পিপিপি এর আওতায় গৃহীত প্রকল্পসমূহকে অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনজনীত লস ও ড্যামেজ এর খরচ অন্তর্ভূক্ত করতে হবে

আপডেট: আগস্ট ২৫, ২০২১
0

একশনএইড বাংলাদেশ, ঢাকা, ২৫ আগস্ট ২০২১ঃ
পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির (পিপিপিএ) মাধ্যমে গৃহিত প্রকল্পে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়-ক্ষতির খরচকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। আমাদের দেশে অর্থায়নের একটি বড় অংশ আসে বেসরকারি খাত থেকে। আমাদের বার্ষিক জিডিপির ৮১ শতাংশ আসে বেসরকারি খাত থেকে যেখানে ১৯ শতাংশ আসে সরকার থেকে।
বুধবার (২৫ আগস্ট) পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি (পিপিপিএ) এর সঙ্গে একশনএইড বাংলাদেশ এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইসিসিসিএডি) – যৌথভাবে আয়োজিত “এড্রেসিং ক্লাইমেট চেইন্জ ইন্ডিউজড লস এন্ড ডেমেজ ইন বাংলাদেশ ইন পার্টনারশীপ উইথ প্রাইভেট সেক্টর’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।

তিনি আরো বলেন, ‘‘জলবায়ুজনিত ক্ষয়-ক্ষতির অর্থায়নে বেসরকারি খাতকে সাথে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়গুলিকে সরকারের গৃহীত ও বাস্তবায়িত প্রতিটি প্রকল্পের সাথে যুক্ত করতে হবে। এসব প্রকল্পে যদি ক্ষয়-ক্ষতির খরচ যুক্ত করা যায় তবে আমরা সহজেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত ক্ষয়-ক্ষতি নিরসনে কাজ করতে পারবো। এক্ষেত্রে তিনি প্রশমন বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে বলেন। তিনি পরবর্তী প্রজন্ম ও সুন্দর আগামীর জন্য একাজে বেসরকারি খাতকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করার উপর জোর দেন।
‘অভিযোজনের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। আমরা এখন জলবায়ু প্রভাবের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিলেও কিছু সময় পরে আমরা আর মানিয়ে নিতে সক্ষম হব না। অভিযোজন কোন সমাধান নয়। আমাদের প্রশমনের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।’
ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য এবং পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রে নতুন উপায় বের করার উপর জোর দিয়ে বলেন ‘আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে ২০২০-২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ জলবায়ু অর্থায়নের জন্য আর্থিক প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। প্যারিস চুক্তির অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় যথাযথভাবে ঝুঁকি চিহ্নিত ও সে ঝুঁকির মূল্যায়নের কথা বলেন। এসময় তিনি এ কাজে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে আমাদেরকে তাদের জন্য লাভজনক ব্যবসার দ্বার উন্মুক্ত করতে হবে।
ক্ষয়-ক্ষতি সব দেশের জন্য সমান নয়। এটি সামাজিক বা আঞ্চলিক হতে পারে। সেমিনারে জলবায়ু পরিবর্তন মূল্যায়নের সময় এই ক্ষেত্রগুলো বিবেচনা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন সেমিনারে উপস্থিত বিশেষ অতিথি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মোস্তফা কামাল। তিনি বেসরকারি খাতকে দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু অর্থায়নের জন্য সরকারি খাতের সাথে হাত মিলানোর আহ্বান জানান।

সেমিনারের সভাপতি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির (পিপিপিএ) সচিব ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা আফরোজ বলেন, যে কোনো প্রকল্প শুরু করার সময় জলবায়ু পরিবর্তন এবং এ সংক্রান্ত ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া উচিত এবং পিপিপি কেও একই সাথে অবকাঠামো জলবায়ু প্রতিরোধী কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি জানান, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়-ক্ষতির মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ চালু করছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার বেনোই প্রেফনটেইন বলেন, সামনেই কপ-২৬ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি সম্ভাব্য সমন্বয়ের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে তা বিশ্বমঞ্চে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে এ সম্মলনকে একটি সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের কাছে কোন ধরনের বার্তা পাঠানো উচিত তা বোঝার চেষ্টা করছি।
ডিএফআইডি বাংলাদেশের প্রধান শ্রীমতি জুডিথ হারবার্টসন ভবিষ্যতে ক্ষয়-ক্ষতি কমাতে বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য অর্থায়নের ওপর জোর দেন।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশের ভূমিকার কথা প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলায় আগাম সতর্কতা এবং আগাম পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে অগ্রগামী।
ইউএনডিপি আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় ছাড়াও সেমিনারে উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা
উল্লেখ করেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাসে বেসরকারি খাতের যথেষ্ট দক্ষতা এবং সম্পদ রয়েছে। একটি সুন্দর সমাজ নির্মাণে এই দক্ষতা এবং সম্পদ আমরা কাজে লাগাত পারি। এ কাজে পুরোপুরিভাবে সরকারি খাতের উপর নির্ভর না করে আমাদের উচিত পিপিপি ভিত্তিতে সবকিছু সম্পন্ন করা। তাঁরা আরো বলেন বেসরকারি খাত কেবল অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করে না বরং ভবিষ্যতের পূর্বাভাসও দিতে পারে।
অন্যদিকে জলবায়ু আলোচনায় ক্ষয়-ক্ষতি বিষয়ে যথেষ্ট জোর দেওয়া হয় না বলে মন্তব্য করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. মুনজুরুল হান্নান খানের। ওয়ারশ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে একটি জাতীয় প্রক্রিয়া চেষ্টা করা হয়েছিল। এই প্রক্রিয়াটি চালু থাকলে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করা সহজ হবে বলে জানান তিনি।
ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইসিসিসিএডি) পরিচালক ড. সালেমুল হক বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে, এবং এর সঙ্গে মোকাবিলার জন্য আমাদের আরও ভালোভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন ড্যামেজ মেরামত করা যেতে পারে তবে কোনও কিছুর লস পুনরুদ্ধার করা যায় না।

অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি আমরা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এটিকে বৈশ্বিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে আমাদের অতিরিক্ত তহবিল দরকার হবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়–ক্ষতি জন্য বিষয়গুলো আমলে নিবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন একশনএইড বাংলাদেশে এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির।