ভাঙচুরের ভয়ে শিশুটি পড়ে যাওয়ার পরও চালিয়ে নেওয়া হয় বাস: র‍্যাব

আপডেট: নভেম্বর ১৩, ২০২১
0

মেয়েশিশুটি পড়ে যাওয়ার পর হামলা, ভাঙচুরের ভয়ে চালক দ্রুত বাস চালিয়ে ঘটনাস্থল ছেড়ে যান। ফিরতি যাত্রার সময় জানতে পারেন, শিশুটি মারা গেছে। গ্রেপ্তার এড়াতে তখন গাড়িচালক ও তাঁর সহকারী আত্মগোপনে চলে যান।

প্রগতি সরণিতে মেয়েশিশুর মৃত্যুর ঘটনায় রাইদা পরিবহনের গাড়িচালক মো রাজু ও তাঁর সহকারী ইমরান হোসেনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। আজ শনিবার কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন। সেখানেই এসব তথ্য জানানো হয়।

গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে যমুনা ফিউচার পার্কের উল্টো পাশ থেকে একটি মেয়েশিশুর (১০) মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শিশুর বাবা মো রাজু ভাটারা থানায় একটি মামলা করেন। এজাহারে তিনি লেখেন, তাঁর আশঙ্কা, বেপরোয়া গতিতে আসা কোনো বাহনের ধাক্কায় তাঁর মেয়ে মারা গেছে।

খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জানান, রাইদা পরিবহনটিতে ওই সময় গেটলক সার্ভিস চালু ছিল। মেয়েশিশুটি ওই বাসে ভিক্ষা করতে উঠেছিল। একই সময় বাসচালকের সহকারী ইমরান যাত্রীদের থেকে ভাড়া তুলছিলেন। ইমরান শিশুটিকে বাস থেকে নেমে যেতে বলেন এবং গাড়িচালককে গতি কমাতে অনুরোধ করেন। এর কিছুক্ষণ আগেই বাসটিকে একবার গতি কমাতে হয়। তাই চালক বিরক্তি প্রকাশ করেন। মেয়েশিশুটিও তাড়াহুড়া করে নামতে যায়। এতেই আহত হয় সে।
বিজ্ঞাপন

আসামিদের উদ্ধৃত করে র‌্যাব জানায়, বাসের ভেতরে থাকা যাত্রীরা মেয়েটিকে পড়ে যেতে দেখে বাস থামাতে বলেন। কিন্তু পেছনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস থাকায় হামলা ও ভাঙচুরের ভয়ে চালক দ্রুত ঘটনাস্থল ছেড়ে যান। রাইদা পরিবহন পোস্তগোলা থেকে দিয়াবাড়ীতে যায়। ওই দিনও মেয়েশিশুটিকে রাস্তায় ফেলে চালক বাস দিয়াবাড়ীতে নিয়ে যান। ফেরার পথে জানতে পারেন শিশুটি মারা গেছে।

পরে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বাসটিকে পোস্তগোলার হাসনাবাদের একটি বাস ডিপোতে রেখে পালিয়ে ছিলেন। সর্বশেষ তাঁদের আবদুল্লাহপুর থেকে শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গাড়িচালক রাজু মিয়া বলেন, তিনি প্রায় ছয় বছর রাইদা পরিবহনের গাড়ি চালানোর কাজ করছেন। ইমরান হোসেন আগে তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। মাস ছয়েক আগে রাইদায় বাসচালকের সহকারী হিসেবে কাজে যোগ দেন।

র‌্যাব বলেছে, সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া তথ্য গাড়িচালক ও তাঁর সহকারীর কাছ থেকে পাওয়া। ওই বাসের কোনো যাত্রীর সঙ্গে তাঁরা কথা বলতে পারেননি। তদন্তের জন্য তাঁরা ৫০টির বেশি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছেন। তবে সেখানে দুর্ঘটনার সময়কার কোনো ফুটেজ নেই। ওই ফুটেজগুলোতে শিশুটিকে হাতে ফাইল নিয়ে ভিক্ষা করতে দেখা যায়। তাকে অপর একটি বাসে উঠতেও দেখা যায়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানতে পেরেছে, দারিদ্র্যের কারণে মেয়েশিশুটি প্রায় প্রতিদিন ভোরে কখনো ফুল নিয়ে আবার কখনো সাহায্য চেয়ে পথে বের হতো। স্থানীয় একটি স্কুলে ভর্তি হলেও অর্থাভাবে যেতে পারছিল না।