বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে সারাবিশ্ব তাকিয়ে আছে — সিইসি

আপডেট: মে ১০, ২০২৩
0

গাজীপুর সিটি কপোর্রেশন নির্বাচনঃ

**অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের সামথের্যর সবটুকু করা হবে।
** নির্বাচন হতে হবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর।
** আমাদেরকে কালো টাকার ছড়াছড়ির সংষ্কৃতি থেকে ধীরে ধীরে উঠে আসতে হবে।

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে সারাবিশ্ব তাকিয়ে আছে। নির্বাচন অর্থহীন নয়, নির্বাচনের গুরুত্ব রয়েছে। আমেরিকা, ইউকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ আমাদের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে। আমরা কিন্তু তাদের মুখ চেপে ধরতে পারছি না। যদি সম্ভব হতো মুখ চেপে ধরতাম। কিন্তু পারব না। কারণ পৃথিবীটা এখন উন্মুক্ত।

গাজীপুরে যে নির্বাচন হচ্ছে এটার গুরুত্ব নির্বাচন কমিশনের কাছে অত্যাধিক। কারণ আগামীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এর আগে এতো বড় পরিসরের একটা নির্বাচন জাতীয়ভাবে অনেক গুরুত্ব বহন করবে। এজন্যই গাজীপুরের নির্বাচনটা একটা মডেল হোক, আমরা যেন একটা সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারি, সেজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। এই নির্বাচনটা যেন একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে তা নির্ভর করছে আপনাদের সদিচ্ছার ওপর।

বুধবার দুপুরে জেলা শহরের ভাওয়াল রাজবাড়ি রোডের পিটিআইস্থিত শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার অডিটরিয়ামে গাজীপুর সিটি কপোর্রেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম।

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল আরো বলেন, নির্বাচনে কালো টাকা ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলবে না। আমাদেরকে কালো টাকার ছড়াছড়ির সংষ্কৃতি থেকে ধীরে ধীরে উঠে আসতে হবে। যতদূর সম্ভব কালো টাকা বিতরণ প্রতিহত করার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থায় এখনও অনেক অপসংষ্কৃতি কালো সংষ্কৃতি রয়ে গেছে। রাতারাতি এসব সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব নয়। তবে ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে কোনোরকম অনিয়ম দুর্নীতি আমরা বরাদস্ত করব না। আপনাদের সকলের চেষ্টায় হয়তো একটা সময় আসবে যখন আমরা সুশৃঙ্খলভাবে অহিংসভাবে ভোটকেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবো। আপনারা যে সরকারটি গঠন করবেন সেটা গণতান্ত্রিক সরকার এবং জনগণের কাছে আপনাদের প্রত্যক্ষ সরাসরি জবাবদিহিতা থাকবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের সামথের্যর মধ্যে যতটুকু থাকবে এবং যা কিছু করণীয় তাতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আন্তরিকতা ও চেষ্টার কোনো অভাব থাকবে না। আমরা পুরোপুরি সেই চেষ্টাটাই করব। কিন্তু আপনাদেরকেও স্ব স্ব অবস্থানে থেকে আপনাদের যে চেষ্টাটুকু সেই চেষ্টা পুরোপুরিভাবে করতে হবে। নির্বাচন কমিশন এককভাবে তেমন কিছু করতে পারবে না। যদি সহযোগী প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন তাদের দায়িত্ব শক্তভাবে এবং পেশাগতভাবে ডিসচার্জ করে না থাকেন। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটা যেহেতু মেট্রোপলিটন এরিয়া এখানে কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের গুরুত্ব জেনারেল ডিস্ট্রিক্ট পুলিশ যেটা আছে তার চেয়ে অধিক। বেশ কিছু ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার আমার মনে হয় পুলিশ কমিশানরকে দেওয়া আছে এবং পুলিশের যারা কর্মকর্তা তাদেরকে দেওয়া আছে। কাজেই পুলিশ কমিশানর সাহেব আপনাকে সেই দায়িত্ব যোগ্যতার সঙ্গে, আন্তরিকতার সঙ্গে ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ হতে হবে, উৎসবমুখর হতে হবে। আপনাদের মধ্যেও একটা সমঝোতা ও বুঝাপড়া থাকতে হবে। আমরা কেউ সহিংসতা করব না, উচ্ছৃঙ্খলতা করব না। ভোটাররা দ্বিধান্বিত হবেন, ভীত হবেন এমন কোনো আচরণ আপনারা করবেন না। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা দেব, আমাদের তরফ থেকে সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করা হবে যাতে ভোটাররা নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন, ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। আপনারা যেমন আমাদের সহায়তা চাইছেন, তেমনি আমরাও আপনাদের সহায়তা চাই।

সিইসি আরো বলেন, আমাদের তরফ থেকে যদি কোনো বিচ্যুতি হয়, সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো বিচ্যুতি হয়, আমরা যদি সে অভিযোগ পেয়ে থাকি, সেই অভিযোগ আমরা আমলে নিব এবং আমাদের সীমিত সামর্থের মধ্যে প্রতিকারের যে বিধান রয়েছে আমরা সেটা নিতে কোনো দ্বিধা করব না।

তিনি বলেন, ইভিএম শুধু রংপুরে হয়নি। আরও শত শত জায়গায় হয়েছে। ইভিএমে ভোটাররা ভোট দিতে পেরেছে। বিলম্ব হলেও ভোট দিতে পেরেছে। ইভিএম এর অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে। রংপুরে মেকানিক্যাল প্রবলেম হয়েছিল। প্রার্থীরা ইভিএম নিয়ে ডেমনস্ট্রেশন করলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ইভিএমের উপস্থিতি সঠিক উপস্থিত।

সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, আপনারা প্রার্থীরা লেমিনেটেড পোস্টারের কথা বলেছেন। সারা বিশ্বে ক্লাইমেট ক্রাইসিস ওভারকাম করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ পৃথিবীর সকল দেশকে নিতে হচ্ছে। সেইদিকে লক্ষ্য রেখে পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কিছু না করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব এবং আইনগত দায়িত্ব।

তিনি বলেন, একটা কথা ভুল বুঝবেন না। আমরা যখন সরকার বলি, তখন আওয়ামী লীগকে মিন করি না। সরকার হচ্ছে সরকার, রাষ্ট্র। আমরা সরকার বলি, বিভাগীয় কমিশনার, ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার, পুলিশ কমিশনারসহ তাদেরকে। তাদের কিন্তু নিরপেক্ষ হতে হবে। নির্বাচন কমিশন যে সহায়তা চাইবে তা দিতে এই সরকার বাধ্য এবং তারা আমাদেরকে সেই সহায়তা দিবেন।

মতবিনিময় সভায় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এ এফ এম কামরুল হাসান ও রিটার্নিং কর্মকর্তার স্টাফ অফিসার এ এস এম জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নির্বাচন কমিশনার মো: আলমগীর। অনুষ্ঠানে আটজন মেয়র প্রার্থী সহ সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন এবং মতবিনিময়ে অংশ নেন। এসময় কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে একই স্থানে মতবিনিময় সভা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
###
মোঃ রেজাউল বারী বাবুল
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।
১০/০৫/২০২৩ ইং।
Download all attachments as a zip fil