`ভাইকিংসদের বর্বরতাকেও হার মানায় ত্বত্তাবধায়ক সরকারের দাবীতে ২৮ অক্টোবরের লগি বৈঠার আন্দোলন’

আপডেট: আগস্ট ৬, ২০২৩
0


ডা,জাকারিয়া চৌধুরী :

২৮ শে অক্টোবর ২০০৬

সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসান যেন জোট সরকার পরবর্তী ত্বত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সাংবিধানিক দায়িত্বভার নিতে না পারেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সেদিন বায়তুল মোকাররম এলাকায় লগি বৈঠা দিয়ে একটা সু-পরিকল্পিত গনহত্যা চালায়। তারা কে এম হাসান সাহেবকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মানবেন না। কাকে মানবেন সে বিষয়েও স্পষ্ট ধারনা দেন না।

গোলাম হোসেনদের নামিয়ে দিয়েছেন অবিরাম উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যেতে। কতিপয় পত্রিকা অবিরাম বিএনপি নেতাদের চরিত্র হরন থেকে শুরু করে সেনা শাসন আনা পর্যন্ত দেশকে ঠেলতে ঠেলতে দিল্লীর বাজারে নিয়ে নিলামে তুলে ফেলতে চাইছেন। আওয়ামিলীগ আন্দোলনের নামে সরকার সমর্থক অন্ততঃ ছয়জন নেতাকর্মীকে সেদিন বিকেল আনুমানিক ৪:৩০ টা থেকে ৬ টার মধ্যে লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর লাইভ ক্যামেরার সামনে শব দেহের উপর যে উল্লাসনৃত্য পশুর দল ও তাদের প্রমোটেরা করেছিল তা মধ্যযুগীয় ভাইকিংসদের বর্বরতাকেও যেন হার মানায়। বিচারপতি হাসান সাহেব যেন দায়িত্ব নিতে না পারেন, তারা তার বাসভবনে হামলা চালায় এবং দিন শেষে তিনি বিএনপির কাছ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে সম্ভবতঃ দায়িত্ব নিতে অনীহা দেখান। একজন নির্বাচন কমিশনারের বাসায় বোমা হামলা করা হল তো কারো বাসার দেয়াল ক্ষত বিক্ষত হলো গুলির দাগে…. সারা ঢাকার বাতাস কালো হয়ে গেল ধোয়ায়। একটা সভ্য গনতান্ত্রিক দেশে এমন কান্ডের কথা কখনো শুনিনি। যেন এ জাতীয় লংকান্ড রামায়নে দেখেছি। হনুমান লংকা পুড়ে ফেলেছে তার দীর্ঘ পুচ্ছ দিয়ে। মহাভারতেও মানুষের মুন্ডু কেটে গলার হার বানানোর কথা শুনেছি। শুনেছি নানান নাচানাচির কথা। ( সেসব কাজ ভাল না কি মন্দ তার জাস্টিফিকেশানের প্রশ্ন তুলছি না। ওসব ঈশ্বরকান্ড টাইপ কিছু হবে।

দয়া করে কেউ অযথা একে ধর্মীয় খোচা ভাববেন না।) কিন্তু বাংলাদেশের বিষয় তো ঐশ্বরিক কিছু নয়। এখানে চলছে ক্ষমতায় যাওয়ার লোভ, খবরদারির কুট ইচ্ছা, বাংলাদেশের সম্পত্তি লুটের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আদিম ইচ্ছা। এছাড়া #I_pet_goat_।। নামক এ্যানিমেটেড এক প্রফেসী নির্ভর মুভিতেও মহাভারতে উল্লেখিত ওই দেবীর উল্লাস নৃত্য দেখানো হয়েছে। দুই ক্ষেত্রেই হত্যায় উল্লাস হল মুখ্য। বলি কি, মহাভারত তো কেবল এই উপমহাদেশ ভিত্তিক দেবদেবীদের কান্ডকীর্তি। এখন দেবদেবী নেই, তাহলে এই লংকান্ড কেন? কিসের স্বার্থে ? অন্যদিকে আই পেট গট টু মুভিটি খুব সম্ভব কানাডা কিংবা স্ক্যান্ডেনেভিয়ান কোন দেশ থেকে রচিত। কি অদ্ভুত কো ইনসিডেন্স। ( আমি আমার সব লেখায় উল্লেখ করি, কেউ আমার কথার অর্থের চেয়ে ধর্মকে আগে দেখবেন না দয়া করে। আমি নিজে ধার্মিক না হয়ে কোনো ধর্ম নিয়ে টানাটানি করা আমার কাজ নয় )।

যা বলছিলাম – ২৮ শে অক্টোবর ২০০৬ সাল।

বেলা আনুমানিক সাড়ে এগারোটা।

মুগদা মান্ডা আন্ডা বাসাবো খিলগাও থেকে একটি বিরাট মিছিল কমলাপুর হয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সামনে দিয়ে শান্তিনগরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সি আইডি ট্রেনিং স্কুলের গেটে ধরে আমি জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি। হঠাৎ খেয়াল করলাম, দুই তিনটা ছেলে চলমান মিছিল থেকেই মাটিতে বসে পড়ল। সাথে আরও চার পাচজন তাদের ঘিরে গোল হয়ে দাড়িতে গেল। কেউ একটা বোতল বের করল, কেউ কোনো লিকুইড, বালু বা অন্য কিছু… এসবই মিক্স করে একের পর এক বোতলে ভরে, আগুন ধরিয়ে পুলিশ লাইনের ভেতরে ছুড়ে মারল। বিকট বিস্ফোরন হল, আগুন ধরল, ছেলে গুলো আবার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। পুরো পুলিশ লাইন থেকে একটা মরা পুলিশও উঁকি দিয়ে দেখল না বাইরে কি হচ্ছে বা হল। বুঝলাম পুলিশ ও প্রশাসনে ভয় দেখানোর কাজে তারা সফল হয়েছে। তাছাড়া মিছিলটি এ পথ ধরেই বা আসবে কেন ? তাদের ভেন্যু কোথায় ? তারা এ পথ ধরে এসছে কেন ? এ ঘটনার কোনো মামলা হয়েছিল কিনা জানিনা, কিন্তু পরদিন পত্রিকার কোথাও আসেনি সেটা জানি।

বেলা আনুমানিক একটা।

পিজি হসপিটালের বটতলায় স্বাচিপের ডাক্তারেরা বট গাছকে কেন্দ্র করে গরু যেভাবে ঘানি টানে সেভাবে ঘুরছে। তাদের নেতার নামে স্লোক দিয়ে যাচ্ছে। সাদা কাগজে বড় বড় করে প্রিন্ট দেয়া লিফলেট এদিক সেদিকে পরে আছে। হাতে তুলে নিলাম একটা। সেখানে লেখা – পিজি হসপিটাল ( তাদের ভাষায় অন্য নাম ) এখন স্বাচিপ/লীগের দখলে। অথচ এমন কিছুই ঘটেনি। পরদিন পত্রিকায় এলো, বংগবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্বাচিপের দখলে। বিএনপি ও ড্যাবের নেতাকর্মীদের তাদের আগের দিনের মিছিলের সময়েই তাডিয়ে দিয়েছে স্বাচিপ। পত্রিকায় ছাপা হওয়া নিউজের সার কথা যেন এটাই। ডাহা মিছা কথারও একটা লিমিট থাকে। সেদিন সন্দেহ হল, এদেশের উচ্চমার্গীয় গনমাধ্যমেরও কোন লাজ শরম কিংবা স্ট্যান্ডার্ড বলে কিচ্ছু নাই, কিছুই নাই।

তাহলে কি দাড়ালো ? ১৯৯৩-৯৪ সালে জামায়াতের প্রেসক্রিপশনে কেয়ারটেকার সরকার বলে যে কনসেপশন রাজনীতির বাজারে এসেছিল, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সেটাকেই ত্বত্ত্বাবধায়ক সরকার বলে একে আজীবনের জন্য সাংবিধানিক করতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত করে তুলেছিল। এজন্য বাংলাদেশকে সইতে হয়েছিল ১৭৩ দিনের হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও, পোড়াও, চট্রগ্রামের একমাত্র পোর্ট অচল করা থেকে শুরু করে হাজার হাজার সহিংসতা। সে সময় তাদের সহযাত্রী হল এরশাদের জাতীয় পার্টি। আওয়ামিলীগ এমনই এক অভিশপ্ত দল যে, যারাই জীবনে তাদের সাথে একবার অন্ততঃ গিয়েছে তারাই ইতিহাস হয়ে গেছে। আজ জাতীয় পার্টি বলে কিছু নেই। জামাতের আমির গোলাম আজম সে সময়ে বিএনপি সরকারকে সমর্থন দিয়েও লীগের বৈঠা বেয়েছিল। এর ফল ভোগ করেছে প্রথমত দেশ, তারপর জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এবং খোদ জামাত আমির গোলাম আজম ও তার পরিবার। জামাতের শিক্ষা হয়েছে কিনা জানিনা !! কারন, আজও জামাতকে নিয়ে রাজনীতির মঞ্চে কত কত কথা শুনি !! সেসব কথা আমরা আমলে নিলাম কি নিলাম না সেসব বড় কথা নয়, বড় কথা হল জামাত টিকে থাকবে কিনা সে সিদ্ধান্ত জামাত নিজেই তাদের কর্মের মাধ্যমে জাতিকে বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। আজ থেকে অন্ততঃ মাস তিনেক আগে এক স্বাক্ষাতকারে #BNP_Media_Cell এর চিফ জনাব জহির উদ্দিন স্বপন বলেছিলেন, গোপন আঁতাত করলে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হয়’। আজ যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার যুদ্ধে পাশে থাকবেন তারা ইতিহাসের বীরপুরুষ হবেন, আর যারা থাকবেন না, তারা ভবিষ্যতে রাজাকারদের তালিকায় নিজেদের নাম দেখবেন। এটা ১৯৯৪ সাল নয়, এটা ২০২৩ সাল। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে নিজেকে রাজাকারের তালিকায় দেখে একপ্পটা মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটের জন্য যদি কেউ পাগল হয়ে উঠেন, তাহলে কিন্তু –— বাংলা হয়ে যাবেন। হুম বলে রাখলুম।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক দেশ জনতা ডটকম