পলিটিক্যাল স্টান্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভিত্তিহীন বানোয়াট কথা বলছেন—-মীর্জা ফখরুল

আপডেট: জুন ২২, ২০২৩
0

‘বিএনপি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা বাংলাদেশকে বিদেশীদের কাছে বন্ধক দিয়ে ক্ষমতা আসতে চায়-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এহেন বক্তব্যকে ‘সর্ববৈ মিথ্যা-বানোয়াট-ভিত্তিহীন’ বলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এই কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘‘ এটা(প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য) সম্পূর্ণভাবে বানোয়াট, ভিত্তিহীন, সর্ববৈ মিথ্যা কথা। এই কথাগুলো বলে উনি(শেখ হাসিনা) কিছু সুবিধা পেতে চান।”

‘‘ সেই সুবিধা যদি উল্টো হয়..এটা উনি বুঝেন না।”

বুধবার সুইজারল্যান্ড সফর নিয়ে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ এখনও যদি বলি যে, না, ওই সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কাউকে লিজ দেব, তাহলে আমার ক্ষমতায় থাকার কোনো অসুবিধা নাই, আমি জানি সেটা। কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না।”

‘‘ ২০০১ সালে বিএনপি ‘গ্যাস বিক্রি করার’ মুচলেকা দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল। এখন তারা দেশ বিক্রি করবে, নাকি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়?আমি তো এটুকু বলতে পারি যে, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের কন্যা। আমার হাত থেকে এদেশের কোনো সম্পদ কারও কাছে বিক্রি করে আমি ক্ষমতায় আসতে চাই না। ওই গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।”

প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ উনি(শেখ হাসিনা) কি এসব কথা বলেছেন উনার অফিশিয়াল পজিশন এজ প্রাইম মিনিস্টার অর এজ প্রেসিডেন্ট অব আওয়ামী লীগ। প্রাইম মিনিস্টার হয়ে এই বক্তব্য দিয়েছেন… তাই না।”

‘‘এখন আমি তাকেই(প্রধানমন্ত্রী) জিজ্ঞাসা করতে চাই, উনারা যে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করেছেন সেই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বা যেকেনো নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে যখন রং ইনফরমেশন দেয়া যায়, মিথ্যা কথা বলা যায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট হয় না, মামলা আসে না।”

‘‘ এখন কি এটা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা করবে কিনা যে, উনি বিএনপির বিরুদ্ধে এই অভিযোগটা এনেছেন… পড়ে কিনা? মিথ্যা অভিযোগ, সর্ববৈ মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ। তাহলে এটা (ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে) পড়ে। এটা আপনাদের(গণমাধ্যম) কাছে প্রশ্ন থাকলো।”

‘এটা উনার পলিটিক্যাল স্টান্ড’

সরকার প্রধানের এই বক্তব্য পলিটিক্যাল স্ট্যান্ড কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এটা সম্পূর্ণ স্টান্ড, উনি এটা বলে…. তারপরে উনি যেটা বলেছেন, আমি এক বিন্দু জীবন থাকতে দেবো না… এই কথাটা সম্পূর্ণ স্টান্ড। উনি যখন হেরে গেলেন ২০০১ সালের নির্বাচনে তখনও উনি একই কথা বলেছেন।”

‘বিএনপি দেশ বিক্রি করেনি’ স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করেছে’

মির্জা ফথরুল বলেন, ‘‘ বিএনপি একটা দল যে নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, স্বাধীনতার রক্ষায় সব সময় ত্যাগ স্বীকার করে এসে্ছে। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন, লড়াই করেছেন।”

‘‘ পরবর্তিকালে দে্শনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়ে, তখনও তিনি পুরোপুরিভাবে এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কাজ করেছেন। এখনো আজ পর্যন্ত কখনো কেউ করে নাই যে, বিএনপি দেশবিক্রি করেছে বা দেশের কোনো জিনিস দিয়ে দিয়েছে।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ কিন্তু তাদের(ক্ষমতাসীন সরকার) বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ আছে। নিজেও বলেছেন, আমরা তো সব দিয়ে দিয়েছি… বলে নাই। কাকে দিয়েছেন? সেই বিষয়টা আপনারা জানেন.. ঠিক না।এখন প্র্রশ্নটা হচ্ছে এই জায়গা।”

‘‘ মানুষকে ওনারা এতো বোকা ভাবেন কেনো? জনগনকে এতো বোকা ভাবেন কেনো? এই সমস্ত বলে যে পার পাবেন না এটা তার বুঝা উচিত।”

‘শেখ হাসিনা প্রতি আহ্বান’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমার তার(শেখ হাসিনা) কাছে আহ্বান… এখনো সময় আছে দয়া করে জনগনের যে ভাষা, জনগনের যে আশা-আকাংখা সেটা দেখুন এবং যে চাহিদা সেটা দেখুন। জনগন চাচ্ছে এই মুহুর্তে আপনারা সরে যান… এটাই চাচ্ছে জনগন।”

‘‘ রাইট নাউ । ইউ টক টু এ্যানি বডি। আমি আজ পর্যন্ত একজন রিকশা শ্রমিক পাইনি, একজন সিএনজি চালক পাইনি, একজন এই যে গার্ডের কাজ করে, দোকানে কাজ করে একজন পাইনি যে, তারা বলবে যে, হাসিনা থাকুক। কিছু সুবিধাভোগী এবং এই সময়ের বেআইনিভাবে অর্থ উপার্জনকারী উচ্ছিষ্টভোগী লোক ছাড়া একথা আর কেউ বলেছেন না।”

তিনি বলেন, ‘‘ পত্রিকায় সেটা এসছে যে, সাহায্য চাওয়ার কথা বলেছেন। এটা তো তার পররাষ্ট্র মন্ত্রীই বলেছেন আপনারা সবাই সেটা জানেন। একবার ভারতের কাছে বলেছেন, একবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও বলেছেন যে, আপনারা একটু সাহায্য করেন যাতে করে বিএনপি নির্বাচনে আসে, তাদের যেন সাহায্য করেন.. আবার যেন তাদেরকে ক্ষমতায় থাকতে দেয়া হয়। উনি স্বীকার করেছেন।”

‘‘ আপনি তাকে(শেখ হাসিনা) প্রশ্ন করছি যে, তাহলে কি নিশ্চিত হয়ে গেছে যে উনি ক্ষমতায় থাকতে পারছেন না, নিশ্চিত হয়েছেন… এই প্রশ্নটা আসছে কেনো?”

ফখরুল বলেন, ‘‘ এই জিনিসগুলো … আমরা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল, আমরা ইচ্ছা করলেই বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে পারি না। উনাদের মন্ত্রীরা পারেন, উনারা পারেন, উনিও পারেন।”

‘‘ কিন্তু আমরা সেটা পারি না। আমরা যখন কথা বলি, দায়িত্ব নিয়ে কথা বলি… উইথ অল রেসপনসেবেলিটিজ। সেজন্যই আমি বলছি যে, এখন কি ডিজিটাল সিকিউরিটিজ অ্যাক্টে মামলার হওয়ার সময় হয়ে গেছে উনি যেসব মিথ্যা কথা বলছেন। মিথ্যা বানোয়াট এবং কথাগুলো কি ভয়ংকর কথা। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দিয়ে দেয়ার কথা। আপনার একটা দেশ সেন্ট মার্টিনকে দেয়ার কথা বলেন, সেন্ট মার্টিন চাচ্ছেন তাদের। আপনি চিন্তা করতে পারেন যে, সেই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কটা কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে।”

তিনি বলেন, ‘‘ তারা(যুক্তরাষ্ট্র) কালকেই স্টেটম্যান্ট দিয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে এবং তারা এ্ভাবে কোনো কথাই বলতে পারে না। ওয়াট এ্যানি ব্লাপ।”

‘‘ এই ক্ষেত্র তো উনি তৈরি করেছেন। আমরা সবসময় বলে এসেছি যে, আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমেত্ব বিশ্বাস করি, আমরা বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটি আমরা কাউকে দেয়ার পক্ষপাতি না, আমাদের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে প্রতিরোধ করব।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মহানগর দক্ষিনের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন খোকন, আবদুস সাত্তার, লিটন মাহমুদ, হাজী মো. মনির হোসেন, আনম সাইফুল ইসলাম, মহানগর দক্ষিন যুব দলের সাঈদ হাসান মিন্টু, খন্দকার এনামুল হক এনাম, মহানগর দক্ষিন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইদ মোরশেদ পাপ্পা, মহানগনর দক্ষিন কৃষক দলের হাজী মো. কামাল হোসেন, মোয়াজ্জেম হোসেন বাদশা ও পূর্ব ছাত্র দলের মোহাম্মদ আল আমিন প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।