পুলিশের নির্যাতনে নয়, সড়ক দূর্ঘটনায় ব্যবসায়ী রবিউলের মৃত্যু হয়েছে — জিএমপি কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩
0


তবে পুলিশের গাফলতির প্রমাণ মিলেছে

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ” গাজীপুর মহানগরের বাসন থানাধীন ভোগড়া পেয়ারাবাগান এলাকার গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম পুলিশের নির্যাতনে মারা যায় নি। তিনি সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তবে তার মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের দায়িত্ব পালনে গাফলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত কমিটির মাধ্যমে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে সোমবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম। এসময় জিএমপি’র বিভিন্ন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

জিএমপি কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মোবাইল অনলাইনে বিট কয়েনের মাধ্যমে জুয়া খেলার অভিযোগে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে আটক করে বাসন থানা পুলিশের দুই এএসআই মাহবুবুর রহমান ও নুরুল ইসলাম। গত ১৭ জানুয়ারি রাতে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। থানা থেকে বের হয়ে বাসায় ফিরার পথে সড়ক দূর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। তিনি থানা হেফাজতে বা পুলিশের নির্যাতনে মারা যান নি এটা নিশ্চিত। চিকিৎসকের সার্টিফিকেটে রবিউল ইসলামের মৃত্যু সড়ক দূর্ঘটনার কারনে হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া রবিউলের মৃত্যু সড়ক দূর্ঘটনার কারণে হয়েছে বলে তার পরিবারও দাবি করেছে।

জিএমপি কমিশনার বলেন, ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে ঘটনার দিন না-কি চারদিন আগে আটক করা হয়েছিল সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তার মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে নিহত রবিউলের পরিবারের সদস্য, তার বাসার আশপাশের মানুষজন এবং এর সঙ্গে যুক্ত অযুক্ত ৮৭ জনের সাক্ষাতকার নিয়েছেন। তবে তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বলেছেন রবিউলকে পুলিশ তার মৃত্যুর চারদিন আগেই আটক করেছিল। তবে রবিউল ইসলামকে নিহতের চারদিন আগে আটক করার কিছুটা সত্যতা পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, চারদিন আগেই রবিউল ইসলামকে আটক, উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে থানা থেকে রাতে ছেড়ে দেয়া, ছেড়ে দেওয়ার সময় দায়িত্ব নিয়ে তাকে বাড়ি পৌঁছে না দেওয়া, থানার সিসিটিভি ক্যামেরা বিকল হওয়াসহ প্রভৃতি বিষয় মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। এতে রবিউল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের দায়িত্ব পালনে গাফলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তিনি সংবাদ সম্মেলনে আরো বলেন, বাসন থানায় সিসিটিভি’র মনিটরিং ছিল। ঘটনার কয়েকদিন আগে কেন সিসিটিভি অকার্যকর ছিল তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিসিটিভি ক্যামেরা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে স্থাপন করা হয়েছে। কেউ কেউ হয়তো ভিন্ন বক্তব্য দিয়ে থাকতে পারেন। আমরা সিসিটিভি ক্যামেরার কার্যক্রম শক্তিশালী করার জন্য জিএমপি হেডকোয়ার্টার থেকে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছি। এতে কে বা কারা ক্যামেরা বন্ধ বা ক্ষতিসাধন করছে অথবা বন্ধ করে রাখছে তা ধরা পড়বে। তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে যেসব বিষয় হাতে পেয়েছেন তারই আলোকে বাসন থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মালেক খসরু খানের ব্যাপারে মহা পুলিশ পরিদর্শককে (আইজিপি) সুপারিশ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, ঘটনায় পরপরই ওই থানার দুইজন এএসআই মাহবুবুর রহমান ও নুরুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করা হয়েছে। এছাড়াও বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মালেক খসরু খানকে ঘটনার কয়েকদিন পর তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বরখাস্তের সুপারিশ করে মহা পুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি।

তিনি আরো বলেন, তদন্ত এখনও শেষ হয়নি, অধিক মেয়াদে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে কিছু বিষয় বেরিয়ে আসলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তাছাড়া রবিউলকে জুয়া খেলার যে অভিযোগে আটক করা হয়েছিল সে অভিযোগটি সঠিক ছিল কি না তাও তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা ঘটনা প্রসেডিংয়ের জন্য একটা সুপারিশমালা তৈরী করেছি, যার ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে বিস্তারিত বেরিয়ে আসবে। এ ঘটনায় অপরাধীদেও বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- জিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেলোয়ার হোসেন, উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (অপরাধ) খায়রুল ইসলাম।

প্রসঙ্গত, গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া পেয়ারাবাগান এলাকার (শাহনাজ গলি) ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম পুলিশের নির্যাতনে নিহত হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী একটি পুলিশ বক্সে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। এসময় তারা কয়েকটি মোটরসাইকেলসহ ওই পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ এবং প্রায় দুই ঘন্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সর্টগানের গুলি ছুড়েছে। এঘটনায় জিএমপি’র উপ-কমিশনার ও তার দেহরক্ষীসহ পুলিশের কয়েক সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ দু’টি পৃথক মামলা দায়ের করে।