পাক উর্দীদের মতো পুলিশ যেভাবে ধমকাচ্ছে মনে হচ্ছে দেশের মালিকানা তারা ভাগ করে নিয়েছেন– রিজভী

আপডেট: মার্চ ২৮, ২০২২
0
এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী

পাক উর্দীদের মতো পুলিশ যেভাবে ধমকাচ্ছে মনে হচ্ছে দেশের মালিকানা শেখ হাসিনার সঙ্গে তারা ভাগাভাগি করে করে নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী।

আজ দুপুরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ডিএমপি কমিশনারের কটুক্তির তীব্র সমালোচনা করে এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেছেন, ‘রাজারবাগের একই অনুষ্ঠানে পুলিশের আইজি বেনজির আহমেদও বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে তীব্র্র রোষ নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ভাষায় দেশের আপামর গণতন্ত্রকামী মানুষকে ধমক দিয়েছেন।

তাচ্ছিল্যভরে নানা কটু মন্তব্য করেছেন। পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানি উর্দী পরা কর্মকর্তারাও এভাবে গণতন্ত্রকামী মানুষকে বাংলা-উর্দু মিলিয়ে ধমক দিতেন। শেখ হাসিনার নির্দেশে গত তেরো বছরে বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, আলেম-উলামা এবং ভিন্নমতের জনগণের ওপর দফায় দফায় যে গণহত্যা এবং খুন, গুম, জুলুম, নিপীড়ণ চালানো হয়েছে তাতে বেনজীর আহমেদের ভূমিকা কি ছিল তা জনগণ ভাল করেই জানে।

তিনি প্রকাশ্যে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনরত মানুষকে গুলি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। জনগণের প্রতি তার হুমকি এবং নির্দেশ দেওয়ার ভাষা এবং ভাবভঙ্গী দেখে মনে হতে পারে লোকটি হয়তোবা শেখ হাসিনার সাথে বাংলাদেশের মালিকানা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। ‘

তিনি বলেন, ‘বেনজির আহমেদের বন্দুক-পিস্তলের মাথায় যেহেতু গণতন্ত্রকামী বহু মানুষের জীবন-মৃত্যু নির্ভর করছে, সুতরাং তার সম্পর্কে আপাতত আর বেশি কিছু না বলাই নিরাপদ। তার উপর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর জনগণ ভেবেছিলো কিছুটা হলেও দেশে গুম-খুনের ভয়ের পরিবেশ কেটে যাবে। কিন্তু গত পরশু তার বক্তব্যে বোঝা গেলো তিনি বাংলাদেশে বিদ্যমান কর্তৃত্ববাদী শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করতে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতেও দ্বিধা করবেন না।

এক্সটেনশন সার্ভিসে থাকা ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে অশ্রাব্য ভাষায় মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের দোষ হলো সত্য কথাটাও ঠিকমত বলতে পারে না’।

এর অর্থ হচ্ছে, প্রতিদিন ওবায়দুল কাদের-হাছান মাহমুদ সাহেবরা বিএনপি সম্পর্কে মিথ্যাচার-অপপ্রচার চালানোর পরও হয়তো পুলিশ কর্মকর্তা শফিকুল সাহেবের মনে হয়েছে, আওয়ামী লীগ পারছেনা তাই আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখতে হলে পিস্তল-বন্দুক সার্ভিসের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে পুলিশের ‘লিপ সার্ভিস’ও দেয়া উচিত।

তবে ইতিহাস সাক্ষী, যারা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য চূড়ান্ত বিপদের কারণে হয়েছিল, তাদের নাকি মরহুম শেখ মুজিবের ড্রইং পর্যন্তও এক্সেস ছিল। সুতরাং এখনো প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তারা বক্তব্য-মন্তব্যে নিজেদেরকে আওয়ামী লীগারদের চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার প্রমাণ করতে চান তারাই আওয়ামী লীগের বিপদের কারণ হয়ে উঠবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য এবং দেশবাসীর প্রতি পুলিশ প্রধানের বক্তব্যে আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

একটি দেশে রাজনীতি, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, রাজনৈতিক শিষ্টাচার হারিয়ে গেলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এমন বেপরোয়া হয়ে উঠে। দেশে এখন সেই অবস্থাই চলছে। দেশে কোনো সভ্য এবং গণতান্ত্রিক সরকার থাকলে চাকুরী বিধি লঙ্ঘনের দায়ে এই দুই পুলিশ কর্মকর্তার এতক্ষণে জেলে না হলেও চাকুরী থেকে পত্রপাঠ বিদায় হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু সেটি হয়নি, কারণ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদরা এখন সাইডলাইনে আর নিশিরাতের সরকারটি চলছে র‌্যাব-পুলিশের বন্দুকের উপর ভর করে।