পুঁজিবাদের সর্বশেষ সংকট চলছে: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

আপডেট: ডিসেম্বর ১৩, ২০২১
0

আমরা একটা অস্বাভাবিক সময়ের মধ্যে আছি। এখন পৃথিবী চরম সংকটের মধ্যে চলে
এসেছে। এটা করোনা ভাইরাসের আক্রমনের সংকট নয়। এটা পুঁজিবাদের সর্বশেষ
সংকট। এখন মানুষের সভ্যতা ও সাম্যের প্রশ্ন এসেছে।

মানুষিক এই পুরনো ব্যবস্থাকে রক্ষা করবে? ব্যক্তি মালিকানার পৃথিবীর যে হাজার হাজার বছরের
পুরনো ইতিহাস সে ইতিহাসকে প্রলম্বিত করবে? এটা বোঝা গেছে এই পথে ধ্বংস
অনিবার্য। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ১৪১তম জন্মদিন উপলক্ষে
আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ঢাকা মহানগর ভাসানী
অনুসারী পরিষদের আহবায়ক হাবীবুর রহমান রিজুর পরিচালনায় ভাসানী অনুসারী
পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির
বক্তব্য রাখেন এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী,বিশেষ অতিথি
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক
ড. মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক আসিফ নজরুল,মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, মেজর
(অব: ) মোঃ হানিফ, হক কথা পত্রিকার সম্পাদক ইরফান বারী, ৬৯‘ শহীদ আসাদের
ছোট ভাই ডাঃ নূরুজ্জামান,ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য
আক্তার হোসেন প্রমূখ।

এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, এখন মানুষকে বলা হচ্ছে
অসামাজিক হও। এবং মানুষকে বাঁচার জন্য অসামাজিক হতে হচ্ছে। অন্য মানুষদের
থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে, মুখোশ পড়তে হচ্ছে, পরিচয় নিশ্চিহ্ন করতে হচ্ছে।
আদিম যুগের অসহায় ও একাকীত্ব এবং ভীতির যুগে আমাদের ঠেলে দিচ্ছে এই
পুঁজিবাদ। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এসব অনেক আগেই জানতেন। তিনি
যখন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বলছেন তখন তিনি জানতেন এটার ভিতরে পুঁজিবাদ
রয়েছে। তিনি পুঁজিবাদের লড়াইটাই করছিলেন।আজকে এই পৃথিবীতে পুঁজিবাদের
চরম সংকট, ফ্যাসিবাদের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে মানুষ এই গ্রহতে
বসবাস করতে পারবে কিনা? মানুষ নয় কেবল কোন প্রাণী বসবাস করতে পারবে না।
কারণ এই গ্রহের প্রকৃতি ধ্বংস হয়ে যাবে। আর এসবের পিছনে রয়েছে
পুঁজিবাদ। মওলানা এজন্যই পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে ছিলেন। কাজেই এখন
পুঁজিবাদবিরোধী আন্দোলন হচ্ছে এবং প্রত্যেক দেশেই এটা হবে। নতুন যে সমাজ
প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যার ওপর এই মনুষ্য জাতির ভবিষ্যত নির্ভর করছে। এজন্য
পুরাতন যে ব্যক্তি মালিকানার পৃথিবী সেটাকে বদলে আমরা সামাজিক মালিকানার
পৃথিবীতে যেতে পারছি না। এবং এই সামাজিক মালিকানার আন্দোলনে ছিলেন
ভাসানী, তিনি বুঝেছিলেন এই আন্দোলন করতে হবে। আমরা যতই সামাজিক আন্দোলনের
নিকট যেতে পারবো তত দ্রুত আমরা মুক্তি দিকে ধাবিত হবে। ভাসানীর স্বপ্ন
ছিল রাষ্ট্রের সামাজিক মালিকানা। রাষ্ট্র হবে কতিপয়ের নয় সকল মানুষের।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ ডঃ মাহবুব উল্লাহ বলেন,মওলানা আবদুল
হামিদ খান ভাসানীর নাম মানুষ কেন ভুলে গেছে বলতে গিয়ে এ অর্থনীতিবিদ
বলেন, যারা জীবদ্দশায় রাষ্ট্রের ক্ষমতায় যেতে পারে না,মৃত্যুর পর তার
তাদের উদ্যোগ,প্রয়াস ও যত ভালো কাজেই থাকুক না কেন তারা আলোচনায় আসে
না। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এই ধরনের মানুষদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার
জন্য পাঠ্যপুস্তক সহ অন্যান্য মাধ্যমে ভাসানীর ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। আর
মাওলানা ভাসানীকে ভুলে যাওয়ার পিছনে ইতিহাস বিকৃতি ও একটা কারণ। এজন্য
নতুন প্রজন্ম মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী কে চেনেন না। আর মাওলানা
ভাসানীকে চেনাতে হলে তার দেখানো পথেই ক্ষমতায় যেতে হবে বলে মনে করেন এই
অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের চেয়ারম্যান
আসিফ নজরুল বলেন, ভাসানীকে অপ্রাসঙ্গিক বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের
বলা হয় পুরো বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন একজন ব্যক্তি। পাকিস্তানি বর্বর
বাহিনীর মতো এত বড় একটি বাহিনী এবং রাজনৈতিক শক্তিকে কোনভাবেই কি
এককভাবে রুখে দেওয়া সম্ভব ছিলো? অথচ ভাসানীসহ আরো কত মানুষের অবদান আছে
এই স্বাধীনতার পিছনে। তাদের বাদ দিয়ে শুধু একজনের কীর্তি গাওয়া হয়।
এজন্যইতো অন্যরা সুযোগ পেলে তার কীর্তি মুছে ফেলার চেষ্টা করে। এই ধরনের
জঘন্য মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। দেশে জাতীয় আইডলের অভাব
আছে। মাওলানা ভাসানী থাকতে আর কোন আইডল লাগে নাকি? আমাদের সবার উচিত
মাওলানা ভাসানীর আদর্শক ও রাজনীতিকে খুব সুন্দর ভাবে সবার কাছে পৌঁছে
দেওয়া।

আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব
শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, পত্রপত্রিকায় বলা হয় বঙ্গবন্ধু না থাকলে
দেশ স্বাধীনতা না। আমি তার অবদানের কথা অস্বীকার করছি না তবে এটাকে
ইতিহাস বিকৃতি হিসেবে দাবী করছি। প্রথম বাংলাদেশ বা আঞ্চলিক
স্বায়ত্তশাসন এর কথা কোন এক সম্মেলনে বলেছিলেন মাওলানা ভাসানী। তখন ওই
সম্মেলনের মঞ্চ থেকে কিছু মানুষ আলাদা হয়ে আলাদা মিটিং করে বলার চেষ্টা
করেছিলেন মাওলানা ভাসানী পাকিস্তান ভাঙ্গার চেষ্টা করছেন। পরবর্তীতে
ভাসানীর থেকে সহযোগিতা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষকে
এক করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে। বঙ্গবন্ধু না থাকলে বাংলাদেশ হত না এটা
ভুল। ১২ ই ডিসেম্বর মাওলানা ভাসানীর ১৪১ তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এই
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করার কথা ছিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি
ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি এই আলোচনা
সভায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি।