বিএনপির কর্মসূচিতে বাঁধা দিয়ে চলমান আন্দোলনকে দমানো যাবে না—মির্জা ফখরুল

আপডেট: ডিসেম্বর ২৩, ২০২১
0

বিএনপির কর্মসূচিতে বাঁধা দিয়ে চলমান আন্দোলনকে দমানো যাবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গতকাল হবিগঞ্জে দলের পূর্বঘোষিত সমাবেশে পুলিশি হামলার ঘটনা তুলে ধরে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ হবিগঞ্জে যে গুলিবর্ষন হয়েছে এর মূল কারণটাই ছিলো হবিগঞ্জ যেহেতু বিএনপির একটা শক্তিশালী জায়গা এবং ওইখানে নেতৃবৃন্দ বরাবরই প্রমাণ করেছেন যে, এখানে শক্তিশালী একটা সংগঠন আছে। সেজন্য এই জায়গাতে তারা আঘাত করেছে, পুলিশ অতর্কিতে বিনা উস্কানিতে গুলিবর্ষন করেছে নির্বিচারে। এতে ।”

‘‘ আমরা একটা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই এ্ভাবে দমনপীড়ন করে, হত্যা করে, গুম করে কখনোই জনগনের যে ন্যায়সঙ্গত দাবি, তাদের যে অধিকার আদায় করার জন্য যে দাবি একটা গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য এবং সবচেয়ে বড় যে দাবি নিয়ে এখন যে আমরা আন্দোলন করছি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য যে আন্দোলন করছি সেই আন্দোলনকে কখনই দমন করা যাবে না।”

হবিগঞ্জের বিনা উস্কানিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পুলিশি হামলা ও গুলিবর্ষনের ঘটনার জন্য জেলার পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলী, ওসি মাসুক আলী এবং নাজমুল হাসানকে দায়ী করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি অবিলম্বে তাদের অপসারণ এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

ফখরুল জানান, হবিগঞ্জের সমাবেশে পুলিশের নির্বিচারে লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষনে বিএনপির তিন‘শ নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। এরমধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশংকাজনক। একজনের চোথ নষ্ট হয়ে গেছে।

ফখরুল বলেন, ‘‘ ২২ তারিখ আমরা সারাদেশে বিভাগীয় পর্যায়ে ৭টি জেলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে সমাবেশের কর্মসূচি ছিলো। এর মধ্যে ৬টিতে মোটামোটি শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের কর্মসূচি করা গেছে। হবিগঞ্জে পুলিশ অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে। এসপি মুরাদ আলীর নির্দেশে ওসি নাজমুল হাসান, মাসুক আলী সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে শর্টগানে প্রায় ১২‘শ রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়েছে যা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। যেটা আইনত সারা বিশ্বে শর্টগানের গুলি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”

‘‘ এতে আমাদের হবিগঞ্জের জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক শফিকুর ইসলাম সেতু, জেলা ছাত্র দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ রাজীব আহসান রিংগন, যুগ্ম সম্পাদক সাইদুর রহমান মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। সাইদুর রহমানের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিতসাধীন আছেন আবদুল মতিন, শেখ রাসেল, গোলাম বাকী চৌধুরী রাজীব, মানিক মিয়া, তৌ্হিদুর রহমান অনি, বেলাল আহমেদ বাবু, আসিফুল ইসলাম ইমন, মুজাক্কির ইমন, গৌর চন্দ্র দাশ, মোশায়েদ আলমসহ অর্থ শতাধিক নেতাকর্মী। গ্রেফতার করা হয়েছে ছা্ত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।”

হবিগঞ্জের এই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

কর্মসূচি: হবিগঞ্জের গুলিবর্ষনে ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল সিলেট বিভাগের সকল উপজেলা এবং শনিবার সিলেটের সকল জেলায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে হবিগঞ্জের সমাবেশে অংশ নেয়া দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবেদিন, মুক্তাদির চৌধুরী ও সহ-স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আখতার গুলিবর্ষনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বর্ণনা তুলে ধরেন। তারা বলেন, ‘‘ হবিগঞ্জের সমাবেশের জনস্রোত ঠেকাতে স্থানীয় পুলিশ পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালিয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই সমাবেশ বানচাল করা। যেভাবে পুলিশ সেখানে গুলিবর্ষন করেছে এর ফলাফল আরো ভয়াবহ হতে পারতো। এখানে লাশের সারি পড়তে পারতো। আপনাদের মাধ্যমে আমরা এটি দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে চাই।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেল, ‘‘ পরিকল্পিতভাবে গণতান্ত্রিক যে পরিসর, ডেমোক্রেটিক স্পেস এটাকে একেবারেই সংকুচিত করে ফে্লেছে। এই কর্মসূচিগুলো একেবারেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। এখন পর্যন্ত এইসব কর্মসূটিতে শা্ন্তি ব্যাহত হয়নি। অথচ তারা পরিকল্পিতভাবে এই কর্মসূচিতে বাঁধা দিয়ে আজকে গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণভাবে সংকোচিত করে ফেলেছে।”

‘‘ আজকে প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, জনগনের যে স্বস্ফূর্ত অংশগ্রহন প্রমাণ করে যে, এদে্শের মানুষ সরকারের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করছে।

সংবাদ সম্মেলন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।