে ৩ মার্চ শুদ্ধানন্দ মহাথেরো ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিতসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৭ বছর।

করোনা মহামারীর কারণে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার এই অনুষ্ঠান ওই সময়ে হয়নি। দুই বছর পর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে তিনদিন ব্যাপী নানা অনুষ্ঠান-ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান হয়।

বেলা ১২টায় বাসাবো ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব প্রথমে বিহারের মূল ভবনের দোতলায় গ্লাসের ভেতরে রক্ষিত ভদন্ত শুদ্ধানন্দ মহাথেরোর মরহেদে দলের পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অর্পন করেন এবং তার স্মৃতির প্রতি সন্মান জানাতে কিছুক্ষন নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

পরে বিএনপি মহাসচিব যান মূল প্যান্ডেলে। সেখানে তিনি বক্তব্য রাখেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসেছি। ইতিমধ্যেই তার মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। আমরা প্রত্যাশা করছি যে, আগামীকাল তার মরদেহ যে দাহ করা হবে, এই পৃথিবী থেকে বিদায় দেয়া হবে অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তা সফলভাবে সমাপ্ত হবে।”

‘‘ মহান শুদ্ধানন্দ মহাথেরোর মহাপ্রয়ানে, তিনি যেন পরলোকে শান্তিতে থাকেন এই প্রার্থনা আমরা করি। আমরা প্রার্থনা করব যে, আমাদেরকে সেই সৃষ্টিকর্তা তিনি যেন আমাদের এই পৃথিবীকে শান্তিময় করে দেন, আমরা প্রার্থনা করব এই বাংলাদেশকে তিনি যেন শান্তিময় করে দেন। আমরা যেন, বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র, একটি পরস্পরের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বমূলক-সৌহার্দমূলক রাষ্ট্রের যেন বাস করতে পারি আনন্দের সঙ্গে, প্রেমের সঙ্গে, ভালোবাসার সঙ্গে- এই হোক আজকে আমাদের প্রার্থনা।”

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা বিএনপি মনে করি যে, বাংলাদেশ আমার দেশ, আমরা মনে করি যে, এখানে যারা বাস করেন সব মানুষই বাংলাদেশী। এখানে ধর্ম আলাদা, একেক জনের একেকটা ধর্ম হতে পারে, চিন্তাভাবনা আলাদা হতে পারে। কিন্তু একটা জায়গায় এসে আমরা সবাই বাংলাদেশী। এই তত্ত্ব আমাদেরকে দিয়েছেন তার দর্শনের মাধ্যমে তিনি হচ্ছেন আমাদের স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আমরা বিশ্বাস করি, এই বাংলাদেশী দর্শনের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের সকল মানুষকে একত্রিত করতে সক্ষম হবো। আমরা বিভাজনের রাজনীতি করি না্। আমরা সব সময়ে ঐক্যের রাজনীতি করি।বাংলাদেশকে যদি সমৃদ্ধ করতে হয়, বাংলাদেশকে যদি সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হয় তাহলে এখানে অবশ্যই একটা ইস্পাতকঠিন ঐক্য দরকার আছে সকল বাংলাদে্শীদের মা্ঝে।”

‘‘ এখানে ধর্মের মধ্যে যে হানাহানি সেই হানাহানি বাংলাদেশে সবচেয়ে কম। এটা বাস্তবতা। কিছুসংখ্যক কুচক্রি আছেন তারা মাঝে-মধ্যে বিভাজন করার সৃষ্টি করে। কিন্তু বাংলাদেশী মানুষ আজীবন হাজার বছর করে এখানে একই সাথে ভাইয়ের মতো বাস করেছে। বৌদ্ধ ধর্মের একটা প্রভাব শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের সকল জায়গায় একটা বড় রকমের প্রভাব সৃষ্টি করেছিলো-এটা হচ্ছে শান্তির ধর্ম, এটা হচ্ছে কল্যাণের ধর্ম, মানুষের কল্যাণের জন্য এই ধর্ম প্রচার করা হয়।”

অনুষ্ঠানে বিএনপির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুস সালাম, গৌতম চক্রবর্তী, সুশীল বড়ুয়া বক্তব্য রাখেন।

পরে বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি ও শুদ্ধানন্দ মহাথের জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উদযাপন পরিষদের সভাপতি বুদ্ধপ্রিয় মহাথেরো বিএনপির প্রতিনিধিদলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।

তিন দিনের অনুষ্ঠানে শুদ্ধানন্দ মহাথেরোর জীবন ও কর্মের ওপর শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতা, মহা সংঘদান, ধর্মালোচনা, স্মৃতিচারণ, বৌদ্ধ যু্ব ও মহিলা সমাবেশ, বৌদ্ধ আন্তর্জাতিক মহাসম্মেলন। শেষ দিনে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় শুদ্ধানন্দ মহাথেরোর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

শুদ্ধানন্দ মহাথেরো ১৯৩৩ সালের ১৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার উত্তর পাদুয়ায় জন্মগ্রহন করেন। সমাজ সেবায় অবদানের জন্য ২০১২ সালে তাকে একুশে পদক দেয়া হয়।