বিধাতার প্রকোপ

আপডেট: এপ্রিল ২০, ২০২৩
0

ডা . জাকারিয়া চৌধুরী

একদা ভাগ্যদেবী লক্ষী খুব কাছে এসে কিছুটা ম্লান হেসে বলেছিল-
‘দেখ দেখ তোর ভাগ্যলিপি পঞ্চমাত্রায় লিখে নিয়ে এসেছি,
আমাদের অনেক ভগবানের কপালেও এমন ভাগ্য চন্দ্র জুটেনি রে।
আমিও স্থির বিশ্বাস নিয়ে বলেছি- চাইনে কিছু, তোকেই ভালোবেসেছি।
আমি ভালোবেসেই গেছি ভালোবেসে-ই গেছি অনন্তকাল,
আমার লক্ষী’রে।
ভাগ্যপাতা খুলে দেখার প্রয়োজন ভাবিনি কোনোও কালে,
বিশ্বাস আর আনন্দে শুধু-ই হেসেছি।
তারপর অনেক কাল গেছে কেটে,
গোমতীও তাঁর স্রোত হারিয়ে নাম ধরেছে মেঘনা,মেঘনার ভাটিতে।
অতঃপর শতবর্ষ কেটে গেলো ভাগ্যের খোঁজে হাটিতে হাটিতে।
তারপর ?

তারপর নব গল্পের শুরু।
ক্লান্ত শ্রান্ত চৈত্রের এক দুপুরের কথা-
লক্ষী’রে ডেকে জিগেস করলাম- আমার ভাগ্য টা কোথায় রে ?
লক্ষ্মী এবার গিয়েছে রেগে… কিন্তু যাচ্ছে কোথায় সে ?
কিছুদুর গিয়ে থেমে আবারও ফিরে এসে বলেছে মোরে –
‘মহাভাগ্য তোর। এটা কি যথায় তথায় ফেলে রাখা চলে ?
রেখে এসেছি তারে। সাত সমুদ্দুর তের নদীর তলে।’
আমি আবারও উঠে দাঁড়াই হাঁটতে থাকি চৈত্রের রোদে,
পুড়ে চৌচির হয়ে যাওয়া জ্বলন্ত কয়লার মত মাঠ খালি পায়ে দলে।
শত বর্ষের পথ স্বাক্ষী রেখে পাড়ি দিয়ে যাই আবারও পোড়া পায়ের তলে।

এইসব কথা আর প্রতিশ্রুতির দিন শেষ হলে পরে,
সাত সমুদ্দর তেরো নদীর তলে,
বাক্স সিন্দুক সমেত সব তন্ন তন্ন করে খুঁজে,
গিয়ে দাঁড়াই লক্ষ্মীর দুয়ারে। বলি তারে- ভাগ্যলিপি দেখা,
তৃষ্ণায় শুকিয়ে খা খা মরু হয়ে রয়েছে আমার সারাটা গলা..
ঠান্ডা সুরার পাত্র দুই হাতে ঠেলে,
মিনতি করেছি তারে মিনতির সুরে,
ভাগ্যের কথা জানতে চেয়েছি বারবারে,
লক্ষ্মী এবার এসেছে নিজ বেশে খিলখিল করে হেসে,
বলেছে সে- ঠাট্রা করেছি রে, ঠাট্টা করেছি ভালোবেসে।
হয়েছে কি শনি আর বুধ লেগেছিলো তোর পিছে,
আমি আর রবি পরে গেছি নিচে,
ইয়ে হয়েছি কি, কি না কি বলেছিলাম গিয়েছি সব ভুলে…
ও হ্যাঁ, তোর ভাগ্যলিপি, পড়েছে মনে।

মন ভুলে গিয়েছিলাম ভুলে। হয়েছে, হয়েছে না ?
করুনা করেছি, করুনা করতে হতো যে…
শনির রাহু তোরে নিয়েছিল গিলে,
আমি তাই স্বরুপে ফিরে শনির বলয় ঘিরে রবি’রে লয়ে,
রক্ষা করেছি তোরে সে-ই সবে বরাতের রাতে।
ওটাই তোর পঞ্চমাত্রার ভাগ্যলিপি ছিল রে………
সেই ভাগ্য তোর শেষ হয়ে গেছে পরদিন প্রাতে,
এই সত্য বলিতে বলিতে অনেক জলবেলা বয়ে গেলো,
খেয়াল হলো অবশেষে।
‘চলি রে- শেষ কথা বলে লক্ষ্মীও ফিরে গেলো লক্ষ্মীর বেশে।
এইটুকু শুনিতে যার কেটে যায় শতবর্ষ কাল,
কোন পাপ আর কত কত তাপ নিয়ে ফিরিবে সে,
ফিরিয়ে লয়ে খোঁজ কোন ভাগ্য আর কার ভাগ্যের অকাল ?
আর করুনা? সামান্য করুনার জন্যে এতো আয়োজন?
কে ভেবেছিলো কবে, কে ডেকেছিলো লক্ষ্মীরে ?
কে বলেছিলো, কার কি প্রয়োজন ?
আমি বসে ভাবি শতবর্ষ শেষে,
কে তোমারে বলেছিলো – এতোটা ছল আর,
এতো বড় গ্রহানুর বেশে খুব কাছে এসে কিছুটা ম্লান হেসে,
পঞ্চমাত্রার ভাগ্যলিপির গল্প শোনাতে?
আসলে এখানে হয়েছিল কি? এ কি তবে শবে করুনার রাত ?
যার নির্মম সমাপ্তি ঘটে যায় পরদিন প্রাতে?
আমি এখন ফিরিব কি লয়ে? শুন্য খালি হাতে ?
শতবর্ষ আর নদী সমুদ্র দলে,
তোমার সামান্য এক বাক্যের পুজি লয়ে?
এ জন্যেই কি পুনর্জন্মের প্রয়োজন পরে?
তাই যদি হয় তবে হোক,
বন্ধ হোক ভাগ্য, লক্ষী কিংবা বিধাতার প্রকোপ।
আমার পুনর্জন্ম হোক।

সমাজে ফিরিবার সাধ আমার বয়ে গেছে বহু আগে,
তোমার কথাও শুনেছি কাল কুসুমেরও বাগে।

আমার আজ জানার, জিগেসের কিংবা প্রত্যাশার,
কিছু বাকি নেই। চাইনা এক পল সময় তক..
আমার প্রান এক্ষুনি নিঃসরিত হোক,
পরজনমে আমার যেন মানুষ রুপ হয়,
সব স্মৃতি আর তোমাদের কথা যেন সব মনে রয়,
আমি যেন জাতিস্মর রুপে জন্মলাভ করি,
আমি যেন সহজেই একে একে দেবতাদের গলা টিপে ধরি।
দেবতাদের কঠিন শাস্তিও নিশ্চিত করি।