`পুলিশ কর্মকর্তাদের দম্ভ ফেরাউনের চাকরদের সঙ্গে তুলনীয়’

আপডেট: আগস্ট ১৬, ২০২৩
0

‌জনগনের সরকার আসলে সব মৃত্যূর বিচার চাইবো
মাহমুদুর রহমান
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কাশিমপুর কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর ১৪ই আগস্ট রাতের প্রথম প্রহরে পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। পিজির বাকশালী ও শাহবাগী চিকিৎসকরা তাকে সঠিকভাবে চিকিৎসা করেছিল, নাকি ভারত ও শেখ হাসিনার যৌথ নির্দেশে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে এ নিয়ে যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর বিতর্ক চলছে। আজ সকালেই পত্রিকায় পড়লাম যে, পিজি’র যে আওয়ামী ডাক্তার (মোস্তফা জামান) সাঈদী ভাইয়ের চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন তিনি নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে কোন তদন্ত ছাড়া মন্তব্য করা সমীচিন নয়। দেশ কোনদিন ফ্যাসিস্ট হাসিনামুক্ত হলে আমরা হয়ত প্রকৃত বিষয় জানতে পারব। এর আগে একই ভাবে জামায়াত নেতা প্রফেসর ইউসুফ, আবদুস সোবহান, বিএনপির নাসিরউদ্দিন পিন্টু, এবং আমার বুয়েটের বন্ধু ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রহিম জেলখানায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বরণ করেছেন। কোনদিন জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সকল মৃত্যুর বিচার আমরা অবশ্যই চাইব। এখন বিচার চেয়ে কোন ফায়দা নাই।

তবে এই পর্যায়ে পাঠকদের একটি তথ্য জানিয়ে রাখা প্রয়োজন বোধ করছি। দিল্লির নির্দেশে তথাকথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সৃষ্টির অন্যতম উদ্দেশ্যই ছিল বিশেষভাবে তিনজনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া। তিনজনের মধ্যে আলী আহসান মুজাহিদ এবং সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা সম্ভব হলেও দেশব্যাপী সাধারণ জনগণের স্বত:স্ফূর্ত এবং অবিশ্বাস্য বিক্ষোভে বিচলিত হয়ে হাসিনার নির্দেশেই সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির দণ্ড রদ করে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় দিতে বাধ্য হয়েছিল। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে আমার দেশ পত্রিকায় স্কাইপ কেলেংকারির অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হলে বাংলাদেশের জনগণ তথাকথিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি নামধারী ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিবেক ও লজ্জাবিবর্জিত বশংবদদের কীর্তিকলাপ জানতে পেরেছিলেন। যাই হোক, আজ মাওলানা সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে নয়, তার বিরুদ্ধে আপীল বিভাগের বিচারের সেই রায় এবং জানাজাসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করবার জন্যই দীর্ঘ বিরতিতে সম্পাদকীয় লিখছি।
তৎকালিন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার (জুডিশিয়াল কিলিং এর অন্যতম কুশিলব) নেতৃত্বে আপীল বিভাগ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় প্রদান করে। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় এই আমৃত্যু কারাদন্ডের বিধানটিও হাসিনার বিচার বিভাগেরই আবিষ্কার। আমি আইনজ্ঞ নই। তবে শতাধিক রাজনৈতিক মামলার আসামী হওয়ার পর অনেকটা কৌতুহল বশত: দীর্ঘ কারাজীবনকালে বেশ কিছু আইনের বই পড়েছি। তাতে একদিকে যেমন সময় কেটেছে, অপরদিকে আইনবিষয়ে একেবারে মূর্খ না থেকে অন্তত: অর্ধশিক্ষিত হতে পেরেছি। অর্ধশিক্ষার সেই সীমিত জ্ঞান থেকে দলমত নির্বিশেষে, আপামর দেশবাসী এবং আইন বিশষজ্ঞদের কাছে তিনটি প্রশ্ন রাখছি,
১. যে ব্যক্তির আমৃত্যু কারাদন্ডের সাজা হয় তিনি মারা গেলে তার লাশ কি সাজামুক্ত নয়? নাকি লাশের এখতিয়ারও রাষ্ট্রের? স্মরণে রাখা প্রয়োজন যে সাজা কিন্তু আমৃত্যু, লাশের দাফনপর্যন্ত নয়।
২. যদি লাশ মুক্ত হয়, তাহলে সেই লাশের জানাজা ও দাফনে (মুসলমান হলে) অথবা চিতায় পোড়ানোতে (হিন্দু হলে) সরকার অথবা পুলিশের কোন ভুমিকা কেন থাকবে?
৩. দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির দাফনে পুলিশের অনুমতির কেন প্রয়োজন হবে?
আমার সাধারণ জ্ঞান বলে, দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি মারা গেলে তার লাশের ওপর রাষ্ট্রের সুপ্রীম কোর্টের রায় আর প্রযোজ্য নয়। ব্যক্তির আত্মা যেমন মুক্তি পেয়ে সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রত্যাবর্তন করে, তেমনই ব্যক্তির লাশের হকদার একমাত্র তার পিতামাতা, স্ত্রী, সন্তান এবং ভাইবোন। সেই আপনজনদেরই শেষকৃত্যের বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার একমাত্র অধিকার থাকা উচিৎ। কিন্তু, বাংলাদেশে তো এখন ইবলিশের রাজত্ব চলছে। তাই রাষ্ট্রের পুলিশ সেই ইবলিশের পান্ডাদের ভুমিকায় অবতীর্ণ। রাজধানীর পুলিশের কর্তার কি অধিকার আছে একজন মুসলমানের জানাজার অনুমতি দেয়া অথবা না দেয়ার? তার কাছে অনুমতি চাইতেই বা হবে কেন? ডি এম পি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক এবং তাবৎ পুলিশ কর্মকর্তাদের দম্ভ ফেরাউনের চাকরদের সঙ্গে তুলনীয়।

আমি মাওলানা সাঈদীর দ্বিতীয় পুত্র শামীম সাঈদীর ইউ টিউবে লাইভ বক্তব্য শুনেছি। পিতার মৃত্যুর সময় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। দু;সবাদ শুনে এক মূহুর্ত বিলম্ব না করে ছুটে এসেও শামীম পিতার জানাজায় শরিক হতে পারেন নাই। ইউ টিউবে তিনি প্রশাসনের কাছে আকুতি জানিয়েছিলেন যাতে তার পিরোজপুরে পৌঁছানো পর্যন্ত মাওলানা সাঈদীর জানাজা এবং দাফন বিলম্ব করা হয়। আমার জানা মতে স্থানীয় প্রশাসন মাওলানা সাঈদীর পরিবারকে বাধ্য করেছে শামীম সাঈদীকে ছাড়াই জানাজার নামাজ শেষ করতে। প্রশাসনের কাছে কেন সাঈদী ভাইয়ের ছেলেকে আবেদন জানাতে হলো? বাংলাদেশের জনগণ, আপনারা কোন জাহান্নামে নিরবে বসবাস করছেন? কেন প্রতিবাদে ফেটে পড়ছেন না। এই নিরবতার মাধ্যমে আপনারাও জালিমের পাপের ভাগী হচ্ছেন।
বাংলাদেশের মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বলছি। আপনারা হয়ত পাপের নগরী সডম এবং গমোরার নাম শুনেছেন। এই দুই নগরীর জনগণের অশ্লীলতার কারণে আল্লাহ উভয় নগরী ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। সেই ধ্বংস থেকে কেবল হজরত লুত (আ:]) এর পরিবার আল্লাহর অনুগ্রহে রক্ষা পেয়েছিলেন। হজরত লুত (আ:) এর স্ত্রী যেহেতু অবিশ্বাসীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন তাই তাকেও ধ্বংস করা হয়েছিল। দুই নগরীতেই এক শ্রেণীর বিশ্বাসী ব্যক্তি ছিলেন যারা অশ্লীল পাপাচারের কোন প্রতিবাদ করেন নাই। বিশ্বাসী শ্রেণীর সেই ভীরুতার অপরাধে পরম করূণাময় এবং চরম শাস্তিদাতা আল্লহতায়ালার হুকুমে তাদেরসহ ফেরেশতারা সডম এবং গমোরা নগরীদ্বয় ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। কাজেই সময় থাকতে জুলুম ও অবিচারের বিরুদ্ধে সমবেতভাবে আওয়াজ তুলুন।
এবার জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলি, আপনারা জালিমের সকল জুলুমের সহযোগী পুলিশদের ফুল দেওয়ার ভীরুতার সংষ্কৃতি বন্ধ করুন। সাহস ও ক্ষমতা থাকলে এই খুনী বাহিনীর বিরুদ্ধে সাধ্যমত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। দয়া করে এদের কাছে জানাজার জন্য কিংবা জনসভা করবার জন্য অনুমতি চাইতে যাবেন না। আর ক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি থাকলে, অন্তত: মনে মনে এদের ঘৃনা করুন। আত্বীয়-স্বজনদের মধ্যে পুলিশে কর্মরত কেউ থাকলে তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করুন। বিএনপির নেতৃবৃন্দের একাংশ আমাকে অতিবিপ্লবী এবং হঠকারী বলে বিদ্রূপ করে থাকেন। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। হয়ত, আমার আজকের পরামর্শের জন্য জামায়াত নেতৃবৃন্দও ভীষণ বিরক্ত হয়ে বিএনপির নেতাদের সুরে সুর মেলাবেন। মহান অল্লাহতায়ালা সবাইকে সুপথে পরিচালিত করুন।
সম্পাদক, আমার দেশ

(লেখাটি আজকে প্রকাশিত দৈনিক আমার দেশ অনলাইন থেকে নেয়া )