নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে এ সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে–মির্জা ফখরুল

আপডেট: ডিসেম্বর ২৪, ২০২১
0

গাজীপুরে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

* দানবীয় সরকারকে উৎখাত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে
* এ সরকারের বিদায়ের ঘন্টা বেজে গেছে

গাজীপুর সংবাদদাতাঃ বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে নির্বাচন কমিশন গঠন করার আগে অবশ্যই বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারকে পদত্যাগ এবং একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কোন নির্বাচনই সুষ্ঠুভাবে করতে পারে নি নিবার্চন কমিশন। দেশের মানুষ দলীয় সরকারের অধীনে কোন হুদা মার্কা নির্বাচন চায় না। এ সরকারের বিদায়ের ঘন্টা বেজে গেছে। তাই আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। একটা উত্তাল গণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এ দানবের সরকারকে পরাজিত করে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করি। এটাই হোক আমাদের আজকের শপথ।
তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনকে ভয় পায় না, বরং আওয়ামী লীগই নির্বাচনকে ভয় পায়। অথচ আওয়ামীলীগের নেতারা প্রায়ই বলেন বিএনপি নির্বাচনকে ভয় পায়, বিএনপি গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে না, তাই তারা নির্বাচনে আসে না। আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনকে ভয় না পায় তাহলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে দেখুন কারা আসে, আর কারা ভয় পায়।

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে শুক্রবার বিকেলে জেলা শহরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে গাজীপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

বিএনপি’র ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহবায়ক সাবেক এমপি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে জেলা বিএনপি’র সদস্য-সচিব কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল ও মহানগর বিএনপি’র সদস্য-সচিব মোঃ সোহরাব উদ্দিনের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি হাসান উদ্দিন সরকার ও ডা. মাজহারুল আলম, বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবু, সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ূন কবীর খান, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমান, মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের জেলা সভাপতি অ্যাড. সিদ্দিকুর রহমান, মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক সালাহউদ্দিন সরকার, সাখাওয়াত হোসেন সবুজ, কাউন্সিলর হান্নান মিয়া হান্নু, জয়নাল আবেদীন প্রমূখ।

মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদেরকে বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছিলেন। আর আওয়ামী লীগ তা ধ্বংস করে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে দেশের জনগন দুরে সরে গেছে, এটা বুঝতে পেরে আওয়ামীলীগ এখন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চাচ্ছে। তাই আওয়ামীলীগ এখন সংলাপের নামে নতুন নাটক শুরু করেছে। তারা সং অর্থাৎ জোকারদের নিয়ে আলাপ করছে। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ভাল নির্বাচন কমিশন গঠন করার কথা বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে বঙ্গভবনে দাওয়াত করছেন। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন কি করবে। আওয়ামীলীগ সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছে, তখনে থেকে তারা স্বাধীনভাবে কোন কাজই করতে পারে নি। এখন আর কেউ ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে যায় না। অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে ৪শ’র বেশি ইউনিয়ন পরিষদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। তাই কোন দলীয় সরকারের অধীনে নয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচন দিতে হবে।

তিনি বলেন, গাজীপুরের এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে সারা দেশের মানুষের মনোবল বেড়ে যাবে। দেশের মানুষ এগিয়ে আসবে তাদের ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য, তারা এগিয়ে আসবে তাদের অধিকার রক্ষার জন্য, তারা এগিয়ে আসবে গনতন্ত্র রক্ষার জন্য। কেউ কাউকে কোন কিছু দিয়ে দেয় না। আমাদেরকে আমাদের হিস্যা আদায় করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আওয়ামীলীগ বা কোন ব্যক্তি এ দেশের প্রভু বা মালিক নয়। এদেশের মালিক হচ্ছে জনগণ। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় এ দেশ, পুলিশ, র‍্যাব, প্রশাসন ও বিচারকসহ সবাই চলে। তাই আপনারা যারা প্রশাসনে বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে আছেন, আপনারা কখোনই সংবিধানকে লঙ্ঘন করবেন না। সংবিধান জনগনকে রক্ষা ও তাদের নিরাপত্তার জন্য আপনাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছে, কোন ব্যাক্তি বা দলের নিরাপত্তার জন্য। তাই আমি বলছি, আপনারা জনগণের পাশে দাড়ান, তাদের কথা বুঝেন। দেশের মানুষ আজ পরিবর্তন চায়। তারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়, তার সুচিকিৎসা চায়। বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তিনি দেশের ও জনগণের জন্য গণতন্ত্র রক্ষায় আপোষহীন সংগ্রাম করেছেন। এখনও তিনি সংগ্রাম করছেন। তিনি মিথ্যা মামলায় আটক হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমরা অবিলম্বে তঁার মুক্তি চাই। তাঁর সুচিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

ফখরুল বলেন, দেশের মানুষ আজ কোথাও নিরাপদ নয়। আওয়ামীলীগ নির্বাচনের আগে কথা দিয়েছিল দেশের মানুষকে ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়াবে, কৃষকদের বিনামূল্যে সার দিবে। তারা তাদের সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে নি। এ সরকার সারা দেশের প্রায় ৪ হাজার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়েছে। শতাধিক সাংবাদিককে হত্যা করেছ। গাজীপুরে ক্রসফায়ার হয়েছে, গুম হয়েছে। সারাদেশে ৫’শর বেশি নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। সমগ্র দেশেই এ অবস্থা। যতদিন এ সরকার ক্ষমতায় থাকবে ততদিন দেশ ধংস হতে থাকবে। তাদের মেয়াদ ফুরিয়ে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৬ সদস্যের নামে আমেরিকা সরকার সেংশন জারি করেছে। আমেরিকায় তাদের প্রবেশাধিকার বন্ধসহ আরও নানা বিষয়ে বাধা দিয়েছে।

সভায় বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ফজলুল রহমান বলেন, বিনা চিকিৎসায় খালেদা জিয়া মারা গেলে জনগণ একশ বছর ধরে ঘৃণা করবে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানী এবং ১১জন সেক্টর কমান্ডারের নামও তারা উচ্চারণ করেনি। এ বিষয়টি ইতিহাসে কলংক হয়ে থাকবে।