নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাদের অতিদ্রুত সাজা দিতে সরকার সেল গঠন করেছে— মির্জা ফখরুল

আপডেট: এপ্রিল ৯, ২০২২
0

নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাদের অতিদ্রুত সাজা দিতে সরকার সেল গঠন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আপনি দেখুন যে, সেই ২০১৩ সালের একটি মামলা মুগদা থানার। এটা মিথ্যা গায়েবী মামলা। এখন একজন মানুষকে একই ঘটনায় দুইটা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। মুগাদা থানার বিস্ফোরক মামলায় ৩৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিলো। এখানে ৩২ জন খালাস পেয়েছেন আর ৭ জনকে দুই বছর তিন মাস/দুই বছর এক মাস.. এভাবে সাজা দেয়া হয়েছে।”

‘‘ এটা এখন সারা দেশেই কিন্তু চলছে। আমরা শুনেছি যে, তালিকা তৈরি করেছে সরকার। সেই তালিকা ধরে বিভিন্ন জেলায় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা আছে এই মামলাগুলো দ্রুত শেষ করার জন্য একটা সেল তৈরি করে দেয়া হয়েছে, এই সেল তৈরি করে দিয়ে অতিদ্রুত মামলাগুলো শেষ করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।”

বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘ এর্ প্রমাণ হচ্ছে এই মুগদা থানার মামলাটা। যেখানে কোনো কিছু নাই, নাথিং। আমার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো আছে, সেই মামলাগুলোতে কি আছে? একটা হচ্ছে আমি ময়লার গাড়ি পোঁড়াচ্ছি, তারপর আপনার সিটি করপোরেশনের গাড়ি। আমার বিরুদ্ধে আছে সেক্রেটারিয়েটের ভেতরে মোটর সাইকেলের পেছনে গিয়ে বোমা মেরেছি …।”

‘‘এই ছল-চাতুরি প্রতারনা করে গোটা জাতিকে একটা ভয়াবহ অন্ধকারের গহবরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এটার বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। এই যে আমরা সমস্ত রাজনৈতিক কর্মী এরা তো কেউ চোর না, এরা কেউ ডাকাত না, এরা কেউ ক্রাইম করে না। এরা সবাই রাজনৈতিক কর্মী, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে তাদেরকে সমস্ত মিথ্যা মামলা দিয়ে এভাবে একেবারে নির্মূল করার দেয়ার যে ভয়াবহ যে প্রচেষ্টা এটা ফ্যাসিবাদ ছাড়া কোথাও হতে পারে না।”

ফখরুল বলেন, ‘‘ সরকার বিরোধী দলকে পুরোপুরি নির্মূল করতে কাজ করছে। যেটাকে আমরা বলি পাঞ্চ করা, পানজিং অব দ্যা অপজিশন। ঠিক আজকে ধরেন, ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণ করার পরে যেভাবে নির্মূল করে দিচ্ছে সেই একইভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে একইভাবে ইহুদীদের নির্মূল করেছে জার্মানির হিটলার, পাকিস্তান আমলে আমাদের এই বাংলাদেশে একটা জাতিকে নির্মূল করার জন্য যেমন আপনার নির্যাতন-নিপীড়ন-হত্যা সব কিছু চালানো হয়েছিলো, পোঁড়ামাটির একটা অবস্থা তৈরি করা হয়েছিলো আজকে ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ থেকে বিরোধী দলকে নির্মূল করার জন্য সেই একই অভিযান চালানো হচ্ছে।”

‘‘ আমাদের প্রশ্ন যে জায়গায়, রাজনৈতিক প্রশ্ন। সেটা হচ্ছে সরকার মুখে বলছে, গণতন্ত্রের কথা, নির্বাচনের কথা বলছে। আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা গলায় ফেনাতুলে ফেলছেন যে, সুষ্ঠু নির্বাচন, অত্যন্ত নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন তৈরি করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, ‘‘ যখনই বিরোধী দল কর্মসূচি নিয়ে মাঠে এসেছে তাদেরকে একইভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে, মামলা দেয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে দেখেছেন বাম জোট যে কর্মসূচিতে দিয়েছিলো সেখানেও একইভাবে তারা মামলা দিয়েছে, গ্রেফতার করেছে, মারপিঠ করেছে। গত ৬ তারিখ ইশরাক তাকে ঢাকার লোকেররা জনতার মেয়র বলে তিনি দ্রব্যমূল্যের প্রতিবাদে মতিঝিলে লিফলেট বিতরণ করছিলেন। সেই সময়ে তাকে বিনা উস্কানিতে গ্রেফতার করা হয়, সেখানে অনেককে মারদোর করা হয়, লাঠিচার্জ করা হয়। পরবর্তিতে তাকে যখন আদালতে নিয়ে আসা হয় সেখানেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর গুলিবর্ষন, টিয়ারগ্যাস সেল নিক্ষেপ করা হয়, নির্যাতন করা হয়।”

‘‘ দেখুন ওইখানে ছিলো একেবারে স্বল্প সংখ্যা লোকজন.. ২০/৩০ জন হতে পারে। এখন তারা(পুলিশ) মামলা দিয়েছে ৮৮ জনের বিরুদ্ধে। এরা কারা? এই ৮৮ জন হচ্ছেন মহানগর দক্ষিনের নেতৃবৃন্দ এর নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। থানার প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারির বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। উদ্দেশ্যটা কী? সেই আগের মতোই স্টাইল। একজন হজ্বে আছেন চকবাজার থানার সেক্রেটারি(আনোয়ার পারভেজ বাদল), একজন আইনজীবী আছেন।”

‘নতুন ইসি নাটক করেই যাচ্ছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ নতুন নির্বাচন কমিশন নাটক করেই যাচ্ছে। সিভিল সোসাইটিকে ডাকছে, সাংবাদিকদের ডাকছে। তাদেরকে ডেকে খুব সুন্দর কথা বলছেন। নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার যিনি উনি সুন্দর বাংলা বলেন। কথা বলার ভঙ্গিও সুন্দর। আগের ভদ্রলোক তো ছিলেন যে কথাই ভিন্নভাবে বলতেন। এখনকার জন চমতকার কথা বলেন এবং বলে মানুষকে বিমোহিত করার চেষ্টাও তিনি করেন।”

‘‘এই জিনিসগুলো সবচাইতে ভয়াবহ। এই নাটকগুলো করা হচ্ছে। এই নাটকগুলো করে তারা আবার আরেক নির্বাচন করার পায়তারা করছে। যে নির্বাচন তারা আগের মতোই জোর করে এবং বিভিন্ন কৌশলে..। এবার হয়ত আগের মতো নির্বাচন হবে না। কোন ধরনের নির্বাচন হবে? আগে তো আগের রাত্রে নির্বাচন হয়ে গেছে। এখন কী ৭ দিন আগে নির্বাচন হয়ে যাবে কিনা কেনো জানিনা। ইট ইজ গোয়িং টু হেপেন।”

‘গণমাধ্যম কর্মী আইন প্রসঙ্গে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আপনারা সাংবাদিকরাও কম ভুক্তভোগী নন। ইতিমধ্যে আপনাদের অনেকেই নিহত হয়েছেন, মারা গেছেন। অনেককে জেলে যেতে হয়েছে সত্য কথা লেখার জন্যে। এখানে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করা হয়েছে। এখন গণমাধ্যম কর্মী আইন করতে যাচ্ছে।আমাদের তথ্য মন্ত্রী সাহেব উনি বলছেন নাকী এটা রিভিউ করা হবে।”

‘‘ রিভিউ করে কী করবেন সেটা তো আমরা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ক্ষেত্রে দেখেছি।যার ফলে এটা কোনো মতেই গণতন্ত্রের নিরাপদ দেশ নয়ম এটা মানুষের বিকাশের জন্য নিরাপদ দেশ নয়, এই দেশ এখন সম্পূর্ণভাবে একনায়কতন্ত্র, কর্তৃত্ববাদী, এককথায় বলতে গেলে একটা ফ্যাসিবাদী সরকারের হাতে পড়েছে। এই সরকারকে সরাতে না পারলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকবে না।”

গণতান্ত্রিক সংগ্রামের পক্ষে গণমাধ্যমের ‘আরো বেশি সহযোগিতা’ চান বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

‘খালেদা জিয়ার মামলা’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে মামলা এটা কোনো মামলা না, এটা মধ্যে কিছুই নেই। সমস্ত মিথ্যা কথা দিয়ে সাজানো মামলা। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ।”

‘‘ এই নেত্রী যিনি সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করলেন, সংগ্রাম করলেন তাকে এভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া এরজন্য সরকারকে দায়ী থাকতে হবে, গণতন্ত্রের হত্যার জন্য তাদেরকে দায়ী থাকতে হবে। একদিন না একদিন তাদেরকে জনগনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

মহানগর দক্ষিনের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, সদস্য ইশরাক হোসেন,রিমান্ডে নেয়া নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন তিনি।

পুলিশের কর্মকর্তারা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে যেরকম আচরণ করে তা দূঃখজনক উল্লেখ করে মহাসচিব বলেন, ‘‘ এই দেশ কোথায় চলে যাচ্ছে? যারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারি তারা যে ভাষায় কথা বলেন, এই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা। তাদেরকে দেখে মনে হয় না আমরা কোনো সভ্য সমাজে বাস করছি।”

‘‘ রাজনৈতিক দলের অধিকার আছে তাদের দেশের বিষয়ে কথা বলবে, সমালোচনা করবে এবং বিভিন্ন বিষয়গুলো জনগনের সামনে তুলে ধরবে। সেই ক্ষেত্রে তাদেরকে উল্লেখ করে তাদের সম্পর্কে কথা বলা, বিবৃতি প্রদান করা এটা কখন হয় যখন তাদের ওপর সরকার নির্ভর করবে।”

সংবাদ সম্মেলনে মহানগর দক্ষিনের আহবায়ক আবদুস সালাম, যুগ্ম আহবায়ক নবী উল্লাহ নবী, ইউনুস মৃধা, মোশাররফ হোসেন খোকন, আবদুস সাত্তার, এসকে সেকান্দার, হারুনুর রশীদ, মুনির হোসেন চেয়ারম্যানম, আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান ফয়েজ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।