নিত্যপণ্যর বাজারে আগুন : মধ্যবিত্তের নীরব কান্না বাড়ছেই

আপডেট: মার্চ ১৯, ২০২১
0

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ : এক মাস আগেও বাজার থেকে সয়াবিন তেল কিনেছেন ১১০ টাকা লিটার। ১৭ মার্চ সবকিছু বন্ধ থাকায় মাসিক বাজার করতে যান আবির হোসেন। শহরের দিগুবাবুর বাজারে গিয়ে তেলের দাম শুনে রীতিমত কপালে ঘাম বেরিয়ে গেছে। এখন লিটার প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। মানে বেড়েছে প্রায় ৩০ টাকা। শুধু তেল না মশুরী ডাল, চাল, চিনি সবকিছুর দাম এখন বেশী।

আবির হোসেন একটি রপ্তানিমুখী গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি করেন। মাস শেষে ওভারটাইম সহ বেতন পান ১৯ হাজার টাকা। বেতন বাড়েনি। করোনার মধ্যে কয়েক মাস কারখানা বন্ধ ছিল। সংকট না কাটতেই বাজারের মূল্যে তিনি এখন দিশেহারা।

শুধু আবির হোসেন না বর্তমান বাজার দরে ক্রয়ের সক্ষমতা হারাতে বসেছে সাধারণ মানুষ। উপার্জনের সঙ্গে মিল অমিলের হিসেব কষতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে এ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভোক্তারা। জীবন যুদ্ধের এ প্রান্তে এসে অনেকে হারমানা না মানার প্রশ্নে বিতর্কে জড়ালেও শেষ অবধি হারমানতে বাধ্য হন দ্রব্যমূল্যের জায়গায় এসে।

স্কুল শিক্ষক আনোয়ার হোসেন পাঠানের মতে শুধু নিত্যপণ্য না এর বাইরেও ব্যায় বাড়ছে। বছর ঘুরলেই বাসা ভাড়া বাড়ছে, বিদ্যুতের দাম-গ্যাসের দাম বেড়েছে। বাচ্চারা বড় ক্লাসে উঠছে আর টিউশন ফি বাড়ছে। একের পর এক খরচের লাগাম বাড়ছে বৈকি, কমছে না। এ বিষয়গুলো সরকার দেখলে কষ্টের বোঝা কিছুটা হলেও লাঘব হত বলে মনে করেন তিনি।
গার্মেন্ট কর্মী সোলায়মান বলেন, বড় গার্মেন্টগুলোর আকার ছোট হচ্ছে। তার উপর বায়ারদের আনাগোনা কমে গেছে, অর্ডার কমছে দিনকেদিন। এ অবস্থায় আগে যেই বেতন বর্তমানে সেই বেতনেই কাজ করছি। এই সীমিত আয় দিয়ে চলা কঠিন হচ্ছে। স্ত্রীকে গার্মেন্টের কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু সব যায়গায় ছাঁটাই চলছে কোথাও লোক নেয় না। তাই দু:শ্চিন্তায় রয়েছি। এ বছরে কিছু একটা না করতে পারলে গ্রামে পাঠিয়ে দিতে হবে। পিঠ অনেক আগেই দেয়ালে ঠেকে গেছে বলে মত দেন তিনি।
রমজান যত ঘনিয়ে আসবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে বলে ধারণা করছেন ভোক্তা ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এখন থেকে পাইকারি বাজার মনিটরিং না বাড়ালে রমজানে বাজারের লাগাম ধরে রাখা কষ্টকর হবে। গত সপ্তাহেও নতুন দেশি পেঁয়াজ ২৮ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হলেও এখন তা ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এলসির ইন্ডিয়ান ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চায়না পেঁয়াজ সর্বনিম্ন ২০-২২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সরু মিনিকেট চাল ৬৩-৬৪ টাকায়, নাজিরশাইল ৬৪-৬৫ টাকায় আর বিআর ভালো মানের ২৮ চাল ৫৬-৫৭ টাকা দরে বিক্রি হয়। খুচরা বাজারে চালের দাম আরও বেশি। খুচরা দোকান থেকে মানুষকে সরু মিনিকেট চাল ৬৫-৬৬ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। আর ভালো মানের বিআর-২৮ চাল বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৫৯-৬০ টাকা দরে।

এম আর কামাল
নারায়ণগঞ্জ