প্রেসিডেন্ট বাইডেনের গণতন্ত্র সভায় অগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নেই; এটা লজ্জার কলঙ্কের—মীর্জা ফখরুল

আপডেট: নভেম্বর ১২, ২০২১
0

ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে সহিংসতার জন্য সরকারকেই অভিযুক্ত করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ আজকে চারিদিকে তাঁকিয়ে দেখুন, কী করেছেন তারা। আমার কথা নয়, আজকের খবরের কাগজ খুললেই দেখবেন- এতো বড় বড় রাম-দা, ছুরি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে।চিন্তা করা যায়।আবার মন্ত্রীরা বলছেন, না না এটা তেমন কিছু না, একটু সাধারণ ঝগড়া-ঝাটি।”

‘‘ আমরা পরিস্কার করে বলেছি, এই সব কিছুর মূলে হচ্ছে এই সরকার, সব কিছুর মূলে হচ্ছে শেখ হাসিনা। তারা অত্যন্ত সচেতনভাবে, পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করেছে, বাংলাদেশ থেকে সমস্ত সুস্থ চিন্তা-ভাবনা, মুক্তচিন্তা- এগুলোকে নির্বাসিত করেছে এবং রাজনীতিকে ধবংস করেছে….। উদ্দেশ্য একটাই- এখানে কেউ রাজনীতি করবে না। তারা ক্ষমতা দখল করে বসে থাকবে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ নির্বাচন কমিশন বলছে যে এরকম সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন হয়েছে। ওই যেটা আপনার সংঘর্ষ হয় তার দায়-দায়িত্ব আমাদের না। লজ্জা হয়, শরম নেই। এই ভদ্রলোকের(সিইসি) লজ্জা-শরম বলতে কিছু নেই।”

‘‘ এই বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থাকে তিনি ধবংস করলেন এবং নির্বাচনের যে চিন্তাভাবনা নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি সেটা সম্পূর্ণ ধুলিসাত করে আজকে কী করলেন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে? যেটা আমাদের সাধারণ মানুষরা এই নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট হয়, তারা জড়িত হয় সেটাকে তিনি শেষ করে দিলেন। পত্রিকায় দেখলাম যে, বড় বড় রাম দা, পিস্তল, লাঠিসোটা নিয়ে … ইতিমধ্যে গতকাল অনেক মারা গেছে।”

‘বাংলাদেশ অগণতান্ত্রিক দেশ’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আজকে কত বড় দূ:খ-লজ্জার যে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন একটা গণতন্ত্র সভা ডাকছেন। আমরা পত্রিকায় দেখেছি ১০০টা দেশকে ডাকছেন। আমরা এতো শান্তি পেতাম, ভালো লাগতো, নিজের মাথা উঁচু হয়ে দাঁড়াতো যে, আমরা একটা গণতান্ত্রিক দেশ বাংলাদেশ। আমাদের নামটা সেখানে নেই।”

‘‘ অর্থাত এই নেতা(শেখ হাসিনা) গত ১২/১৩/১৪ বছরে আমাদের দেশটা যে একটা গণতান্ত্রিক দেশ ছিলাম আমরা যার জন্য যুদ্ধ করেছি, লড়াই করেছি, যার জন্যে কেয়ার টেকারের মতো একটা ইউনিক সিষ্টেম আমরা নিয়ে এসেছিলাম যার মাধ্যমে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করতাম সেই দেশটাকে আজকে পরিচিত হচ্ছে কি একটা অগণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে।এর চেয়ে লজ্জার ব্যাপার, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের ব্যাপার আর কিছু হয় না।”

তিনি বলেন, ‘‘ এই সরকার এতোই ভিনডিকটিভ যে তারা অসুস্থ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিতসার জন্য বিদেশে যেতে দেয়নি। এতোই প্রতিহিংসা। এই প্রতিহিংসার আগুনে গোটা দেশকে জ্বালিয়ে পুঁড়িয়ে ছার-খার করে দিলো। আমি এজন্য বলছিলাম যে, রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট, প্রজা কষ্ট পায়। কোথাও শান্তি খুঁজে পাবেন না।”

‘‘ আপনি গ্রামে-গঞ্জে যান, চায়ের দোকানে বসেন দেখবেন মানুষের মধ্যে শান্তি-স্বস্তি যেটা কমফোর্ট বলি আমরা সেটা নাই। আপনি স্কুলে যান, কলেজে যান, মসজিদে যান কোথাও শান্তি নাই। কি জানি কী বলতে বলে ফেলি, কী জানি কী হয় এই একটা অশান্তি-অস্বস্তির মধ্যে আমরা আছি।”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে বলে মন্তব্য করে সকল রাজনৈতিক দলের জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।

‘রোহিঙ্গা : সরকারের উদ্দেশ্য অন্যরকম’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ এই সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসান চরে একটা রাজকীয় অবস্থান তৈরি করে দিয়েছে। কেনো? আপনাদের উদ্দেশ্য অন্যরকম। আপনারা এদেশে এটাকে একটা পারমানেন্ট ইস্যু হিসেবে আপনারা নিজেরা এখান থেকে ফায়দা লুটতে চায় না।”

‘‘ এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সরকার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানে কোনো ফলোপ্রসু কোনো কার্য্করী ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। কারা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাঁধা দিচ্ছে? দেখেন এই সরকারের বন্ধু ভারত, চীন, রাশিয়া। এতো বেশি ভারতের সাথে বন্ধুত্ব সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। তাহলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে পারছেন না কেনো।”

জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা‘র একাংশের উদ্যোগে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ‘দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

জাগপার সভাপতি খন্দকার লুতফুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহাদাতের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির আবদুস সালাম, খায়রুল কবির খোকন, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, ইসলামিক পার্টি আবুল কাশেম, জাগপার আওলাদ হোসেন শিল্পী প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।