নারায়ণগঞ্জে শহরের ৩০০ শয্যা হাসপাতাল চার বছরেও ৫০০ শয্যায় রূপান্তরিত হয়নি !

আপডেট: মে ২৬, ২০২২
0

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরস্থ ৩০০ শয্যা হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীতকরণের উদ্দেশ্যে প্রায় ৪ বছর পূর্বে নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু পর পর দুইবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলেও ভবন নির্মানের অর্ধেক কাজও শেষ হয়নি। চার বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি কেবলমাত্র ৪৫ শতাংশ। তবে ২০২৩ সালের জুনে হাসপাতালের নির্মাণ কার্যক্রম শেষ হবে বলে জানান জেলা গণপূর্ত বিভাগ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ৩০০ শয্যা হাসপাতাকে ৫০০ শয্যায় উন্নীতকরণের নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮ সালের জুন মাসে। নির্মাণ শুরুর ১৯ মাসে প্রকল্পটির ২০ শতাংশ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। পরবর্তী বছর ১২ মাসে কাজ হয়েছে কেবল ৫ শতাংশ। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বরাদ্দকৃত ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের মোট ২৫ শতাংশ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। ২০২১ সালের জানুযারি পর্যন্ত আরো ১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ শতাংশ কাজ হয়। একই বছরের জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি হয় ৩০ শতাংশ। এই সময় পযন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ১৪ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫ শতাংশ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। সব মিলিয়ে ৪৬ মাসে ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০০ শয্যা উন্নতীকরণ প্রকল্পের ৪৫ শতাংশ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।

সরেজমিনে হাসপাতালের নির্মান স্থল ঘুরে দেখা যায়, ভবনের চারতলার পূর্বপাশের ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। পশ্চিম পাশের ছাদ ঢালাইয়ের প্রস্তুতি চলমান রয়েছে। ভবনের সিলিং ও প্লাস্টারের কাজ হয়েছে। তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের জনবল প্রয়োজনের তুলনায় কম বিধায় কাজের গতি তুলনা মূলকভাবে কম বলে মনে করছেন গণপূর্ত কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ২১ মার্চ একনেকের বৈঠকে এ হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হাসপাতালটি ১৫ তলা ভবনের নির্মাণের প্রকল্প হলেও প্রথমধাপে ৭ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে। পরবর্তীতে ভবনের অবশিষ্ট অংশ নির্মাণ করবে। পুরো ভবনের প্রকল্প মূল্য ১৩০ কোটি টাকা। যেখানে ৭ তলা ভবন নির্মাণে অনুমোদিত প্রকল্প মূল্য ৭০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে জিকে বিল্ডার্স ও ঢালি কন্সট্রাকশন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়। কাজটি তাদের ২৪ মাসের মধ্যে শেষ করার জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এই সময় বাড়ানো হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় নতুন মেয়াদ নির্ধারন করা হয়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। এর মাঝে ২০২০ সালে জিকে বিল্ডার্স ঠিকাধারি প্রতিষ্ঠানের মালিক জি কে শামীম গ্রেফতার হওয়ায় এ প্রকল্প থেকে তার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থগিত করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ঢালি কন্সট্রাকশনের আওতায় প্রকল্পের কার্যক্রম এখন চলমান রয়েছে।
ঢালি কন্সট্রাকশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের কার্যক্রম কয়েক মাস বন্ধ ছিল। আর কার্যক্রম শুরুর দিকে এখানের গাছ কাটার জন্য বনবিভাগের অনুমতি পেতে অনেকটা সময় কেটে গেছে। এছাড়া ভবন নির্মাণের নকশা পেতেও অতিরিক্ত সময় অতিবাহিত হওয়ায় আমাদের কার্যক্রম কিছুটা ধীরে চলেছিল। এখন ভালো গতিতেই কাজ চলছে।
এদিকে ৩শ শয্যা হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে জানান, বর্তমানে হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে বাড়তি রোগীর চাহিদা নেই। কিন্তু সবকিছু স্বাভাবিক হলে তখনও হাসপাতালের ভবন না হলে চিকিৎসা সেবায় বেঘাত ঘটবে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সূত্র জানা যায়, ৩’শ শয্যা হাসপাতাল ৫’শ শয্যা হাসপাতালে উন্নত হলে, চিকিৎসা সেবায় যুক্ত হবে রেডিওলজি, আইসিইউ, কার্ডিওলজি ও বার্ন ইউনিট। ভবনের নিচতলায় থাকবে গাড়ি পার্কিং, জরুরি বিভাগ, রেডিওলজি ও সার্ভিস ব্লক। দ্বিতীয় তলায় কনসালট্যান্ট প্যাথলজি। তৃতীয় তলায় প্রশাসনিক কার্যালয় ও প্যাথলজি, চতুর্থ তলায় অপারেশন থিয়েটার ও আইসিইউ, পঞ্চম তলায় কার্ডিওলজি ইউনিট এবং যষ্ঠ ও সপ্তম তলায় থাকবে রোগীদের ওয়ার্ড, কেবিন ও চিকিৎসকদের কক্ষ। এছাড়াও থাকবে মুমূর্ষু রোগী ও সাধারণ রোগীদের ব্যবহারের জন্য আলাদা আলাদা লিফট। দ্বিতীয় ধাপে ভবনটির বাকি অংশ নির্মিত হলে সেখানে নতুন সেবা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
৫০০ শয্যা হাসপাতালের নির্মাণ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন বলেন, ৩’শ শয্যা হাসপাতালকে ৫’ শ শয্যায় উন্নীতকরণের উদ্দেশ্যে নির্মাণ কার্যক্রম চলছে। আমরা দ্রুত কাজ শেষ করানোর চেষ্টা করছি। পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম হলে ২০২৩ সালের জুন মাসে আমাদের প্রথম ধাপের কাজ শেষ হবে।

এম আর কামাল
নারায়ণগঞ্জ