নবাবগঞ্জ পার্ক মাঠে বুড়িগঙ্গা নদী দূষণ ও প্রতিকার শীর্ষক নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত

আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
0

ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম এর দূষণবিরোধী অ্যাডভোকেসি প্রকল্পের আয়োজনে বুড়িগঙ্গা নদী রক্ষায় ‘বুড়িগঙ্গা নদী দূষণ ও প্রতিকার’ শিরোনামে এক নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার সকাল ১১:০০ টায় লালবাগের নবাবগঞ্জ পার্ক মাঠ (ভেড়িবাধ সংলগ্ন) এ এই নাগরিক সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত এলাকার দীর্ঘ ২৭ বছরের সাবেক কাউন্সিলর এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ হুমায়ুন কবির এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নাগরিক সভায় মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল। উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইলিয়াছুর রহমান বাবুল ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ মকবুল হোসেন, ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ মোকাদ্দেস হোসেন জাহিদ, ২৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম বাবুল, ৫৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন। নাগরিক সভায় সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।

সভায় নাগরিক সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নাজিম উদ্দিন, সভাপতি, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগ; ক্যামেলিয়া চৌধুরী, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম; আমির হাসান মাসুদ, সভাপতি, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ; মতিউর রহমান জামাল, সাধারণ সম্পাদক, লালবাগ থানা আওয়ামী লীগ; জিএম রুস্তম খান, সভাপতি, সচেতন নগরবাসী; উম্মে সালমা, মহাসচিব, নিরাপদ চিকিৎসা চাই; সোহাগ মহাজন, সভাপতি, ক্লিন রিভার বাংলাদেশ প্রমূখ।

দূষণবিরোধী শক্তিশালী নাগরিক প্রচেষ্টা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ইউএসএআইডি, এফসিডিও এবং কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ এবং স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) কে সাথে নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম এর মাধ্যমে নদী দূষণ রোধে পরিচালিত এই নাগরিক সভায় ঢাকা শহরের প্রধান নদী বুড়িগঙ্গাকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করে প্রাণ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে নাগরিক সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয়ে আলোচনা করা হয়। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংগঠনসমূহকে নিয়ে গঠিত বুড়িগঙ্গা নদী মোর্চার সদস্যবৃন্দ আলোচনায় অংশ নিয়ে এই আলোচনাকে প্রাণবন্ত করে তোলেন।

সভাপতির বক্তব্যে মোঃ হুমায়ুন কবীর বলেন, বুড়িগঙ্গাকে আগের জায়গাতে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হলে ব্রিটিশ সময়ের সিএসএ রেকর্ড ধরে জমি মাপতে হবে। আদালতের রায় সঠিকভাবে মানলেই আমাদের বুড়িগঙ্গাকে তার পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। আমরা সারাদেশে নদী রক্ষার কাজ শুরু করবো আর এর শুরু হবে আমাদের এই বুড়িগঙ্গাকে রক্ষার আন্দোলনের মাধ্যমে।

সভার মূল বক্তব্যে শরীফ জামিল বলেন, ট্যানারি বন্ধের নানা ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা চাই না আমাদের অর্থনীতি ধ্বংস করতে ট্যানারি বন্ধ হোক। অর্থনীতি সচল রেখেই আমাদের পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। কারখানায় ইটিপি স্থাপন করে বর্জ্য পরিশোধনের মাধ্যমে তা নিষ্কাশন করতে হবে, যাতে আমাদের উন্নয়নের পাশাপাশি নদীকেও বাঁচিয়ে রাখা যায় আর পরিবেশও রক্ষা পায়। ব্রিটিশরা যদি বুড়িগঙ্গার চেয়ে বেশি দূষিত টেমস নদীকে দূষণমুক্ত করতে সক্ষম হয় তাহলে আমরাও আমাদেও নদীকে ফিরিয়ে আনতে পারবো।

সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান বলেন, সারা পৃথিবীতে খুব কম শহরই আছে যা নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত। প্রকৃতির অপার দান আমাদের ঢাকার চারপাশের নদীকে আমরা রক্ষা করতে পারছি না। পরিবেশ একা রক্ষা করা যায় না। আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে বুড়িগঙ্গা রক্ষায়।

১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইলিয়াছুর রহমান বাবুল বলেন, আগে চান্দিঘাটে পানির পাম্প ছিল। সেটার মাধ্যমে আমরা বুড়িগঙ্গার পানি খেতাম। এখন পরিশোন করেও এই বুড়িগঙ্গার পানি খাওয়া যোগ্য থাকে না। ট্যানারির হতে নির্গত ক্রোমিয়াম পানিতে মিশে পানি দূষিত করছে যা ক্যান্সারসহ অন্যান্য রোগ সৃষ্টি করছে। এ থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে।

২৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিল জাহাঙ্গীর আলম বাবুল বলেন, পানি ধীরে ধীরে নিচে চলে যাচ্ছে। পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এই পানি হাতে-পায়ে লাগলে সেখানে ঘাঁ হয়ে যায়। বুড়িগঙ্গা আমাদের নদী। একে বাঁচানোর কাজে আমরা সম্পৃক্ত থাকতে চাই।

৫৬ নং ওয়ার্ড কমিশনার মোঃ হোসেন বলেন, সৎকর্ম কখনো বিফলে যায় না। দূষণবিরোধী যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আয়োজন চলছে সেটা দিয়েই সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে মেসেজ গিয়েছে যে এটাকে পরিবর্তন করতে হবে। পরিবর্তনের জন্য এলাকার মানুষকে সচেতন করতে হবে।

২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোকাদ্দেস হোসেন বলেন, নদী দূষণ কমানোর জন্য দখলদারদেরকে উচ্ছেদ করতে হবে। নদীকে বাঁচাতে দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে।

২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিল মোঃ মকবুল হোসেন বলেন, আমরা আমাদের বুড়িগঙ্গাকে বাচাঁতে একসাথে কাজ করবো। তাহলেই রক্ষা পাবে আমাদের নদী।

সভায় স্থানীয় নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ বলেন, আমরা প্লাস্টিক আর একবার ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র নদীতে নিক্ষেপ করছি। এতে আমাদের নদীর অবস্থা দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে। নদীকে বদলানোর জন্য আগে আমাদের নিজেদেরকে বদলাতে হবে। আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার স্বার্থেই নদীকে ফিরিয়ে আনতে হবে। বুড়িগঙ্গাকে রক্ষা করতে হবে দূষণ ও দখলের হাত থেকে।