পতিতাবৃত্তি করতে না চাওয়ায় খুন : হোটেল বৈশাখীতে ড্রাম থেকে নারীর লাশ উদ্ধারের ৫ বছর পর রহস্য উম্মোচন পিবিআইয়ের

আপডেট: জুলাই ২৮, ২০২২
0

গাজীপুর প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের আবাসিক হোটেলের স্টোর রুমে লুকিয়ে রাখা ড্রামের ভিতর থেকে এক অজ্ঞাত নারীর (২৫) লাশ উদ্ধারের প্রায় ৫ বছর পর রহস্য উদঘাটন করেছে গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। অনৈতিক সম্পর্ক করতে রাজী না হওয়ায় ওই নারীকে খুন করে মাটিতে পুঁতে রাখার জন্য লাশ ড্রামে লুকিয়ে রেখেছিল ওই হোটেলের মালিক ও কর্মচারীরা। এ ঘটনায় জড়িত হোটেলের ৩ কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- ময়মনসিংহের গৌরিপুর থানার পালোহাটি এলাকার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে জিয়াউর রহমান ওরফে সুমন (৪৫), একই জেলার ত্রিশাল থানার আমিরাবাড়ী এলাকার মৃত ইয়াসিন আলীর ছেলে কামরুল হাসান সবুজ (৩৮) এবং মুন্সিগঞ্জের টংগীবাড়ী থানার রাউৎভোগ এলাকার আয়নাল ফকিরের ছেলে আমির হোসেন ফকির (৩৩)। তারা সবাই গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া এলাকাস্থিত বৈশাখী আবাসিক হোটেলের কর্মচারী।

পিবিআই’র পুলিশ সুপার জানান, ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া এলাকাস্থিত বৈশাখী আবাসিক হোটেলের নীচতলার জেনারেটর রুমে লুকিয়ে রাখা একটি ড্রামের ভিতর থেকে অজ্ঞাত এক নারীর (২৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জয়দেবপুর থানায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। থানা পুলিশ প্রায় ৩ বছর মামলাটি তদন্ত করে রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পেরে আদালতে চুড়ান্ত রিপোর্ট “সত্য” দাখিল করে। আদালত স্বপ্রনোদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই গাজীপুর জেলাকে নির্দেশ প্রদান করেন।

পিবিআই’র তদন্তকালে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোঃ জামাল উদ্দিন তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সুমনকে ময়মনসিংহের মাসকান্দা এলাকা থেকে এবং আমিরকে মুন্সিগঞ্জের রাউৎভোগ এলাকার বাড়ি থেকে ও সবুজকে একই জেলার মালখানাগর চৌরাস্তা এলাকার ভাড়া বাড়ি হতে মঙ্গলবার ভোর রাতে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃতরা নিজেদেরকে জড়িয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আসামীদের নাম উল্লেখ করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এরপ্রেক্ষিতে ক্লুলেস এ ঘটনার প্রায় পাঁচ বছর পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়েছে।

তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃতরা বৈশাখী আবাসিক হোটেলে বিভিন্ন মেয়েদেরকে এনে অনৈতিক কাজে ব্যবহার করত হোটেল কর্মচারীরা ও তাদের সহযোগীরা। ঘটনারদিন ভিকটিমকে ওই হোটেলের রুমে রেখে বিভিন্ন মানুষকে দিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক করানো হয়। গ্রেফতারকৃতরা রাতে তাদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব করলে ওই নারী প্রত্যাখান করে। এনিয়ে তাদের মাঝে বাকবিতন্ডা হয়।

একপর্যায়ে জোর পূর্বক অনৈতিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করলে ভিকটিম বাঁধা দেয়। এতে তারা গলাটিপে ওই নারীকে খুন করে লাশ খাটের নীচে লুকিয়ে রেখে বিষয়টি হোটেল মালিক ইকবাল হোসেনকে জানায়। পরে হোটেল মালিকের নির্দেশে হত্যাকারীরা লাশটি মাটিতে পুঁতে রাখার জন্য ড্রামে ভরে হোটেলের পিছনে নিয়ে যায়। কিন্তু লোকজনের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে তারা পঁুতে রাখতে না পেরে লাশটি নিয়ে পূনরায় হোটেলের স্টোর রুমের মধ্যে রেখে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় বলে গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।