বিদ্যানন্দের ফাউন্ডেশনকে একুশে পদক তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
0

অমর একুশে ফেব্রুয়ারি এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রাক্কালে একুশে পদক গ্রহণ করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান স্বেচ্ছাসেবক কিশোর কুমার দাশ।

আজ সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসরকারি সম্মাননা ‘একুশে পদক’এ বছরের বিজয়ী ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের মাঝে তুলে দেয়া হয়। সমাজ সেবায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একুশে পদক তুলে দেওয়া হয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনকে। আর বিদ্যানন্দের পক্ষে এবারই প্রথম কিশোর কুমার দাশ কোন পদক গ্রহণ করলেন।

পদক প্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার জানান, “আমি প্রতিষ্ঠাতা হলেও আজ প্রথম কোন পদক গ্রহণ করলাম। অবশ্যই ভালো লেগেছে। তবে আরও বেশি ভালো লাগতো সবাইকে নিয়ে একসাথে পদক নিতে পারলে। আমি উদ্যোক্তা হলেও এই প্রতিষ্ঠানে সারা দেশের মানুষ অনুদান দেয়। আর অনেকে শ্রম ও মেধা দেয় নিঃস্বার্থভাবে। তাই পদক প্রাপ্তির আনন্দ তাঁদের স্পর্শ করলে এই স্বীকৃতি স্বার্থক হবে। আর এই পদকের অর্থ পুরোটাই যাবে বঞ্চিত সমাজের জন্য। যাঁদের জন্য এই অর্জন, তাঁদের পেছনেই ব্যয় হবে পদক প্রাপ্তির অর্থ। ” কিশোর কুমার আরও জানান, “ মানুষের জন্য কাজ করার জন্যই পদক দেওয়া হয়েছে। তাই মানুষের কাজের মাঝেই থাকতে চাই। যে মানুষগুলো দিনের পর দিন নানা কটুক্তি আর সমালোচনা সহ্য করে কাজ করে গেছে গরীবের জন্য, যে মানুষগুলো মাসের শুরুতে আয়ের একটি অংশ পাঠিয়ে দিয়েছেন গরীব মানুষের জন্য, সে মানুষগুলোর কাজ আজ স্বীকৃতি পেয়েছে রাষ্ট্র থেকে। সরকার বিদ্যানন্দকে নয়, আমি মনে করি মানুষের ভালো কাজগুলোকেই সম্মানিত করেছে এই পদকের মাধ্যমে।”

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রদত্ত বেসামরিক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার হলো একুশে পদক। ১৮ ক্যারেট মানের ৩৫ গ্রাম স্বর্ণের পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্রের সঙ্গে চার লাখ টাকা দেওয়া হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই পদক দিয়ে থাকে।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হিসেবে বিদ্যানন্দের এই পদকপ্রাপ্তিকে সুধী সমাজ, সাংবাদিক থেকে শুরু করে অসংখ্য সর্বস্তরের মানুষ স্বাগত জানিয়েছেন। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন তাঁর কাজের যোগ্যতায় এই অর্জন পেয়েছে বলে বিভিন্ন জন মত প্রকাশ করেন।

২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষা, খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান সহ মৌলিক চাহিদা পূরণে কাজ করে। বিদ্যানন্দের নানামুখী কার্যক্রমের মধ্যে এক টাকায় আহার, এক টাকায় চিকিৎসা, বিদ্যানন্দ অনাথালয়, বিদ্যানন্দ মা ও শিশু হাসপাতাল, এক টাকায় রেস্টুরেন্ট, বিদ্যানন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাসমান হাসপাতাল জীবনখেয়া, আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্প সম্বল, প্লাস্টিক একচেঞ্জ স্টোর, হ্যাপিনেস স্টোর, বিদ্যানন্দ প্রকাশনী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

নিয়মিত এসব কার্যক্রমের পাশাপাশি করোনাকালীন সময়ে সারা দেশে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম, করোনা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ, টিকা প্রদান, ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা বৃত্তি চালু করণ সহ নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করেছে।

এ ছাড়া বন্যা সহ দূর্যোগের মতো যে কোন জরুরী মুহুর্তে দূর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্ণবাসন, প্লাস্টিকের বিনিময়ে খাদ্য, নির্বাচনী পোস্টার থেকে শিক্ষা উপকরণ তৈরী, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা জনগোষ্ঠীর জন্য হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সহ সময় উপযোগী অসংখ্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

সারা দেশের মানুষের অর্থায়নে পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে কমনওয়েলথ পয়েন্টস অফ লাইট পুরস্কার, শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলেন্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড, জাতীয় মানব কল্যাণ পদক, টোকিও ওমেন্স ক্লাব অ্যাওয়ার্ড সহ দেশ বিদেশে অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছে।