নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিকল্প নেই–মির্জা ফখরুল

আপডেট: ডিসেম্বর ১৫, ২০২১
0

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের(র‌্যাব) বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ জাতিসংঘের শান্তি মিশনেও প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই শঙ্কার কথা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ এই নিষেধাজ্ঞার ফলে একটি পরাশক্তি রাষ্ট্র কর্তৃক বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী হিসাবে চিহ্নিত হওয়ায় ভবিষ্যতে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে মোতায়েনও প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপরে নীতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ রূঢ় শোনালেও এটা অস্বীকার করার সুযোগ নাই ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে’র অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক এই নিষেধাজ্ঞা বর্তমান চলমান গণ ও মানবতা বিরোধী সরকারের জন্য সমগ্র বিশ্ববাসীর পক্ষ থেকে একটি শক্তিশালী বার্তা। আর সেটা হলো কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এই ধরনের বিচারহীন সংস্কৃতি চলতে পারে না।কেবল মাত্র একটি অগণতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী সরকারের শাসনকালেই এই ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়।বাংলাদেশে বিশ্ববাসীর কাছে বর্তমানে সেরকমই একটি কর্তৃত্ববাদ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতি আশ্রয়ী সরকার ব্যবস্থা চালু রয়েছে।”
‘‘ বিএনপি মনে করে র‌্যাবের উপরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সকল দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবার লক্ষে আইন শৃঙ্খলাকারী বাহিনীকে বেআইনিভাবে ব্যবহার করার সকল দায়িত্ব তাদেরই।”
র‌্যাবের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পেছনে বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করে কাজ করেছে বলে সরকারের মন্ত্রী-নেতারা অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘এটা তো খুব স্বাভাবিক যে, এখন তারা চিহ্নিত হয়ে গেছে। এখন তাদের উপরে যখন সমস্ত কিছু পড়বে তখন দায় তাদেরকেই নিতে হবে। তখন তারা দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করবে। এটাতে জনগনের বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই।”
‘‘ র‌্যাব তো আমরা চালাই না, সরকার চালায়। তাদেরকে নির্দেশ দেয় সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয় সরকার। আমাদের কি করার থাকতে পারে।”
‘র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার দায় সরকারেরই’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ বাংলাদেশে চলমান নির্বাচনীহীন সংস্কৃতি, দিনের ভোট রাতে লুটের সংস্কৃতি অব্যাহত রাখার জন্য সরকার র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অত্যন্ত নগ্নভাবে ব্যবহার করেছে। র‌্যাবের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ কার্য্ত রাজনৈতিক সরকার দায়। তাই র‌্যাবের বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা তা এক অর্থে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধেই নিষেধাজ্ঞার শামিল।”
‘‘ কারণ আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রহীন সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য র‌্যাবকে বিভিন্ন আইন বিরোধী সংস্কৃতির অংশ হতে বাধ্য করেছে। অতত্রব কার্য্ত রাজনৈতিক সরকারের দায় বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেয়া যাবে না।তবে যারা ইতিমধ্যেই সরকারেরর এই ধরনের অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য নিজেদেরকে অংশীদারি পরিণত করে নানা ধরনের বিচার বর্হিভূত সংস্কৃতি চালু করতে ভুমিকা রেখেছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশ বা অন্য যে কোনো রাষ্ট্রের গুরত্বপূর্ণ বাহিনী সমূহের সামরিক এবং বেসামরিক বাহিনী সমূহের কর্মকর্তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসবে হবে। এটা ভুলে গেলে চলবে না মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সম্পূর্ণ দায় আওয়ামী লীগের।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
‘রাষ্ট্রপতির সংলাপ প্রসঙ্গে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এটা আমরা কিছু বলতে পারি না এজন্য যে আমরা কিছুই জানি না এই সম্পর্কে।”
আমন্ত্রণ পেলে যাবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ আমরা কিছুই জানি না।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমূখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিকল্প নেই’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ গণতন্ত্রহীন সমাজে জবাবদিহিতা প্রতিটি পদে পদে বিঘ্নিত হয়। এই মুহুর্তে বাংলাদেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে এটা বিদ্যমান। বাংলাদেশের তিন বারের প্রধানমন্ত্রী মাদার অব ডেমোক্রেসি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিকতসায় বিদেশে প্রেরণে সরকারের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি তার সর্বশেষ উদাহরণ।”
‘‘ তাই দেশে অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজনের পথ পরিস্কার করে জনগনের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক ব্যবস্থা করে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করে দেশে মানবাধিকার ও বিচার পাওয়ার অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে।বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পালনকালে এটাই হতে পারে দেশবাসীর জন্য সর্বোত্তম প্রাপ্তি।”
যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ নির্বাচন যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হয়, নিরপেক্ষভাবে হয় নিসেন্দহে সেটা পড়বে।”
‘বিএনপির যৌথ সভা’
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে বিএনপির ও তার অঙ্গসংগঠনের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় বিজয় র‌্যালীসহ সারাদেশে জেলা পর্যায়ে সমাবেশের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এতে বিএনপির আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, অঙ্গসংগঠনের আমিনুল হক, সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম, আবদুল কালাম আজাদ, হেলাল খান, জাকির হোসেন রোকন, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, আবদুর রহিম, নজরুল ইসলাম তালুকদার, ফজলুর রহমান খোকন প্রমূখ নেতৃ্বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।