বর্তমানে বাংলাদেশে সাহিত্য চর্চায় কোনো বাধা নেই: প্রধানমন্ত্রী

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
0
file photo

বর্তমানে বাংলাদেশে সাহিত্য চর্চায় কোনো বাধা নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে সাহিত্য চর্চায় কোনো বাধা নেই। যতই বাধা আসুক আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। শিক্ষা-দীক্ষা, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি – সবদিক থেকে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’

সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ১৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারের হাতে ‘একুশে পদক ২০২৩’ তুলে দিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গতি পায় ভাষা আন্দোলন। আর ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিকে ভাষা শহীদ দিবস পালনের দাবি তোলা হয়। বারবার আঘাত আসার পরও বাংলা আজ সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। শহীদের রক্ত কখনও বৃথা যেতে পারে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাকিস্তানিরা বারবার বাংলার ওপর আঘাত হেনেছে। পৃথিবীর কোনো দেশে এতবার সংস্কৃতির ওপর আঘাত আসেনি। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামে একটি দেশের সৃষ্টি হয়, যারা পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। একসময় তারা আমাদের সংস্কৃতিতে আঘাত হানে। আমাদের ওপর উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেয়। করাচিতে এক আলোচনায় তারা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমাদের দেশে প্রবল আন্দোলন শুরু হয়। মূলত ভাষার লড়াইয়ের পথ বেয়েই আসেই স্বাধীনতা।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের পর ১৯৫৩ সালে প্রথম ভাষা শহীদ দিবস পালন করা হয়। আরমানিটোলায় এক সভায় এ দিবস পালনের দাবি তোলা হয়। এরপর ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। এরপরেও পাকিস্তানিরা থেমে থাকেনি। তারা তখন উর্দু হরফে বাংলা লেখার নিয়ম করে, আরবি হরফে বাংলা লেখার নিয়ম করে। রবীন্দ্রনাথের গান নিষিদ্ধ করে। যার প্রতিবাদে ছাত্রসহ সবাই রাজপথে নেমে আসেন।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বেই আমরা ভাষা আন্দোলনে, মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করেছি। ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমাদের এ আন্দোলন ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন। একটা সময় আমাদের দেশে জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এমনকি শেখ মুজিবের নাম মুছে ফেলা হয়েছিল। সেসময় অনেকে বলেছেন, শেখ মুজিব তো আন্দোলন করেননি, জেলে ছিলেন। কিন্তু তিনি তো ভাষা আন্দোলনের জন্যই কারাবরণ করেছেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় ছিলেন। এই সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই তিনি সবার স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে নির্মম হত্যার ২১ বছর পর আমরা ক্ষমতায় আসি। এক দফার পর পরবর্তীতে তিন দফায় ক্ষমতায় থাকায় বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য ২০৪২ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়ে তোলা। আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ যারা একুশে পদক পেয়েছেন সবাইকে আমার অভিনন্দন। এমন আরও অনেকেই আছেন, যাদের নাম আমরা জানি না। তাদের অবদানকে আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি। আমাদের নতুন প্রজন্ম যেন তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে এগিয়ে যায়।
টানা তিনবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সবক্ষেত্রেই বিশ্বে মাথা উঁচু করে থাকবে বাঙালি জাতি।’

রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলেও বারবার আঘাত এসেছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘৭৫ এর পর মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয় মুক্তিসংগ্রামের সব স্মারক, ভুলিয়ে দেয়া হয় ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানকেও। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলানোর তাগিদ দিয়ে তিনি আরও বলেন, সব ক্ষেত্রেই বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাঙালি জাতি।’

এর আগে ভাষা শহীদদের স্মরণে ১৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারের হাতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।